বাংলা খবর ডেস্ক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বিদেশে কর্মী প্রেরণ, এলডিসি উত্তরণ এবং প্রতিবেশির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা- এ চার ইস্যুকে আগামীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বাংলাদেশের ব্রান্ডিংয়ের বছর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ কূটনীতি : এক দশকে বিশ্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ডিক্যাব’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত দেশ থেকে বের হলে কিছু সুবিধা হারাতে হবে। এটা মোকাবেলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট উইং গঠন করা হয়েছে। এ উইংয়ের কাজ হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানেই যাচ্ছি, বিনিয়োগের প্রস্তাব পাচ্ছি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমরা কৌশলগত অবস্থান নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত আমরা আশাবাদী। তবে যাদের সঙ্গে আলোচনা করছি তারা সহজ নয়। বিদেশে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বলেন, আমরা যেসব দেশে মানুষজন পাঠাই, সেসব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো নয়। কর্মসংস্থান ছোট হয়ে আসছে। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছি। সমস্যা সমাধানে নতুন কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সোনালী অধ্যায়ে। আলোচনার মাধ্যমে বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। যেহেতু ওখানে কিছু হলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। সেজন্য আমরা প্রতিবেশিদের বলি, বন্ধু দেশ এমন কিছু করবে না যাতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে কষ্ট হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের ‘ব্রান্ড নেম’ পরিবর্তন করতে চাই। বিনিয়োগসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘ল্যান্ড অব অপরচুনিটি’ হিসেবে প্রমাণ করতে চাই।
সংগঠনের সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনা ও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোনেম ও ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে মাসুদ বিন মোনেম বলেন, একটি দেশের কূটনৈতিক সাফল্য সংখ্যাগত দিক থেকে পরিমাপ করা কঠিন। এর সঠিক কোনো সূত্র বা যন্ত্রও নেই। ওই দেশের নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেই দেশ সম্পর্কে যে ছবি ভেসে ওঠে কূটনৈতিক সাফল্যের বিচারে সেটাই বড় বিষয়। স্বাধীনতার পর দরিদ্র জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনত। এখন চেনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, মেট্রো রেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। তাছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের বিজয় বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুষম ভারসাম্য বজায় রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের কূটনীতি সমানভাবে এগিয়ে চলছে। প্রয়োজন অনুসারে কোথাও দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির মাধ্যমে কখনও বহুপাক্ষিক ক‚টনীতি প্রয়োগ করে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক কূটনীতি তুলে ধরা হচ্ছে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস, তৌহিদুর রহমান, ওয়ালিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।