‘যেতে হবে করোনা এক্সপ্রেসেই’, বিপর্যয়ও ভোটের হাতিয়ার অমিতের

0
116
পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশে অনলাইন ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনা এবং আমপান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসীর উদ্দেশে অনলাইন ভাষণ দিতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যে ভোটের এখনও প্রায় দশ-এগারো মাস বাকি। করোনা, আমপান-সহ সাম্প্রতিক সব বিপর্যয়কেই ভোটের প্রতিপাদ্য করে তুলে শাহের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকবাহী যে ট্রেনকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ আখ্যা দিয়েছেন, সেই ট্রেনই হবে তাঁর সরকারের ‘এক্সিট এক্সপ্রেস’।

কিন্তু করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত বিপর্যয়ে জেরবার সময়ে বাংলায় ক্ষমতা দখলের দামামা বাজানোয় শাহকে তীব্র আক্রমণ করেছে তৃণমূল। তাদের পাল্টা অভিযোগ, গবাদি পশুর মতো করে শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র! শাহদের ‘ব্যর্থতা’ বোঝাতে রাজ্যের শাসক দলের বক্তব্য, তাঁরা শুধু ‘এক্সিট’ আর ‘এন্ট্রি’র কথা ভাবছেন। মমতার উচ্চ্তায় পৌঁছতে গেলে তাঁকে রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দুই বিরোধী দল বাম ও কংগ্রেসও বলেছে, সঙ্কটের সময়ে দেশ জুড়ে শ্রমিক-সহ বিপন্ন মানুষের জন্য শাহের সরকার কী করেছে, তার জবাব আগে দিয়ে তবে বিজেপি বাংলা দখলের কথা ভাবুক!

অনলাইন সভায় মঙ্গলবার শাহের বক্তৃতা ছিল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ভরা। যার নির্যাস— তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে, এ রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে সেই সব থেকে মুক্তি পাবেন মানুষ। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, ‘‘কেন্দ্র ট্রেনে করে সওয়া কোটি লোককে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ১৭০০, বিহার ১৫০০ ট্রেন পেয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মাত্র ২৩৬টি ট্রেনে তিন লাখ লোককে ফিরিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে ঘরে ফিরতে চেয়েছিলেন। আমরা সেই ট্রেনের নাম দিয়েছি শ্রমিক এক্সপ্রেস। আর মমতাদিদি সেই ট্রেনের নাম দিয়েছেন ‘করোনা এক্সপ্রেস’। ওই করোনা এক্সপ্রেসই বাংলা থেকে তৃণমূলের এক্সিট এক্সপ্রেস হবে! আপনি বাঙালি শ্রমিকের ক্ষতস্থানে যে নুন দিয়েছেন, তা তাঁরা ভুলবেন না!’’

অপশাসন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, গণতন্ত্র-হত্যা, দুর্নীতির মতো নানা অভিযোগে রাজ্য সরকারকে বিদ্ধ করে বঙ্গবাসীর কাছে শাহের আবেদন, ‘‘আপনারা কমিউনিস্ট এবং তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এ বার এক বার বিজেপিকে সুযোগ দিন। মোদীজির নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়বে বিজেপি।’’

নরেন্দ্র মোদী সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে মমতার সরকার এ রাজ্যের গরিব মানুষকে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করেছে। কিষাণ সম্মান নিধি প্রসঙ্গে শাহের বক্তব্য, ‘‘গরিব কৃষক করোনা, ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় এমনিই মরে আছে। রাজনীতি করতে গিয়ে দিদি তাকে আর কেন মারছেন? আপনি কৃষকের তালিকা দিন, আমরা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা দিতে চাই। শনিবার তালিকা দিলে সোমবারই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’’

এ রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা এবং গণতন্ত্র-হত্যা অব্যাহত বলে অভিযোগ করেন শাহ। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি কর্মীদের প্রাণ দিতে হয়েছে। তাঁর এবং অন্যান্য নেতাদের সভা ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শাহের মন্তব্য, ‘‘হিংসা যত করবেন, ততই বাংলায় পদ্মফুল ফুটবে।’’

মমতা কয়েক দিন আগে কেন্দ্রের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শাহকে তিনি রাজ্যের করোনা সঙ্কট সামলাতে বলেছিলেন। তার জবাবে শাহ এ দিন বলেন, ‘‘বাংলার জনতা খুব দ্রুত আপনার ইচ্ছা পূরণ করবে। ভোট হলে বিজেপি বাংলায় সরকার গড়বে। সেই সরকার পাঁচ বছরেই দুর্নীতি, তোলাবাজি, অনুপ্রবেশ, পরিবারতন্ত্র, বেরোজগারি থেকে বাংলাকে মুক্ত করবে। হিংসাকে বিদায় দেবে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here