মামলার অভিযোগ গঠনে বিচলিত নন ইশরাক

0
77

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আদালত অভিযোগ গঠন করায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের চাপে এটা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় ইশরাক বলেন, ‘সম্পূর্ণ ফালতু একটা মামলা। আমার জনপ্রিয়তার যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে ধানের শীষের পক্ষে, এগুলো দেখে সরকারের নিশ্চয়ই কোনো চাপ ছিল। যার কারণে এ ধরনের একটা চার্জ গঠনের কথা আমি শুনেছি। আসলে আমি যখন এজলাসে ছিলাম তখন পুরোপুরি শুনতে পারিনি। শুনলাম চার্জ গঠনের জন্য একটা তারিখ ধার্য করেছে।’

ইশরাক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি একটু বিস্তারিত বলি, ২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় তখন আমি ছাত্র। আমার বয়স জাস্ট সাড়ে ১৮ হবে, মাত্র প্রাপ্তবয়স্ক। তখন আমি ফাস্ট ইয়ারে পড়ি, তখন আমার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয়। সেই নোটিশ, আমি আদৌ কোনো সময় পাইনি। তো সেই নোটিশের জবাবও আমি দেইনি।’

‘২০১০ সালে গিয়ে বিএনপি তখন তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে, সরকারবিরোধী আন্দোলন। আমার বাবা (সাদেক হোসেন খোকা) তখন ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তখন উনাকে চাপে ফেলার জন্য নোটিশের জবাব না দেয়ার একটা মামলা হয়। এর কিছুদিন পরে আমি তখনও দেশে আসিনি। তারপরে কী হয়েছে জানি না। কারণ, আমি তখন দেশে থাকতাম না। আমার বাবা ওটা হ্যান্ডেল করেছেন। পরবর্তীতে এটার ব্যাপারে কিছু শুনিনি।’

‘গত ২০১৮ সালে যখন আমি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশে আসলাম, মনোনয়ন জমা দিলাম এবং ইসিতেও জমা দিলাম, তখন তড়িঘড়ি করে চার্জশিট তৈরি করল দুদক থেকে। তারপর থেকে হিয়ারিং চলছে। এখন আজকে যেটা হয়েছে আমি চ্যালেঞ্জ করে আসছি এ মামলাটি। এ মামলা চলতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারণ, যেই নোটিশ আমি রিসিভ করিনি। সেই নোটিশের জবাব আমি কোত্থেকে দেব? দ্বিতীয়ত, আমার সম্পদ চেয়েছে, আমি তো ২০১০ সাল থেকে টাক্স পে করি। তার বিবরণী কি সরকারের কাছে নেই? তারা কি এনবিআরের কাছ থেকে নিতে পারে না? আর ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় আমি তখন আমার সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছি নির্বাচন কমিশনে। এবারও জমা দিয়েছি। সো, এটা একটা হয়রানিমূলক। এটাতে আমি বিচলিত না।’

বিএনপির এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৎকালীন ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সরকারের সময় দুই দলেরই সিনিয়র নেতাদের এবং তাদের পরিবারকে হয়রানি করা হয়েছে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এসে তাদের গুলোকে গায়েব করে ফেলল। আমাদের গুলোকে ব্যবহার করার জন্য রেখে দিল। এটা আজকে তার উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি।’

নির্বাচনী প্রচারণায় এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে ইশরাক বলেন, ‘না না, এটা কিসের প্রভাব পড়বে। কিছুই যায় আসে না। এগুলো মানুষ বোঝে, মানুষ বুঝেছে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকার ভীত। হারের ভয়ে যত রকমের কূটকৌশল প্রয়োগ করছে, এর মধ্যে ইভিএম দিয়ে ভোট ডাকাতি বা ভোট কেন্দ্র দখল করা- এগুলো করে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছি? মোটেও না। আমি এগুলোর তোয়াক্কা করি না।’

‘রাজনীতি করলে জেল মামলা এগুলো নরমাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। এগুলো জেনেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। আমি বিচলিত হচ্ছি না। -বলেন তিনি।

আপনাকে কোনোভাবে ডিসকোয়ালিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে কি না? জবাবে ইশারাক বলেন, ‘কিভাবে ডিসকোয়ালিফাই করবে? মামলার শুনানি হয়নি। ডিসকোয়ালিফাইয়ের কি আছে? আমি যখন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি তখন কি এটা আমি ইসিতে দেয়নি? আমি তো ইলেকশন কমিশনের হলফনামায় বলেছি। আমার মামলা নম্বর এত, আমার এজাহারের কপি কী কী যেন দেয়া লাগে সব দেয়া আছে।’

প্রসঙ্গত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) দিন ধার্য করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ আদেশ দেন। এর আগে এ দিন মামলার দায় থেকে ইশরাকের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। বিচারক উভয়পক্ষের আবেদন শুনানি করে আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত অভিযোগ গঠন করেন।

২০১০ সালের ২৯ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় ইশরাকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শামসুল আলম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here