বাংলা খবর ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে পঞ্চগড়ের তাঁত কারখানাগুলো, বিপাকে পড়েছেন তাঁত নির্ভর প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। লোকসানে পড়েছেন কারখানা মালিকরাও। কাজ না থাকায় টানাপোড়েনের সংসারে অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন। সরকারি ত্রান সহায়তা এখনো পৌছেনি তাদের ঘরে। তাই তাদের কষ্টের পাল্লাটা দিন দিন আরও ভারি হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের মোটা সন্নাসী এলাকায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় তিন শতাধিক তাঁত কারখানা। ভাল মুনাফা হওয়ায় ওই এলাকায় বাড়তে থাকে তাঁতের পরিধি। শাড়ী, ওড়না ও থ্রিপিছ তৈরি হতো এই তাঁত পল্লীতে। তাঁতের খট খট শব্দে ব্যস্ত সময় পাড় করতেন কারিগররা। দিনরাত এসব তাঁত কারখানায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। \
এখন সরব তাঁত পল্লীতে নেমে এসেছে নিরবতা। করোনা পরিস্থিতিতে থমকে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। শূন্য পড়ে রয়েছে মেশিনগুলো। করোনা পরিস্থিতিতে গত ২৫শে মার্চ থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মালিকরা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাপ্তাহিক মজুরি নির্ভর তাঁত শ্রমিকরা। কাজ নেই, ভাত নেই এমন অবস্থায় কাটছে তাদের দিন। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না আর ঘরে নেই খাবারের জোগান। এতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহাসংকটে তারা। এদিকে এখনো তাদের ঘরে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করা তাঁত কারখানা মালিকরাও পড়েছেন লোকসানে। চুক্তি করা মালামালও কিনছেন না ঢাকার বড় ক্রেতারা। কারখানা বন্ধ থাকায় দৈনিক লক্ষাধিক টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানান তারা। এই অবস্থা দীর্ঘতর হলে লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই তাঁতশিল্প বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাঁত শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তাঁতের উপর নির্ভরশীল। এখন তাঁত বন্ধ ভাতও বন্ধ। ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। ধার দেনা করে কয়েকদিন চলেছি। এখন আর কোন উপায় নাই। সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতাও পাচ্ছি না।”
নেপাল চন্দ্র রায় নামে আরেক তাঁত শ্রমিক বলেন, “সরকার আমাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তাহলে আমরা কি করে খাবো। যতদিন ঘরে থাকতে হয় আমরা থাকতে রাজি আছি। তার আগে আমাদের খাবার ব্যবস্থা করেন।”
তাঁত শ্রমিক লাভলী আক্তার বলেন, “তাঁত কারখানায় কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। কাজ করে প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ হাজার টাকা পাই। সেই টাকায় সংসারের যাবতীয় খরচ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেই। কিন্ত হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বাড়ি থেকে হতে পারছি না। এই সময়ে অন্য কাজও করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে পড়ে গেছি।”
টাচ ফ্যানশের স্বত্তাধিকারী আব্দুল মজিদ বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা মালিকরা বিপদে পড়ে গেছি। আমাদের অনেক অর্ডার আটকে গেছে। বকেয়া টাকা তুলতে পারছি না। সেই সাথে ঋণের চিন্তাও আছে। এই বৈশাখের বাজার ধরতে না পারলে আমার সর্বনিম্ন ৮ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। এছাড়া আমাদের শ্রমিকরা খুব কষ্টে পড়ে গেছে। কাজ না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন তাদের যে সহযোগিতা করবো সেই সামর্থ আমার নাই।”
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি নিম্ন আয় ও শ্রমজীবীদের বাড়ি বাড়ি সরকারি ত্রান সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ত্রান পাওয়া মাত্রই তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এখনো যারা ত্রান পাননি, তাদের জেলা প্রশাসনের হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন তিনি।