‘কোন মানুষ এমনি এমনি মরে যায় না’

0
189

তাবেন্দা ইসলাম:
আমি বরাবরই বেশি কথা বলি তাই সবসময়ই মূল বক্তব্য থেকে দূরে সরে যাই। আজ লিখতে বসেছি, জানিনা নিজেকে কতটুকু বোঝাতে পারব।

সুশান্ত সিং রাজপুত্ত যে আন্তহত্যা করেছে মুম্বই এর বিলাসবহুল নায়ক পাড়া ব্যান্দ্রায় ছিল বিলাস বহুল ফ্ল্যাট,ছিল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আর অসংখ্য ফ্যান ফলোয়ারজ ।

অল্প বয়স,অবিবাহিত, সফল একজন মানুষ ছিলেন যার আপাতদৃষ্টিতে মরে যাওয়ার কোন কারণ নাই ।

“তারপরেও গত ছয় মাস ধরে উনি ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন”।

কারন তো অবশ্যই ছিল তা আপনার আমার অজানা। সে কাউকে না কাউকে তার খারাপ লাগা বা কষ্টের কথা বলেছে।

কোন মানুষ এমনি এমনি মরে যায় না।

আমরা বন্ধুদের সাথে কথা বলি, গল্প করি। কিন্তু উপরে উপরে। কারন নিজের কষ্টের কথা বলে, কখন জানি সে, আমার দূর্বল দিক নিয়ে ঠাট্টা করে।
আমরা যদি প্রকৃত বন্ধু হই তবে….
তার কিছু দিনের চলাফেরা, বন্ধুর কথাবার্তার পরিবর্তন, ফেসবুক একটিভিজ মনযোগ দিয়ে দেখলেই বুঝে যাব আসলে ও কি নিয়ে কষ্টে আছে।

Mental health ইস্যুটা নিয়ে কেন যেন আমরা কেউই কথা বলতে চাই না।

আরেহ বাবা!!……আগের দিনে জীবন এতো fast এতো যান্ত্রিক ছিল না। এমন অনেক রকম হাজারটা সমস্যা আছে…

কাউন্সিলিং নেওয়া দোষের কিছু না!
জীবনটা জীবনের মতো না লাগতেই ,পারে। অনেক কিছু আমরা শেয়ার করতে পারি না। অনেক কথা থাকে কষ্টের যা আমরা বলতে পারি না…………..
নিজের খারাপ লাগার কথা বললে মানুষ বলে এডজাষ্ট করে নিতে। কিন্তু অনেক সময় এডজাষ্ট করতে করতে সে যে মানসিক ভাবে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে, তা কেউই হয়তো খেয়ালই করে না। সে নিজেও হয়তো বুঝতে পারে না।

এক সময় হয়তো সে কাউকে না বুঝাতে পেরে আত্মহত্যার পথটি বেছে নেয়।। এই অনুভূতিটা আমি খুবই অন্তর থেকে বুঝি।
সব মানুষেরই কোন কোন সময় জীবনে এরকম মুহূর্ত আসে।
তখন তার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন হয়ে যায়। নিজেকে যারা সামলে উঠতে পারে না, যারা মানুষিক ভাবে দূর্বল ও অনেক বেশি রকম ইমোশনাল। তারাই এই পথ বেছে নেয়……

একটা সময় আসে যখন আপনি পেছনের দিকে ফিরে তাকান আর ভাবেন এতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন আর জীবনের সকল অর্জন অর্থহীন…… তথন আপনার কেমন লাগবে……

যখন আপনার জীবনের 20/25 বছর তাদের জন্যে ইনভেষ্ট করেছেন। তারা আপনাকে বোঝে না। আপনি একজন মূল্যহীন মানুষ তাদের কাছে। এই জীবনে যা করেছেন একমূহূতের মধ্যে সব অর্থহীন হয়ে পরবে।
শুধু যে প্রিয় মানুষের ব্যাপার না, এমনও হতে পারে অপনি আপনার জীবনের তিল তিল করে গড়া স্বপ্ন কিছুদিনের মধ্যেই চোখের সামনে ভেসে যেতে………

যদি সত্যিই আপনি অনুভব করেন এমন কোন মানুষের জন্যে। তবে কথা বলুন। তাকে সাহায্য করুন।
আপনার পাশের হাসি খুশি মানুষটিকে কাল সকালে উঠে নাও দেখতে পারেন…….

এর মানে বাহ্যিক ভাবে যাকে সুখে থাকা বলে মনে হয় সেটা সুখ না । আর যা যা থাকলে মানুষের অসুখী হবার কোন কারণ নেই ধারনা করা হয়, তা আসলে কোন কাজের না ।

ডিপ্রেশন বা কোন মেন্টাল অসুস্থতা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসুখ অথচ প্রচণ্ড আন্ডার রেটেড,আন্ডার এস্টিমেটেড।

কেউ পেট ব্যথা বললে, আমরা তাকে নানা রকম চিকিৎসা নিতে বলি, টেস্ট করতে বলি ।

কিন্তু কেউ যদি বলে, আমার মন সারাক্ষন খারাপ থাকে তখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মনে মনে বলি – ভং ধরেছে । কেউ বুঝতেই চায় না। তার মন খারাপের কথা শুনতে মানুষ বিরক্ত হয়ে যায়।

সাধারণত এরকম লম্বা সময় যাদের মন খারাপ থাকে বা ডিপ্রেশনে ভুগে শেষ পর্যন্ত সুইসাইড করে প্রমান করতে হয়, তাদের সত্যিই মন খারাপ ছিল।

মানসিক রোগ নিয়ে আমাদের সমাজে ট্যাবু আছে। আমরা সহজে মানসিক রোগ ডিসকাস করতে চাইনা,কাউন্সেলারের কাছে যেতে চাইনা।তার অনেক কারন ও আছে।

আমি নিজে বেশ অনেকবার কাউন্সিলর এর কাছে গিয়েছি। বুঝতে চেয়েছি নিজেকে। এবং বেশ কয়েক জনের কাছে। কারো সাথে কথা বলেই ভালো লাগেনি। এবং মনে হয়েছে শুধু শুধুই কষ্টের টাকা গুলো নষ্ট করলাম। আমাদের দেশের কাউন্সিলররা আমাদের সাথে মনের দিক থেকে কানেক্ট করতেই পারে না।

তাছাড়া উনাদের ভিজিট এতো বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে উনাদের কাছে যাওয়াও সম্ভব না।
একে তো এই অসুখ আমাদের গনার মধ্যে ধরে না। এটা তো পেট ব্যাথা বা ক্যান্সার না যে মানুষ যাওয়ার জন্যে উৎসাহ দিবে।
এই অসুখ যে মানুষটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা কেউ বুঝতেও পারছে না।

উলটা যে মানুষটা এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় তাকে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই না। কারন আমাদের তো সময়ই নেই। এই মানুষ গুলোর সাথে কথা বলার।
আমরা নিজেদের নিয়ে নিজেরা এতই ব্যস্ত। ফেসবুকে দুরের সম্পর্ক গুলোর প্রতি সময় দেই। কিন্তু পাশে বসে থাকা আপন মানুষটির দিকে তাকিয়ে দেখি না। তাকে বুঝতেও চাই না।

অথচ মানুষের ব্রেইন,মস্তিষ্ক বা মনই তার সব। ব্রেইন কাজ করা বন্ধ করে দিলে মানুষ খাবার কিভাবে খেতে হয় সেটাও ভুলে যায়। আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ ব্রেইন এর নির্দেশেই ম্যুভ করে,আমাদের প্রতিটা অনুভূতির উৎস আমাদের মস্তিষ্ক। তাই ব্রেইনের চিকিৎসা,যত্ন হওয়া,শরীরের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চেয়েও বেশী জরুরী।

আপনার পাশের মানুষটা যদি কখনও বলে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করে,তাহলে হেসে উড়িয়ে দেবেন না। মানুষ এখন যখন তখন মরে যায় এবং এই মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত টা ইম্ব্যালেন্সড মানসিক অবস্থার ফলাফল। কাছের মানুষ হলে সেই ব্যালেন্স ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আপনার।

মাঝ সাগরে ডুবতে দেখা কোন মানুষের হাত যদি আপনি ছেড়ে দেন,
কাপুরুষ সে না,কাপুরুষ আপনি…
হাজার আফসোস এ, তাকে আর কোন দিন ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।

তাবেন্দা ইসলাম : কর্ণধার, লীলাবতী বুটিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here