মাঝেমধ্যে গতিপথ পরিবর্তন করছে আম্পান

0
632

বাংলা খবর ডেস্ক:
সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পান আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত এটির মূল কেন্দ্র বা চোখ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপ এবং ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। কেননা, আম্পান মাঝেমধ্যে গতিপথ পরিবর্তন করছে।

সামান্য পূর্বদিকে বাঁক নিলেই আম্পানের মূল কেন্দ্র আছড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশের সুন্দরবন ও আশপাশের জেলায়। তবে কেন্দ্র যেখানেই উপকূল অতিক্রম করুক না কেন, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা থেকে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপ পর্যন্ত দুই দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলে বড় ধরনের ছোবল মারবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।

কেননা, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করেই মূল তাণ্ডব চালাবে আম্পান। গত কয়েক বছরে সিডর, আইলা, বুলবুল ও ফণীর তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত এই বনের দগদগে ঘা এখনও শুকায়নি।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত কাজ মনিটরিং করছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সবধরনের পণ্য ওঠানামা মঙ্গলবারই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাহাজগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বহির্নোঙ্গরে। দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খোলা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে সাধারণ আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য ইফতারসহ রাতের খাবার এবং সেহরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আম্পান মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয়েছে যুদ্ধজাহাজ ও ল্যান্ডিং ক্রাফট।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মঙ্গলবার থেকে পড়েছে দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে। কখনো ঝিরিঝিরি আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। শেষরাত থেকেই বইছে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া। তা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। রাত দেড়টায় এই রিপোর্ট লেখাকালে জানা যায়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি) উন্মত্ত আম্পানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে ৬ নম্বর বিপদসংকেত। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, বুধবার সকাল থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি থাকবে।

দেশি বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আম্পান ২৪১ কিলোমিটার গতির বাতাসের বেগ নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগোচ্ছিল। রাত ১টায় তা আরও কমে ২২৫ থেকে ২৩৫ কিলোমিটার হয়েছে। ২২১ কিলোমিটারের উপরে বাতাসের গতি হলে সেটিকে সর্বোচ্চ মাত্রার বা ক্যাটাগরি-৫ পর্যায়ের ‘সুপার’ ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। অর্থাৎ, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আম্পান সুপার ঘূর্ণিঝড়রূপেই আছে।

আম্পান সঙ্গে নিয়ে আসছে জলোচ্ছ্বাস, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত এবং প্রচণ্ড ঝড়োহাওয়া। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র থেকে অতি তীব্র ঝড়ো হাওয়া চলারপথে লণ্ডভণ্ড করে যায় জনপদ। ২২ মে অমাবশ্যা থাকায় আম্পানের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। আম্পান বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই শতাব্দীর প্রথম ‘সুপারসাইক্লোন’। এরআগের দানবীয় সিডরও সাগরে থাকাকালে ‘সুপারঘূর্ণিঝড়’ আকারে ছিল না।

সেটি ছিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়রূপে। যদিও সিডর-পরবর্তী সময়ে এর সর্বোচ্চ ২২৩ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায়। তবে আম্পান উপকূলের যত কাছে আসবে, এর শক্তি তত কমতে পড়তে পারে। সেই ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আম্পান ‘অতিপ্রবল’ বা ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে।

সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানার সময়ে এর বাতাসের গতি ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। সেটি ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে সমুদ্র থেকে যখন স্থলভাগে আম্পান আছড়ে পড়বে তার গতি থাকবে প্রবল। এর আগে নিম্নচাপ চাপ থেকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর আম্পানের গতিমুখ ছিল উত্তর-পশ্চিম দিকে।

আম্পানের প্রভাবে ইতিমধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের আকাশ হালকা-ধুসর মেঘে ছেয়ে যায়। শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ঙ্কর রূপের কারণে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার বুলেটিনে আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর মহাবিপদ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত জারি করেছিল। পরে বিকাল ৩টার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আম্পানের শক্তি ক্রমান্বয়ে কমে এলে ‘মহাবিপদ’ সংকেত নামিয়ে শুধু ‘বিপদ’ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয় মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে।

ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থা (আইএমডি) এবং জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের (জেটিডব্লিউসি) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দিনের বেলায় আম্পানের ঘন্টায় গতি ছিল ১২ থেকে ১৬ কিলোমিটার। এটি যতই উপকূলের কাছে পৌছাতে থাকে, ততই গতি এবং শক্তি কমতে থাকে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ প্রথম পৌছায় ওডিশা উপকূলে।

পরে সেটি ডানদিনে বা উত্তরপূর্ব দিকে বেকে ধেয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। উপকূলের কাছে আসার আগেই এর গতি আরও কমে যায়। কম্পিউটারের মডেল বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, আজ দুপুর বা বিকেলের দিকে পশ্চিমবঙ্গে এবং বিকাল বা সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে আম্পান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here