চুয়াডাঙ্গায় একজন করোনায় আক্রান্ত, শতাধিক বাড়ি লকডাউন

0
61

নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে গত তিনদিন নিজ গ্রামে স্বাভাবিক চলাফেরা করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সকালে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার (২০ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে গোটা জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। আক্রান্তের তথ্য গোপন করে গ্রামটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলায় পরিবারের সদস্যদের বিচারের দাবি তোলেন অনেকে। পরে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসক ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তায় তার বাবা করোনায় আক্রান্ত বলে স্বীকার করেন।

তিনি জানান, সোমবার বিকেলে আইইডিসিআর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তাকেসহ পরিবারের আরও দুই সদস্যকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদেকুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবীর জানান, সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে তারা গোপন সংবাদে জানতে পারেন চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর গ্রামের বগুলা পাড়ার ওই ব্যক্তি গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে যান। এ সময় তার শরীরে করোনার উপসর্গ বুঝতে পেরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠান। এরপর আইইডিসিআর ১৮ এপ্রিল তার রিপোর্ট পজিটিভ বলে জানায়।

এ রিপোর্ট পাওয়ার ওই ব্যক্তিকে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু তিনি মুগদা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে গোপনে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ১৮ তারিখেই নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় তার রোগের কথা গোপন রেখে এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়।

এ খবর পেয়ে সোমবার রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তির বাড়িতে যান এবং তাকেসহ তার পরিবারের কাউকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর তার বাড়িসহ ওই পাড়ার প্রায় শতাধিক বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জানান, বেগমপুর গ্রামের ওই ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পরিবারের সদস্যরা গত ৬ই এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা ১৩ই এপ্রিল ঢাকার কিডনি হাসপাতালে ভর্তি করান।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে (একজন চিকিৎসক) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ঢাকায় কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার বাবা ঠান্ডা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। করোনা শনাক্তের জন্য অনেক চেষ্টার পর ১৫ই এপ্রিল ঢাকার আইইডিসিআরে তার বাবার নমুনা সংগ্রহ করে। তার বাবা কিছুটা সুস্থ হলে দুই দিন পর (১৮ই এপ্রিল) তারা নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।

তার দাবি- সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকার আইইডিসিআর থেকে ফোন করে আমার বাবা করোনা পজিটিভ বলে জানানো হয়। পরে ফেসবুক বার্তায় তিনি উত্তেজিত গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ঢাকা থেকে আসার পর তার বাবাকে তারা নিজ বাড়িতেই রেখেছিলেন। কঠিন সংকটে সকলকে সহমর্মিতা নিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার গোপন করেছেন। গত তিনদিন ধরে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজ গ্রামে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে অবাধে মিশেছেন, চলাফেরা করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসক ছেলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাতেই সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ থাকেন তাহলে তাকে নিজ বাড়িতেই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে চিকিৎসা দেয়া হবে। আর বেশি অসুস্থ হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হবে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গাতে গত ১৯ মার্চ ইতালি ফেরত এক যুবক প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৫ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here