‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ৮)

0
128

শাহজাহান সরদার:
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

ফিচার বিভাগ, রিপোর্টিং, ডেস্ক ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে প্রতিশ্র“তিশীল তরুণদের নিয়ে আসি। তারা সবাই এখন যুগান্তরে বা অন্য কোথাও ভাল অবস্থানে আছেন। এভাবে বিজ্ঞাপন, সার্কুলেশনসহ সব বিভাগেই আমরা লোক নিয়োগ করে ফেলি। ফলে সংকট কেটে যায়। পত্রিকা প্রকাশে কোনো সমস্যা থাকে না। আমরা এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট সফর করি। সুধী-সমাবেশ এজেন্ট হকারদের সঙ্গে বৈঠক হয়। অসুস্থ শরীরেও মূসা সাহেব সফরে বের হন। ঢাকার পরই চট্টগ্রাম ও সিলেটে পত্রিকার প্রচার সংখ্যা বেশি। তাই প্রাথমিকভাবে দুস্থানেই মূসা সাহেব যান। বাকি যেসব স্থানে সুধী-সমাবেশ হয় সেগুলোতে আমি অংশ নিই। রাজধানীর পূর্বানী হোটেলে ঢাকার হকার্স সমিতি নেতৃবৃন্দ ও সুপারভাইজারদের মধ্যাহ্নভোজসহ সমাবেশ করি। যুগান্তরের মালিক বাবুল সাহেব আমাদের শুধু একটি কথাই বলেছেন পত্রিকার প্রচার যাতে না কমে। আর শূন্য স্থান যেন শূন্য না থাকে। ভাল অভিজ্ঞ লোকবল নিয়ে আসেন। এজন্য যা যা করা দরকার তা তিনি দেবেন। তিনি কথা রেখেছিলেন, আমরাও সফল হই। যে কারণে যুগান্তর টিকে গেছে। ভালভাবে টিকে গেছে। সময়মত সব পদক্ষেপ না নিতে পারলে, শূন্য স্থান পূরণ করতে না পারলে আর মালিক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে উদ্যোগী না হলে যুগান্তরের ইতিহাস হয়তো আজ অন্যভাবে লেখা হতো। যুগান্তরের অগ্রযাত্রাকে সহায়তা করেছে আরেকটি বিষয়ও। তা হলো সারওয়ার সাহেবের নতুন পত্রিকা প্রকাশে বিলম্ব। ছয় মাসের মধ্যে তিনি নতুন পত্রিকা প্রকাশ করতে পারলে সমস্যা হলেও হতে পারতো। কিন্তু না, তার সমকাল বের করতে বেশ সময় চলে গেল। ততদিনে যুগান্তর আবার স্থায়ী ভিত গড়ে নিল। সমকাল বের হলেও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। মূসা সাহেবের নেতৃত্বে মান-অভিমানের মধ্যে যুগান্তর ভালভাবেই চলছে। মান অভিমান বললাম এ কারণে যে, ছয় মাসের মধ্যেই মূসা সাহেব অন্তত দু’বার পদত্যাগপত্র দাখিল করেণ। আবার আমাদের অনুরোধে প্রত্যাহার করেন। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় মূসা ভাই। তিনি কিছু বললে আমাদের না-সূচক জবাব দেয়ার সুযোগ ছিল না। আর তিনিও আমাদের কথা ফেলতেন না। তাই পদত্যাগপত্র দিলেও আবার প্রত্যাহার করে নেন। প্রথম দফা পদত্যাগের সময় বাবুল সাহেব অফিসে এসে অনুরোধ করেন। তার মধ্যে একধরনের শিশুসুলভ সরলতাও ছিল। সাংবাদিক কর্মচারীদের অধিকার মর্যাদা রক্ষার বিষয়েও ছিলেন আপোসহীন। সব বিষয়ে আপোস করেননি। প্রতিবাদ জানান। আবার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারেও ছিলেন দারুণ সচেতন। তার এ-ধরনের প্রতিবাদের কারণে সাংবাদিক কর্মচারীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়েছিল। অথচ এগুলো ন্যায্য ছিল, আগে বাস্তবায়ন হয়নি।

মূসা সাহেব সম্পাদক থাকাকালে সে-রকম কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। এর মধ্যে বেতন বোর্ড রোয়েদাদ (ওয়েজ বোর্ড) অন্যতম। সে সময়কার নতুন ওয়েজবোর্ড সারওয়ার ভাই বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। জানা-জানি হয়ে গিয়েছিল অনেকে চলে যাবেন। তাই হয়তো ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বিলম্ব ছিল। আমরা যোগদানের পর সাংবাদিক-কর্মচারীদের স্বার্থে প্রথম চ্যালেঞ্জ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন। আমার হাতে হিসাব-নিকাশের কাগজ এলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূসা সাহেবের সঙ্গে আলাপ করি। তিনি বললেন, বাবুল সাহেবকে বিষয়টি জানাতে। যদি ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে মূসা ভাইয়ের সম্মান থাকে না। সাংবাদিক-কর্মচারীরাও আস্থা হারাবে। বাবুল সাহেবকে বললাম, তিনি সায় দিলেন। বাস্তবায়ন হলো ওয়েজবোর্ড। কিছুদিন পরই ঈদ। ঈদের আগে বোনাস। তৈরি হলো বোনাস শিট। আগে যুগান্তরে মফস্বল অর্থাৎ জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতারা বোনাস পেতেন না। মূসা সাহেব তাদের বোনাসের অর্ন্তভুক্ত করেন। এতে কর্তৃপক্ষের আপত্তি এলো। মূসা সাহেব বললেন, ঢাকার সাংবাদিক কর্মচারীরা পেলে জেলা-উপজেলার তারা পাবে না কেন? দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরের বিলম্ব হলে সাফ জানিয়ে দেন, তাদের বোনাস দেয়া না হলে তার বেতন থেকে হলেও বোনাস দিবেন। তিনি বেতন নেবেন না। মূসা ভাইয়ের বেতন যা ছিল সেই বোনাসের অংকের পরিমাণ ছিল এর চাইতে কম। পরে যুগান্তর কর্তৃপক্ষ জেলা-উপজেলা সংবাদদাতাদের বোনাস দিতে রাজি হন। এই হলেন মূসা সাহেব। কিন্তু তিনিও বেশিদিন থাকলেন না। তৃতীয় দফা পদত্যাগপত্র দেয়ার পর কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেন। বাবুল সাহেবের কথা হলো, সম্পাদক যদি ৯ মাসে তিন বার পদত্যাগপত্র দাখিল করেন তাহলে কাজ হবে কীভাবে? পদত্যাগপত্র গ্রহণের আগে আমাকে তার অফিসে নিয়ে কথা বলেন। এরপর মূসা সাহেবকে আমি নিয়ে যাই। আমার উপস্থিতিতে দু’জনের মধ্যে অনেক আলোচনা হলো।

চেষ্টা করলাম মূসা সাহেবকে যেকোনোভাবে রাখার। কিন্তু মূসা সাহেবও রাজি হননি। বাবুল সাহেবও সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিলেন। পরে চেষ্টা করি সম্পাদক ছাড়াও মূসা সাহেবকে সম্মানজনক কোনোভাবে রাখা যায় কিনা। তাও হলো না। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো শনিবার মূসা সাহেব যুগান্তর থেকে বিদায় নেবেন। অফিসে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হবে। মূসা সাহেব ও চেয়েছিলেন সবাইকে ভালভাবে বলে যাবেন। তার কথামতোই বিদায় পর্ব সমাপ্ত হলো। এভাবেই যুগান্তরের দুঃসময়ের কাণ্ডারি মূসা সাহেব চলে গেলেন। উল্লেখ্য, তৃতীয় দফা পদত্যাগপত্রও হয়তো গৃহীত হতো না। আরও অপেক্ষা করতেন বাবুল সাহেব। আগে হয়তো সম্পাদক ঠিক করতেন পরে সুযোগ বুঝে গ্রহণ করতেন। কিন্তু এবার তার সম্পাদক ঠিক করাই আছে। তাই আমার মনে হয়েছে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি। এখানে বলে রাখি মূসা সাহেব যুগান্তরে যোগ দেয়ার কয়েক মাস পরই ভোরের কাগজ ছাড়েন আবেদ সাহেব। নতুন কাগজ বের করার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তার বাবুল সাহেবের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়। মূসা সাহেবের পদত্যাগ আর আবেদ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলো। মুসা সাহেবের পদত্যাগের দিনই জানিয়ে দিলেন, আবেদ সাহেবকে আনবেন। আগে আমাকে না জানালেও মূসা সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণের দিন আমাকে আবেদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। রাতে ফোনে কথা বললাম আবেদ সাহেবের সঙ্গে। ঠিক হলো পরদিন সকালে হোটেল শেরাটনে বসব। যথারীতি আবেদ সাহেবের সঙ্গে আলোচনা হলো। বেতন-ভাতা ইত্যাদি নিয়ে কথা হলো। শেষ করে গেলাম বাবুল সাহেবের অফিসে। জানালাম সব। পরদিন আবার সেনাকল্যাণ ভবনে বাবুল সাহেব, আবেদ সাহেব, সালমা ইসলাম এবং আমি। সবকিছু ঠিকঠাক করে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। যোগদান শনিবার। একই দিন মূসা সাহেবের বিদায় সংবর্ধনা। বিষয়টি মোটামুটি গোপনই ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর গোপন রইলো না। কানাঘুষা থেকে সংবাদপত্রে খবর হয়। আবেদ সাহেবের সাক্ষাৎকারও মিডিয়ায় প্রচার হয়। তিনি জানিয়ে দেন যে, সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবারই যুগান্তরে সম্পাদক হিসাবে যোগদান করবেন। মূসা সাহেবের পদত্যাগপত্র তখন গৃহীত হয়ে গেছে আর আবেদ সাহেব সম্পাদক হয়েছেন। শনিবার একজনের বিদায় আরেকজনের যোগদান।বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হলো ১১টায়। আর যোগদান দুপুর ১টায়। বিদায় অনুষ্ঠানে মূসা সাহেব অভিভাবকসুলভ নির্দেশনা ও তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন। আবেদ সাহেব এরই মধ্যে বাবুল সাহেবের অফিসে এসে পৌঁছেন। মূসা সাহেব বিদায় নিলে তিনি আবেদ সাহেবকে নিয়ে আসবেন আমাকে এভাবেই জানানো হলো। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মূসা সাহেবকে বিদায় দিলাম। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই আবেদ সাহেবকে নিয়ে এলেন বাবুল সাহেব। যমুনা গ্র“প আর যুগান্তর অফিস তখন কাছাকাছি ছিল। আবার বৈঠক। সিনিয়র সাংবাদিক, কর্মচারী সবাই আছেন। বাবুল সাহেব বক্তব্য রাখলেন। আবেদ সাহেব বললেন, অনেক আশাবাদের কথা। দেখালেন অনেক স্বপ্ন। এবার যুগান্তরের কাণ্ডারি আমাদের আবেদ খান। আগেই বলেছি তার সঙ্গে ইত্তেফাকে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ইত্তেফাকে তিনি চিফ রিপোর্টার ছিলেন। চিফ সাব-এডিটর ছিলেন। সবশেষে সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাপরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ওপেন সিক্রেট’ কলাম লিখেছেন। এ কলামে তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা হতো। একসময় তিনি বিটিভি’র জনপ্রিয় উপস্থাপকও ছিলেন। নামকরা কলামিস্ট। সেই আবেদ খান দৈনিক যুগান্তরের তৃতীয় সম্পাদক। আমারও সম্পাদক। নতুন করে আবার যাত্রা শুরু। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হলো। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টির সুর। আমি জানি না আবেদ সাহেব যুগান্তর কর্তৃপক্ষকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষের কথায় মনে হয়েছে তিনি যা বলেছিলেন, যেভাবে বলেছিলেন যুগান্তর সেভাবে চলছে না। ব্যবসা, প্রচার বাড়ছে না। অবশ্য সে সময় সংবাদপত্র শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতিও ছিল প্রতিকূল। আবেদ সাহেব চেষ্টা করেছেন, আমরাও সবাই মিলে কাজ করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাক্সিক্ষত ফল আসছে না। এমন অনুযোগের মধ্যে চলতে থাকে কিছুদিন। বারবার সম্পাদক বদল পত্রিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যুগান্তরের সাংবাদিক কর্মচারীরা চান আর সম্পাদক বদল নয়। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেল অন্যভাবে। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবুল সাহেব আমাকে ফোন করে বললেন, সারওয়ার সাহেবকে আবার আনলে কেমন হয়? আমি বললাম, তিনি আসবেন? জবাবে বললেন, কাল সকালে আমার অফিসে আসেন। কথা আছে। খবরটা শুনে আমি নিজেই চমকে গেলাম। বাবুল সাহেব কথাটা এমনিই বলেছেন, না কোনো যোগাযোগের ভিত্তিতে? কিছু না থাকলে তো এভাবে তার বলার কথা নয়। আসলে আমরা যতই বলে আসছি আর সম্পাদক পরিবর্তন নয়, কর্তৃপক্ষ কিন্তু মনে মনে তা গ্রহণ করে নেয়নি। যদি গ্রহণ করতো তাহলে হঠাৎ করে বাবুল সাহেব সারওয়ার সাহেবের কথা বলতেন না। তারা নিজস্বভাবে হয়তো নতুন সম্পাদক আনার চেষ্টা করে থাকতে পারেন। এমন নানা কথা মাথায় ঘুরপাকের মধ্যেই সকালে গেলাম বাবুল সাহেবের অফিসে। তিনি আছেন। আর যথারীতি ছেলে শামীম ইসলাম। বাবুল সাহেব তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, তাড়াতাড়ি সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেখেন আসতে পারে। জানতে চাইলাম কীভাবে বুঝলেন? জবাব পেলাম, কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। তবে সরাসরি কথা হয়নি। এখন কথাটা আমারই বলতে হবে। আমার সাথে অনেকদিন সারওয়ার সাহেবের তেমন যোগাযোগ ছিল না। মাঝেমধ্যে প্রেসক্লাবে দেখা হলে সালাম বিনিময় ছাড়া বেশি কথা হতো না। বাবুল সাহেবের কথামতো রাতেই সারওয়ার সাহেবকে ফোন করলাম। রিসিভ করেই বললেন, কেমন আছো শাহজাহান? তোমার তো কোনো খবরই নেই। উত্তর দিলাম, আপনি ব্যস্ত থাকেন তাই ডিস্টার্ব করি না। আরও কিছু কথার পর বললাম, সারওয়ার ভাই আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। আপনি যদি সময় দেন তাহলে বাসায় আসব। তিনি বললেন, কাল আমি ব্যস্ত আছি, পরদিন।

সেদিন সম্ভবত মঙ্গলবার ছিল। আমরা তৃতীয় এক জায়গায় বসি। আমি নিজেই সারওয়ার সাহেবকে সরাসরি বললাম, কর্তৃপক্ষ রাজি হলে আপনি কি যুগান্তরে ফিরবেন। তিনি হ্যাঁ-না কোনো জবাব না দিয়ে কিছু কথা বললেন। আমি শুনলাম। জানালাম বাবুল সাহেবের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আবার বসব। পরদিন আবার বাবুল সাহেবের সঙ্গে বৈঠক। সব জেনে বাবুল সাহেব কিছু পরামর্শ দিয়ে বললেন, আপনি আবার কথা বলেন। পরে সারওয়ার সাহেবের সাথে বসব। এভাবেই সারওয়ার ভাইকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ বাবুল সাহেব, সারওয়ার সাহেব এবং আমি একসঙ্গে বসি। ছিলেন শামীম সাহেবও। আমার মনে হয়েছে শামীম সাহেবই সারওয়ার সাহেবকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা শেষে সিদ্ধান্ত হলো সারওয়ার সাহেব আবার যুগান্তরে যোগ দেবেন। নিজের মেধা, দক্ষতা ও শ্রমে গড়া প্রতিষ্ঠানেই ফিরে আসবেন। এখন আবেদ সাহেবকে কীভাবে কে বলবে? বাবুল সাহেব বললেন, আমিই বলব। সারওয়ার সাহেব কবে যোগদান করবেন তারিখ ঠিক করেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সারওয়ার সাহেব কয়েকদিন সময় নিয়ে যোগদানের তারিখ দিলেন। এরপরের ঘটনা আমার জানা নেই। এক সন্ধ্যায় আবেদ সাহেব এসে আমাকে ডেকে বললেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। আজই। তার বেতন-ভাতা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল, এ বিষয়টি যেন আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দিই। আমি বাবুল সাহেবকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করি। তিনি জানালেন, আবেদ সাহেব এসেছিলেন। তিনি পদত্যাগ করবেন বলেছেন। আমি বললাম, তিনি আজই পদত্যাগ করতে চান, তবে বেতন-ভাতা নিয়ে একটি সমস্যা আছে, এর আগে তার সমাধান চান। তিনি আমাকে বললেন, যেভাবে ভাল হয় আপনি সেভাবে ব্যবস্থা করেন। আবেদ ভাইয়ের কথামতোই সমস্যার সমাধান করা হলো। তিনি পদত্যাগ করলেন। তখন সন্ধ্যা ৭টা। নিউজ রুমে এলেন আবেদ সাহেব। দাঁড়িয়েই উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ছোট করে আবেগঘন বক্তব্য রাখলেন। পরে উপস্থিত সবার সাথে করমর্দন করে যুগান্তর থেকে বিদায় নিলেন।

(সুপ্রিয় পাঠক, সময়ের অভাবে যদি কেউ পূর্বের পোস্টকৃত কোন পর্ব পড়তে না পারেন, তাহলে ফেসবুকের এই আইডি থেকে অথবা বাংলাদেশ জার্নাল অনলাইনের ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরি থেকে ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি পড়তে পারবেন।)

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here