বর্তমানে সাংবাদিকতা মানেই, অবহেলিত পেশা

0
90

মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ:
সাংবাদিকতা শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়।
সাংবাদিকতা হল এক ধরনের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া, যেখানে একাধিক লেখক ও সাংবাদিক এবং সামাজিকভাবে মধ্যস্থতাকারী জনগণ জড়িত থাকে।
সাংবাদিকেরা আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, বুকভরা ভালবাসা নিয়ে এ গৌরবময় পেশায় সম্পৃক্ত হন। দেশ, জাতি ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে সঁপে দেন। কিন্তু তাদের জীবনে কত শত দুঃখ-বেদনা, দুর্দশা, হতাশা ও ব্যর্থতার কাহিনী লুকিয়ে আছে তা প্রকাশ পায় না। হৃদয়ের গহীনে পুষে জীবন কাটান তাঁরা। রয়ে যায় শুধু জীবনের খাতায়। সেই তাগিদেই আজকে আমার এ লেখার উদ্রেক।
আমার মতে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস হওয়া উচিত। প্রত্যেক সাংবাদিককে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা বা গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়তে হবে, এমন কোন কথা নয়। বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। তবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে আগে থেকেই যারা নির্বাচন করে রাখেন, তাদের জন্য সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে পড়াই ভালো।
তবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এটাকে কেউ কেউ দায়বদ্ধতাও বলেন। যারা সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত, তারা সবার সামনে তথ্য ও সত্যকে তুলে ধরেন। এই তুলে ধরার কাজটা সহজ নয়। কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সাংবাদিকরা এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেন প্রতিনিয়ত।

যে কোনো সংবাদ সৃষ্টিতে সহজতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সংবাদ লিখতে হয় সহজ ভাষায়, সংক্ষেপে; যাতে সর্বসাধারণ তা সহজে বুঝতে পারে। কিন্তু এই সহজ করে লেখাটা যে সহজ নয়, বরং অনেক কঠিন।
সাংবাদিকতায় বক্তব্য প্রকাশ করতে হয় সহজ-সরলভাবে। যাতে পাঠক কোথাও হোঁচট না খায়। একটা প্রতিবেদনের ভাষা হবে এতটা প্রাঞ্জল যে তথ্য-বক্তব্য ঝর্ণার পানির মতো উছলে উঠবে। সহজ করে বলার কৌশল অর্জন অনেক কঠিন কাজ।

সত্যিকার সাংবাদিক যারা, তাদেরকেও ‘সত্য’ নামক ‘কঠিন’কে ভালোবেসে সামনের দিকে এগুতে হয়। দিন নেই, রাত নেই, সারাক্ষণ তাদেরকে লেগে থাকতে হয় তথ্য সংগ্রহের পেছনে।

আমি সাংবাদিকতার ধরনগুলো তুলে ধরছি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা- সামাজিক সমস্যাগুলো উদ্ঘাটন করে এমন প্রতিবেদন।
আলোকচিত্র সাংবাদিকতা- চিত্রের সাহায্যে সত্য ঘটনাগুলো উপস্থাপনের রীতি।
হলুদ সাংবাদিকতা- অতিরঞ্জিত অভিযোগ বা গুজববিষয়ক প্রতিবেদন।
আমাদের সাংবাদিক সমাজের মধ্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সিনিয়র সাংবাদিকরা জুনিয়ার সাংবাদিকদেরকে মূল্যায়ন করে না।
যারা অনেক আগের নামকরা পত্রিকায় কাজ করে তারা নতুন কোন পত্রিকার সাংবাদিকদের কে মূল্যায়ন করেনা।
কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দুজনের অবদান সমান।একজন সাংবাদিক বিপদে পড়লে অন্য একজন সিনিয়র সাংবাদিক এগিয়ে আসতে চায় না। এভাবে আস্তে আস্তে সাংবাদিক সমাজ অবহেলায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ নিজেদের মূল্যায়ন ও সংঘবন্ধভাবে পথ চলার জন্য গড়ে তুলেছেন অনেকগুলো সংগঠন। যা প্রত্যেক সাংবাদিককে একটি মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় ও বৈশি^ক সাংবাদিক সমাজে সবসময় দেখা যায় রাজনৈতিক আধিপত্য। আমরা অনেক সাংবাদিক যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসুক তাদের সাথে লেজুড়বৃত্তি করে চলে থাকি। ফলে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসিনা। রাজনৈতিক সিল মোহরে হিসাব করি তাদের। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, যেখানে সকল সাংবাদিক সমাজকে একত্রিত ভাবে কাজ করতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে যে যার রাজনৈতিক মতাদর্শে থাকতেই পারে, কিন্তু কলমের কাছে সবকিছুর উদ্ধে পেশা। সাংবাদিক সমাজ যে যার সংগঠন বা মতাদর্শের হতেই পারে, কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিপদে হাতে হাত রেখে কাজ করলে আজ বাংলাদেশে কেউ দূর্নিতির সাহস পেত না। সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশে রূপ নিতে পারতো। তাহলে সাংবাদিক সমাজের স্থান হতে পারতো অনেক উচ্চতায়। দেশের কোন সাংবাদিক অবহেলিত হতো না।
সাংবাদিক সমাজ যেকোন রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভ। তারা সরকারের ভালো কাজের সহযোগিতা করবে, সরকারকে সহযোগিতা করতে দূর্নিতির বিরুদ্ধে কলম ধরবে, সরকারের ভালো কাজে বাহবা দিবে আর খারাপ কাজের সমালোচনা করবে। ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঠিক দিকনির্দেশনায় সাংবাদিক সমাজও সম্মানিত হবে।
সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম একটি। যারা সারা বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সাংবাদিকদের একটি ছাতার নিচে রাখার জন্য কাজ করে চলেছেন। সারা বাংলাদেশের সকল সাংবাদিকের পক্ষে প্রতিনিয়ত নির্যাতন, দাবি আদায়ের আন্দোলন ও সাংবাদিক সমাজের মনোভাব দৃঢ় করে গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছেন।
প্রতিনিয়ত যে কোন দুর্যোগে সরকার ও প্রশাসনের কাধে কাধ মিলিয়ে সাংবাদিক সমাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছে। দেশের জন্য কাজ করতে কতো সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে। সত্য ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রশাসনের থেকেও নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু সরকার বা মিডিয়া মালিক থেকে বাহবা ছাড়া কোন সহযোগিতা পায় না বললেই চলে। তাই আমি লিখতে বাধ্য হয়েছি সাংবাদিকতা মানেই, অবহেলিত পেশা। সাংবাদিকরা নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায়। তবুও সাংবাদিকরা সমাজে অবহেলিত।

লেখক: সম্পাদক, মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here