রিজার্ভ চুরির তদন্ত আটকে আছে তিন দেশের কারণে

0
80

নিউজ ডেস্ক: চীন, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা এই তিন দেশের কারণে আটকে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত। ৯ দেশের ৬০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা পেলেও, অভিযুক্তদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপাত্ত তারা দিচ্ছে না। তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি বলছে এসব তথ্য ৩ মাসের মধ্যে পেলে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া যাবে ৬ মাসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।

তবে ৪ বছরেও তদন্ত শেষ করতে পারেননি গোয়েন্দারা। বলছেন, এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১২০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য ও প্রাথমিক আলামত বিশ্লেষণ করে ঘটনার আদ্যোপ্রান্ত খুঁজে বের করা হয়েছে। এতে চার শাখার ১৪ কর্মকর্তার অপরাধমূলক অদক্ষতা খুঁজে পেয়েছেন তারা।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, রির্জাভ চুরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে কার কী ভূমিকা ছিল সেটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। চার্জশিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার নাম থাকবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ফিলিপাইনসহ চার থেকে পাঁচটি দেশের কাছে তথ্য চেয়েছি। তারা না বলেনি। কিন্তু তথ্যও দিচ্ছে না। তাই আমরা তাদের তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে ওইসব দেশ যদি তথ্য নাও দেয়, তারপরও আমরা চার্জশিট দেবো। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অনেকের নাম থাকবে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, আলোচিত এই মামলার সঙ্গে দেশি-বিদেশি অনেক নাগরিক জড়িত। তাই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৪/৫টি দেশের তথ্য প্রয়োজন। এসব দেশের তথ্য ছাড়া চার্জশিট দিলে সেটা পূর্ণাঙ্গ হবে না। এজন্য বাংলাদেশ অংশের তদন্ত শেষ করেও আমরা চার্জশিট দিতে পারছি না।

মোস্তফা কামাল জানান, গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার তদন্তে দেরি হয়। তবে সেটা তো আর বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে না। যদি ওইসব দেশ তথ্য দিতে রাজি না হয়, তাহলে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিট দেবো।

রিজার্ভ চুরিতে ফিলিপাইন, জাপান, চীন, শ্রীলঙ্কাসহ ৯ দেশের ৫৫ ব্যক্তি ও ৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পৃকক্ততাও পেয়েছে সিআইডি। অভিযোগপত্র দিতে দরকার অভিযুক্তের যাচাইকৃত পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা। আর তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো না দেয়ায় আটকে আছে তদন্ত।

অপরাধীদের পরিচয় ও আর্থিক তথ্যগুলোর নিষ্পত্তি হলে মামলার চার্জশিট দিতে সুবিধা হবে। ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে তথ্য জমা আছে। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে দেশটির সরকার এটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে, জানালেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আনা হয়েছে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাত বদল হয়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির সঙ্গে দেশের ভেতরে কোনও একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।

সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here