বোনকে জড়িয়ে ধরে ৭ মার্চের ভাষণ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

0
560

বাংলা খবর ডেস্ক: স্ক্রিনে চলছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। সেদিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। বাবার বজ্রকন্ঠে ঘোষণা ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’

যে আহ্বান শুনে জেগে উঠেছিলো বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষ। যে কণ্ঠ শুনে সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার মুক্তিকামী জনতা। ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বোনকে জড়িয়ে ধরে বাবার কণ্ঠে শুনছিলেন মুক্তির আহ্বান। এমনই এক দৃশ্য দেখলো সবাই।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা আর্ট সামিট আয়োজনের একটি অংশ সাজানো হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। আর্ট সামিট শেষ হয়ে গেলেও এখনো চলছে এই প্রদর্শনী। আর তা দেখতে ২১ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সম্পূর্ণ প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তারা। এ সময় বঙ্গবন্ধুর একটি ছবির সামনে দাড়িয়ে সেলফিও তোলেন।

বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে চলা বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের বেশ কিছু পত্রিকার খণ্ডাংশ দেখে স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিভাবে আন্দোলনে অংশ নিতেন বা আন্দোলনে অংশ নেয়ার ছবি পত্রিকার প্রকাশ হলে মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা ঘর থেকে বের হতে দিতেন না, এমন অনেক স্মৃতির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

বোন রেহানাকে জড়িয়ে ধরে ৭ মার্চের ভাষণ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার সময় আবেগ ঝড়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর চোখে। বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে জড়িয়ে ধরে জাতির পিতার সম্পূর্ণ ভাষণ শোনেন তাঁরা।

বাঙ্গালির হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে বঙ্গবন্ধু নামটি। এখনো বাঙ্গালিদের জীবনে অনুপ্রেরণা যোগায় বঙ্গবন্ধুর জীবনের গল্পগুলো। বঙ্গবন্ধুর জানা অজানা জীবনের গল্প নিয়েই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে বিশেষ এই প্রদর্শনী আয়োজন। যেখানে তথ্যগত সহায়তা প্রদান করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই)।

বোন রেহানাকে জড়িয়ে ধরে ৭ মার্চের ভাষণ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

গত ৭-১৫ ফেব্রুয়ারি সিসমিক মুভমেন্ট নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে ঢাকা আর্ট সামিটের আয়োজন করা হয়। ঢাকা আর্ট সামিট শেষ হয়ে গেলেও মুজিববর্ষের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করা বিশেষ প্রদর্শনী ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামের বিশেষ প্রদর্শনীটি মূলত মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্যই আয়োজন করা। এই বিশেষ প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ আয়োজনটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রকর্ম, ব্যক্তিগত ছবি, সংবাদপত্রের কাটিং, ভিডিও ও ডিজিটাল বই। এ ছাড়াও এখানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন।

বোন রেহানাকে জড়িয়ে ধরে ৭ মার্চের ভাষণ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু শোষিত বাংলার খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্যই কাজ করে গেছেন । আর এ জন্যই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ৬ দফা, ’৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ; সবখানেই বাংলার মানুষের অনুপ্রেরণায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু। একইভাবে যুদ্ধের পরেও দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপ্রাণ চেষ্টা এ দেশের মানুষকে এখনো অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এখনো বিশ্ব দরবারে সমাদৃত। জাতিসংঘে দেয়া তাঁর বাংলা ভাষণের কথা এখনো স্মরণ করা হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তখন বাংলাদেশকে থমকে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট থামিয়ে দেয় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে। সপরিবারে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় তার নাম। কিন্তু কীর্তিমানের মৃত্যু নাই। আর সে কারণেই আজীবন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন বঙ্গবন্ধু। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তার কীর্তি যে মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে বিশেষ প্রদর্শনী ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here