তারকাসহ ২০ হাজার আইডি হ্যাক করেছে ওরা: র‌্যাব

0
433

বাংলা খবর ডেস্ক: ২০ জনের একটি প্রশিক্ষিত ফেসবুক হ্যাকিং টিম যাদের লক্ষ্য প্রথমে সেলিব্রিটিদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিজেদের পারঙ্গমতার জানান দেয়া। তাদের প্রধান টার্গেট ফেসবুক হ্যাকের মাধ্যমে এক প্রকার জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া। এসব হ্যাকারের মাসিক আয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। নিজেদের ফেসবুক আইডি প্রতিনিয়তই পরিবর্তন করে এড়িয়ে চলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও। এভাবে কৌশলী প্রক্রিয়ায় গত তিন বছরে চক্রটি প্রায় ২০ হাজার আইডি হ্যাক করেছে।

ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্যক্তিগত চরিত্রহননের চেষ্টা ও অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগে রাজধানীর মহাখালী থেকে দুই হ্যাকারকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মীর মাসুদ রানা (৩৫) ও মো. সৌরভ (১৯)। তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন কোম্পানির ২০টি সিমকার্ড, এনআইডি তৈরির অ্যাপস, বিকাশে টাকা গ্রহণের সিমসহ ফেসবুক আইডি হ্যাক করা-সংক্রান্ত আলামত উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, অরুণা বিশ্বাসসহ চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, র‌্যাবের কাছে অভিযোগ আসে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদ জায়েদ খানের ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। তদন্তকালে আরও ১৫ জন অভিনয় শিল্পীর আইডিও হ্যাকের অভিযোগ পাই।

এই গ্রুপের মূলহোতা নাসির যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাইবার অপরাধী। যিনি কিছুদিন আগে সাইবার অপরাধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। ওই নাসিরই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকার গ্রুপে যোগদানের জন্য লোক নিয়োগ করে থাকেন। অনলাইনে ভিডিও টিউটরিয়াল মাধ্যমে কীভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে হবে, নিজের দখলে নিতে হবে, কীভাবে ফেক জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়। হ্যাকিংয়ের পর যে অর্থ আদায় হয় তার কিছু অংশ নাসির পেয়ে থাকে।

র‍্যাব-২ সিও আরও বলেন, গ্রেফতার মীর মাসুদ রানা ও সৌরভ দুজনই প্রযুক্তিগতভাবে অনেক মেধাবী। হ্যাক করা আইডি ফেরত দিতে তারা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন। তাদের একেক হ্যাকারের প্রতিমাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা উপার্জন। এই চক্রের ২০ জনই প্রশিক্ষিত। প্রতিনিয়তই নিজেদের ফেসবুক আইডি তারা পরিবর্তন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে চলত। গ্রেফতারের সময় দুজনের কাছ থেকেই ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র মিলেছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, চক্রটি তিন বছরে প্রায় ২০ হাজার আইডি হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। তবে তারা নায়ক-নায়িকাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত না। মিডিয়ার বাইরের যাদের আইডি হ্যাকিং করা হত তাদের কাছ থেকে টাকা নিত। নায়ক-নায়িকাদের ফেসবুক হ্যাকিং করে তারা কৃতিত্ব দেখাত যে ওমুক নায়িকার বা নায়কের ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছি। এ পর্যন্ত চক্রটি মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশাসহ বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছিল। বাবলু রহমান, আতিক, জেইনা রাইহান, আফরাজ মিম আশা, সারাকা মজুমদার, সিনথিয়া, তানভি, সুমাইয়া, রুবিসহ এই চক্রের আরও কয়েক সদস্যকে চিহিৃত করা হয়েছে। খুব শিগরিরি তাদের গ্রেফতার করা হবে।

যে প্রক্রিয়ায় ফেসবুক আইডি হ্যাক-হয়রানি করে চক্রটি

হ্যাকার গ্রুপটি চলচ্চিত্র অঙ্গনের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে নামি-দামি শিল্পীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করা শুরু করে। শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্মতারিখসহ পূর্ণ নাম-ঠিকানা, ই-মেইল সংগ্রহ করে। ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতানো এবং তাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদের নিজেদের ফেসবুক বন্ধু করে। এরপর হ্যাকার গ্রুপ একযোগে টার্গেটেড ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। কখনও কখনও হ্যাকার গ্রুপ নিজেরাই ন্যুড ফটোগ্রাফ শিল্পীদের বা টার্গেটেড ফেসবুক আইডিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ার দিয়ে রিপোর্ট করলে টার্গেটেড আইডিটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ উঠিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে হ্যাকার গ্রুপ নিজেরাই টার্গেটেড ফেসবুক আইডির মালিকের সাথে বা তার পরিচিত কারও সাথে যোগাযোগ করে তার নিকট আইডি ফেরত প্রদানের বিপরীতে টাকা দাবি করে এবং আইডির মূল মালিকের ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন ন্যুড ছবি পোস্ট করে বা মেসেঞ্জারে তার নিকট বন্ধুদের কাছে স্পর্শকাতর ছবি বা মেসেজ পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here