গরীবের চাল,ডাল চুরি হচ্ছে

0
109

মুসবা আলীম তিন্নি:

সকাল থেকে মনটা ভিষণ খারাপ..কেনো জানিনা মনে হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার শিকার আমরাই হতে চলেছি। একদিকে ভাইরাস উৎপাদনকারী দেশ চীনা কীট বাংলাদেশে, যার উপর ভরসা করা যাচ্ছেনা…সকালে বিকেলে যার রিপোর্ট বদলে যাচ্ছে। অন্যদিকে মানুষের মাঝে এখনো বিবেক তৈরি হচ্ছেনা। গরীবের চাল,ডাল চুরি হচ্ছে। ধানখেতে দাঁড়িয়ে হাজারো ধান পায়ে মাড়িয়ে কাঁচা ধান কেটে দলেবলে গাঁটবেধে ফটোসেশান হচ্ছে। গার্মেন্টস খুলে দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকেরা শ্রমিক দিবসে পেটের দায়ে মৃত্যু ভয় ফেলে কাজের জন্য ছুটছেন! কারণ তাদের দরকার টাকা, অনাহারে নিপতিত পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চিন্তা।

হ্যাঁ শুরু থেকে নেতা, নেত্রী, মানবিক মানুষ, সিটি করপোরেশন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার সবই দেয়া হয়েছে। তবুও গরীবেরা এদের ভরসা করতে পারেনা। তাদের ধারণা এরা কার্ড দেখে মুখ চিনে দান করে, পরিবারের সদস্য অনুপাতে একমাসের খাবার শেষ হলে অাবার গিয়ে ত্রানের লাইনে দাঁড়ালে দাতারা বলে ওঠে *তুমি ক্যন অাইসো… তোমারে না দিসি,অাবার অাইসো,অাসলে তোমাদের পেট কখনো ভরানো যাবেনা, যাও যাও অার দেয়া হবেনা *….. এটাও মিথ্যা না কিছু গরীব থাকলেও নিতে যায় বারবার। কিন্তু কিছু গরীবের কিছু করার থাকেনা পরিবার নিয়ে একমাসের চাল,ডাল, অালু দিয়ে দুবেলা খেয়ে কতটুকুই বা বাঁচানো যায়।

এবারে মধ্যেবিত্ত…. যারা চাকরির টাকায়, টিউশন করে, প্রাইভেট পড়িয়ে, কোচিং চালিয়ে মোটামুটি সচ্ছ্বল সংসার চলতো..এখন চাকরি নাই, প্রাইভেট,টিউশন, কোচিং সবই বন্ধ… অর্থাৎ অায়ের একটা বড় খাত পুরোপুরি বন্ধ। টিভিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারংবার জানাচ্ছেন যারা চাইতে পারেনা তাদের খোঁজ নিন তাদের দেখুন। কিন্তু কই, নেতারা তো জনদরদী কাজ করবেন অার দশটা,পাঁচটা করে ছবি তুলবেন একাজে ব্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ঠিকঠাক কুকুর খাওয়াতে পারবেন তারা, কারণ কুকুর যে হিংস্র, খাবার না পেলে তারা হরিণও খেয়ে ফেলে। রাস্তায় বের হলে ঘেউঘেউ করে পিছু নেয়, তাই এই ঘেউঘেউ দের খাবার দিয়েও ফটোশেসান চলে, জানানো হয় *মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখুন অাপনার অাদেশ অামরা কিভাবে অক্ষরে অক্ষরে পালন করি*। অার মধ্যেবিত্তরা অাগের মতোই ঘরেই পরে রয় *ঐ যে, তারা তো ভিখিরি বা কুকুর নয় তাদের সাহায্য করে ফটোসেশান তো করা যাবেনা, নিষেধাজ্ঞা অাছে যে। তা-ই তারা অনাহারে, লজ্জা নিয়ে মধ্যেবিত্তই থেকে যায়।
হায়!! এই মহামারী টাকাওয়ালাদের এখনো শিক্ষা দিতে পারলোনা।

দেশের কক্সবাজার এলাকায় পঙ্গপালের মতো পোকার দেখা মিলেছে যারা নিমেষেই গাছের পাতা খেয়ে সাবাড় করছে, মহামারীর মধ্যেই মহা দূর্ভিক্ষের অশনি সংকেত। মনে পড়ে যায় সত্যজিৎ রায়ের সেই মুভিটার ভয়াবহ দৃশ্যের কথা। জয়নুল আবেদিনের অাঁকা ছবিটা চোখে ভেসে ওঠে।
কি ভাবছেন, শুধু টাকা উপার্জন করলেই হবে, টাকা থাকলে বাঘের দুধও কিনতে পাওয়া যায় তাইতো!!! চিবিয়ে খেতে পারবেন তো টাকা?? এই মহামারীর প্রাক্কালে ধান কেটে হাজারো গরীবের অভিশাপ নিয়েছেন…. অবশ্য গরীবের অভিশাপ নেয়া তো অাপনাদের রক্তে মিশে আছে, ওসব অভিশাপ অাপনাদের কিছুই করতে পারেনা।
তবে এবার কিন্তু প্রকৃতি অভিশাপ দিচ্ছে…. অাকাশ, বাতাস, মাটি অভিশাপ দিচ্ছে… যাবেন কোথায় এবার? বিদেশে পালিয়েও তো রক্ষা মিলবেনা। করোনার মহামারী তো পৃথিবীর সব জায়গায়।

যদিও সময় শেষের দিকে *তবুও বলবো এখনো মানবিক হন, নিজের বিবেককে কাজে লাগান..ঠাট্টা,তামাশা,ট্রোল তো অনেক হলো, এবার একটু সিরিয়াস হন। মানুষ বাঁচবেই, কারণ মানুষের জন্যই পৃথিবী। তবে একটা প্রবাদ অাছে জানেন তো * পাপ করে একজনে, অার তার প্রায়শ্চিত্ত করে একশো জনে*।

অনেক অাবোল তাবোল লিখলাম, জানিনা অামার কথাগুলো সবার বোধগম্য হবে কিনা।
সামান্য মানুষ অামি, তারকা তো নই… তাই সাধারণের কথা কেউ বুঝবে কি-না জানিনা!
হয়তো অনেকে ভাবছেন এতোসব অামি একাই কেনো ভাবছি?? অাসলে যার ঘরে টাকা অাছে পর্যাপ্ত খাবার মজুত অাছে, লোকবল, ক্ষমতা, যোগ্যতা সবই অাছে এমন কেউ একজন এভাবে ভাবছেনা, তাই অামার মতো মধ্যবিত্তকেই অাগাগোড়া ভাবতে হচ্ছে। ভাবছেন বাকি মধ্যবিত্তরাও।

লেখক : সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here