পুঁজিবাজার চাঙা রাখতে ব্যাংকের ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ

0
420

বাংলা খবর ডেস্ক: দেশের শেয়ারবাজার স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিনস্ত প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজারের এ বিনিয়োগকে নির্ধারিত সীমার বাইরে রাখা হয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ৭ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সুযোগ দেয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার পর এ নিয়ে একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনের বিভিন্ন ধারা শিথিল করে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি কোন খাতের শেয়ারে এ তহবিল বিনিয়োগ করা যাবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া বিশেষ তহবিল সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে যারা সুবিধা নিয়েছিলেন, তারা নতুন নীতিমালার আওতায় আবেদন করবেন। জানা গেছে, দি সিটি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদের ওই তহবিলে সাড়া দেয়নি।

ফলে প্রতিটি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হলো। পাশাপাশি এ তহবিল হবে ঘূর্ণমান। ব্যাংক নিজে বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব তহবিল ব্যবহার করতে হবে। তবে এসব তহবিল গঠন বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে কাউকে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অনেক। শেয়ারবাজার অস্বাভাবিক উত্থান-পতন ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। দেশের শেয়ারবাজারে বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতি উন্নয়নে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের তারল্য সহায়তা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় তারল্যপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শেয়ারবাজারে টানা পতন ঠেকাতে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অর্থমন্ত্রীসহ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএর নেতারা সম্প্রতি গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে দেখা করে বাজারের তারল্যসংকট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছেও একই প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ব্যাংকের জন্য বিশেষ তহবিলের নীতিমালা জারি করা হল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে

*সার্বিক বিষয় বিবেচনায় পুঁজিবাজারে ক্রমাগত তারল্য প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীনে এই বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

*প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারি ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার)’ শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের’ জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার এই তহবিল গঠন করতে পারবে।

* ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে যে কোনো কার্যদিবসে রেপোর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার সীমার মধ্যে যে কোনো অংকের তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

* রেপোর সুদের হার ৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকবে এবং কোনো ধরনের অকশনের প্রয়োজন হবে না।

* ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা নিতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে।

* নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজার দর আদায়যোগ্য অর্থের চেয়ে কম হলে তা আগে নেওয়া মার্জিন থেকে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে বাধ্য থাকবে।

* বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদী রেপো দেওয়া হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্যাংকের এ বিনিয়োগসীমার মধ্যে ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here