‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ১২)

0
120

শাহজাহান সরদার:
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

(পর্ব- ১২)

আবার এক দুপুর। শাহ আলম সাহেবের ফোন। জানালেন ভোরের ডাক বসুন্ধরার অধীনে আসছে না। কথা দিয়েও বেলায়েত সাহেব আসেননি। এখন কী করা যায়? শান্ত ও ধীরভাবে তিনি কথাগুলো বললেও মনে মনে ক্ষোভ লক্ষ্য করলাম। আমিও এমন খবরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। নিজেকে সামলে বললাম, ভোরের ডাক না এলে সমস্যা কী? নতুন কাগজ বের করলেই হয়। এ ধরনের একটি কাগজ সহজেই জনপ্রিয় করা সম্ভব। তিনি জানতে চাইলে বেতন-ভাতা কেমন লাগতে পারে। মাসিক ব্যয় কেমন ইত্যাদি। টেলিফোনে অনেকক্ষণ কথা হলো। শাহ আলম সাহেব স্বল্পভাষী। তিনি সব শুনলেন, কিন্তু আমাকে চূড়ান্ত করে কিছু বললেন না। জানালেন পরে আলাপ হবে। অবস্থা বোঝার জন্য তৎক্ষণাৎ আমি ফোন করলাম ভোরের ডাকের এক সাংবাদিককে। তার কাছ থেকে জানলাম, বসুন্ধরার সঙ্গে আজ বেলায়েত সাহেবের চুক্তিনামা হওয়ার কথা ছিল। কাগজপত্র সব তৈরি। শাহ আলম সাহেব অপেক্ষা করলেও বেলায়েত সাহেব যাননি। এমনকি টেলিফোন বন্ধ করে চুপ করে বসে আছেন। আর এদিক দিয়ে মগবাজার অফিস থেকে ইতোমধ্যেই কিছু মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর কিছু সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বেলায়েত সাহেবের অতি বিশ^স্ত কয়েক কর্মচারী ইতোমধ্যেই তোপখানার অফিসে কাজ শুরু করেছে। উল্লেখ যে, বসুন্ধরা গ্র“পের সহায়তায়ই তখন ভোরের ডাক চলছিল। ৮ পৃষ্ঠার কাগজ হিসাবে প্রচারসংখ্যা মোটামুটি ভাল ছিল। আমার দেওয়া নির্বাহী সম্পাদক ও নগর সম্পাদকই কাগজ চালাচ্ছিলেন। আধাঘণ্টার মধ্যেই আবার ফোন। এবার বসুন্ধরা গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান (আনভীর)। শাহ আলম সাহেবের ছেলে। তিনি ফোন করে জানতে চাইলেন আমি কোথায়? বললাম বাসায়। জিজ্ঞেস করলেন, গাড়ি রেডি আছে। বললাম আছে। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি বসুন্ধরায় চলে আসুন। জরুরি কাজ আছে। আমি বুঝলাম শাহ আলম সাহেব ছেলেদের সাথে আলোচনা করে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন আনভীর সাহেবকে। এই আনভীর সাহেব অ্যাকশনের লোক। তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পারদর্শী। আমি তৎক্ষণাৎ তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠি। গাড়ি পান্থপথের মাঝামাঝি। এবার নঈম নিজামের ফোন। জানতে চাইলেন, শাহজাহান ভাই, আপনি কোথায়? আমি বললাম পান্থপথে। তিনি বললেন, আমিও বসুন্ধরায় যাব। আমাকেও ফোন করেছেন। আমার সঙ্গে গাড়ি নেই, আমাকে নিয়ে যান। নঈম নিজামের অফিস তখন কারওয়ান বাজার। পরে জেনেছি একটি টিভি চ্যানেল করার বিষয় নিয়ে নঈম নিজাম আর পীর হাবিবের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্র“পের যোগাযোগ চলছিল। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তারা দু’জন একটি টিভি চ্যানেল করার জন্য আবেদন করেছিলেন। কারওয়ান বাজার থেকে নঈমকে তুলে গেলাম বসুন্ধরায়। তখন শেষ বিকেল। শাহ আলম সাহেব অফিসে নেই। আছেন তার ছেলে আনভীর সাহেব। অপেক্ষা করছেন। আমরা সোজাসুজি তার রুমে। সেখানে ছিলেন বসুন্ধরা গ্র“পের প্রেস উপদেষ্টা আবু তৈয়ব। তিনি আমাদের বিশেষ পরিচিত। আগে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরের পর যোগ দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্র“পে। নঈম আমাকে বলেছেন তিনিই তৈয়ব সাহেবকে বসুন্ধরায় দিয়েছেন। আমরা রুমে প্রবেশ করতেই আনভীর সাহেব কথা শুরু করলেন। বললেন, আমরা নতুন একটি পত্রিকা প্রকাশ করব। অফিস হবে মগবাজার। যে অফিসে ভোরের ডাক আছে। ভোরের ডাকের মালিক কথা দিয়েও কথা রাখেননি। তাই একই ধাঁচের নতুন একটি পত্রিকা প্রকাশ করব। আপনারা আজই মগবাজার অফিসে যান। যত দ্রুত সম্ভব পত্রিকা প্রকাশ করব। এই নতুন পত্রিকার সম্পাদক হবেন শাহজাহান সরদার এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নঈম নিজাম। কীভাবে কী করতে হবে আপনারা তড়িৎ ব্যবস্থা নিন। আর ভোরের ডাকের কেউ আমাদের সাথে থাকতে চাইলে আমরা তাকে নিব। সবাই এলে সবাইকে নিব। আপনারা সবাইকে জানিয়ে দেন। তিনি এই সময় বসুন্ধরা গ্র“পের এক নির্বাহী পরিচালক ফখরুদ্দিন সাহেবকে ডেকে আনলেন। আমাদের সবাইকে তিনি মগবাজার অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিদায় নিলেন। আগেই বলেছি, তিনি অ্যাকশনের লোক। অল্প কথায়ই মিটিং শেষ। এবার আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পালা। বসুন্ধরা থেকেই আমি ফোন করলাম ভোরের ডাকের তৎকালীন চিফ রিপোর্টার পথিক সাহাকে। তার কাছে খবরা খবর জানতে চাইলাম। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে ফোন করলাম মাহমুদ হাসানকেও। তিনি ভোরের ডাকে নগর সম্পাদক হিসেবে কিছুদিন আগে যোগদান করেন। আমারই নিয়োগ দেয়া। এখন বাংলাদেশ প্রতিদিনের উপ-সম্পাদক। তাকে বললাম, ভোরের ডাকের সব সাংবাদিক কর্মচারীদের জানিয়ে দিন বসুন্ধরা গ্র“প একটি নতুন পত্রিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ইচ্ছা করলে তারা নতুন পত্রিকায় যোগ দিতে পারেন। আমরা রাত ৮টার মধ্যে আসছি। বৈঠকে সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। মাহমুদ হাসান ও পথিক সাহা দু’জন সবাইকে জানিয়ে দিলেন। দু’একজন ছাড়া সবাই থেকে গেলেন মগবাজারে। বেলায়েত সাহেবের সাথে গেলেন না। রাতে সাংবাদিক কর্মচারীদের উপস্থিতিতে বৈঠক হলো। বৈঠকে বসুন্ধরা গ্র“পের উপদেষ্টা আবু তৈয়ব ঘোষণা করলেন যে, শাহজাহান সরদারের সম্পাদনায় বসুন্ধরা গ্র“প শীঘ্রই নতুন একটি পত্রিকা নিয়ে বাজারে আসছে। আপনারা সবাই থাকেন, বেতন-ভাতা নিয়মিত পাবেন। অসুবিধা হবে না। সবাই আশ্বস্ত হলেন। সেখান থেকেই আমি হয়ে গেলাম সম্পাদক। কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হতে গিয়ে আরেক পত্রিকার সম্পাদক। যথাশীঘ্রই নতুন পত্রিকা প্রকাশ করতে হবে। দায়িত্ব অনেক।

রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মগবাজার থেকে ফিরে এলাম বাসায়। অন্যরা আগেই চলে গিয়েছিলেন। তবে ফখরুদ্দিন সাহেব ও তৈয়ব সাহেব অধিক রাত পর্যন্ত ছিলেন। বাসায় এসেও পুরো রাত ঘুমাতে পারিনি। টেনশন। এত বড় দায়িত্ব, বড় চ্যালেঞ্জ, পারবো তো। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ছিল। কেননা রিপোর্টার থেকে যুগান্তরে গিয়ে সব বিষয়ে দেখাশুনা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অভিজ্ঞতা আমার ছিল। দৈনিক পত্রিকার আদ্যন্ত মোটামুটি জানা। তদুপরি সারাদেশের এজেন্ট এবং ঢাকার হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। আর সংবাদ নিয়ে তো সবসময়ই কাজ করেছি। খবর জেনে অনেকে রাতেই ফোন করেন। সহায়তা দেয়ার কথা জানালো। এতেও বেশ ভরসা পেলাম। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে অফিসে চলে আসি। কিছুক্ষণের মধ্যে নঈম নিজামও আসেন। মাহমুদ হাসান, পথিক সাহাও আসেন। আসেন রিপোর্টার, সাংবাদিক এবং কর্মচারীরাও। এরমধ্যে অনেককে দোদুল্যমান দেখা গেল। কেউ কেউ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন কী করবেন। আমরা বললাম, কোনো সমস্যা নেই শীঘ্রই কাগজ বের করব। সবাইকে আশ্বস্ত করে আমি আর নঈম নিজাম শাহ আলম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাই। পরিস্থিতি তাকে অবহিত করি। আমরা বললাম, যথাশীঘ্র সম্ভব পত্রিকা বের করতে হবে। তিনিও একমত হলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নতুন ডিক্লারেশন নিয়ে পত্রিকা বের করতে সময়ের প্রয়োজন। এত সময় আমরা নেব কি-না। আলোচনায় ঠিক হলো নতুন ডিক্লারেশন নয়, ডিক্লারেশন আছে এমন কোনো পত্রিকার মালিকানা কিনে নেয়ার ব্যবস্থা করব। এখন প্রশ্ন হলো, নামও পছন্দ হতে হবে। আর মালিকানা হস্তান্তরমূল্যও একটি সীমার মধ্যে থাকতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি পত্রিকা নিয়ে কথা হলো। শাহ আলম সাহেবও একটি পত্রিকার নাম বললেন। তিনি ড্রয়ার থেকে কাগজপত্রও দেন। কিন্তু এ নাম তারও পছন্দ নয়। আমাদেরও নয়। এরপর অন্য দু’টি পত্রিকা নিয়ে আলোচনা হলো। এর মধ্যে একটি পত্রিকার মালিক একজন ডেভলপার। এ পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন নাঈমুল ইসলাম খান। প্রথম অফিস ছিল ধানমন্ডিতে। আমার বাসার ঠিক পাশের ভবন। কিন্তু পত্রিকাটি প্রকাশের আগেই নাঈমুল ইসলাম খান বিদায় নেন। কিন্তু পত্রিকার মালিক সেই ডেভলপারই থেকে যায়। নাম ‘নতুন ধারা’। নঈম জানালো তার সাথে ওই মালিকের পরিচয় আছে।বৈঠকেই আমি বললাম, জানামতে আরও কয়েকজন এই নামটি কিনে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই ডেভলপার মালিক শুধু সময়ক্ষেপণ করেন। কাউকে দেননি। আমাদের যেহেতু সময় কম তাই বেশি সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। বিকল্পও রাখতে হবে। ডেভলপার মালিকের সাথে কথা বলার জন্য নঈমকেও দায়িত্ব দেয়া হলো। দু’দিন পর আবার আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে আসি। নঈম পরদিন ওই ডেভলপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাক্ষাতের সময়সূচি ঠিক করেন। আমরা নিয়মিত অফিসও করতে থাকি। বসুন্ধরা ও মগবাজারে রীতিমত যাতায়াতও চলে। অন্য নাম নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় নাম আলোচনায় আসে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। নতুন ধারা না হলে দ্বিতীয় নামটি নিয়ে অগ্রসর হব বলে আমি এবং নঈম আলোচনা করি। নির্ধারিত দিনে নঈম ঠিকই ডেভলপার মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করে পত্রিকাটি ক্রয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি মাঝামাঝি অবস্থানে থাকেন। আবার সময় দেন। আমি নঈমকে বলি ‘তুমি অযথা সময় নষ্ট করছ।’ দ্বিতীয়বার নঈম দেখা করার পরও চূড়ান্ত কিছু না হলে আমরা আবার শাহ আলম সাহেবের সঙ্গে বসে পুরো অবস্থা তুলে ধরি। ‘নতুন ধারা’ না হলে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ নিতে বলেন তিনি। ওই দিনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম একমাসের মধ্যে পত্রিকা বের করব। নঈম সম্ভবত পরদিন আবার নতুন ধারা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু এবারও কোনো সিদ্ধান্ত পেলেন না। এ অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনই’ নিতে হবে। এর মালিক আমাদের পরিচিত। তিনিও সাংবাদিক। রেজা রায়হান। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীর্তি বিষয়ে একসময় বেশ ভাল রিপোর্ট করতেন। দু’দিনের মধ্যেই শাহ আলম সাহেবের উপস্থিতিতে রেজা রায়হানের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হয়। তিনি মালিকানা হস্তান্তরে রাজি হন। তবে তার একটি দাবি। এই প্রতিষ্ঠানে তাকে চাকরি দিতে হবে। আমরা রাজি হই। পরদিনই রেজা রায়হানের সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়। এরপরের প্রক্রিয়া ছিল দুটি। একটি মালিকানা পরিবর্তন, অন্যটি সম্পাদক পরিবর্তন। দু’টি প্রক্রিয়ার জন্যই ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে আবেদন করি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিস থেকে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট দুটি দপ্তরে পাঠানো হয়। সাধারণত আমরা দেখেছি তদন্তে বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু আমরা যেহেতু একমাসের মধ্যে পত্রিকা প্রকাশ করব স্থির করেছি সেহেতু তড়িৎ কাজগুলো সম্পাদনের জন্য সচেষ্ট ছিলাম। তাই আমাদের বেলায় তত সময়ক্ষেপণ হয়নি। ২৫ দিনের মাথায় মালিকানা আর সম্পাদক পরিবর্তনের অনুমোদন পাওয়া গেল। মালিক ‘ইস্ট-ওয়েস্ট’ মিডিয়া আর ‘সম্পাদক’ আমি। ২০১০ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক হিসাবে যোগদান করি। যেদিন রেজা রায়হানের সঙ্গে আমাদের চুক্তিপত্র হয় সেদিন থেকেই আমরা পত্রিকা প্রকাশের প্রাথমিক কাজ শুরু করি। নেম প্লেট/মাস্ট হেড তৈরি, এজেন্টদের চিঠি দেয়া, বিজ্ঞাপনের জন্য চিঠি দেয়া, হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি চলতে থাকে। যে-কারণে নির্ধারিত সময়ের একমাসের মধ্যেই আমরা পত্রিকা বাজারে দিতে সক্ষম হই।

পত্রিকা বাজারজাত করার দু’দিন আগে শাহ আলম সাহেবের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। তখন কালের কণ্ঠ বাজারজাত শুরু হয়েছে। তিনি জানতে চান আমরা কত প্রচারসংখ্যা দিয়ে শুরু করব। এখানে বলে রাখি, আমরা এজেন্টেদের কাছ থেকে যে চাহিদা পেয়েছিলাম তা ছিল অস্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকার দু’টি হকার্স সমিতির প্রথম দিনের চাহিদা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল না। খুব কম চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের কিছুই বলিনি। আমাদের ধারণা ছিল দু’একদিনের মধ্যে তাদের অবস্থান পাল্টাবে। তবে ফ্লোটিং-এর চাহিদা ছিল অনেক। এসব মিলিয়ে প্রথম দিনই দেড়-লাখের মতো চাহিদা ছিল। সব হিসাব-নিকাশ করে প্রথম দিন একলাখ ছাপার জন্য শিডিউল ঠিক করেছিলাম। শাহ আলম সাহেবকে জানালাম। তিনি বিস্মিতই হলেন। প্রথম দিনেই একলাখ। আমি বললাম সমস্যা হবে না। বিক্রি হয়ে যাবে। আর বিক্রির জন্য আমরা একটি কৌশলও ঠিক করেছিলাম। তা বেশ কাজে লেগেছিল। যে-কারণে অন্য সংবাদপত্রের মতো ফেরত আসেনি। সবই বিক্রি। বাজারজাতের আগের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক এজেন্ট অফিসে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। হকার্স সমিতি প্রথম দিন পত্রিকা কম নিলেও নেতারা আগের রাতে ঠিকই এসেছিলেন। তারা আমাদের আয়োজন দেখে অনেকটা বিস্মিত হন। তাদের চাহিদা কম থাকলেও এত কাগজ ছাপা হচ্ছে তা যেন বিশ্বাস করতে চাননি।

প্রথম দিনই বাংলাদেশ প্রতিদিন বাজারে সাড়া ফেলে দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে দেশে হৈ-চৈ পড়ে যায়। চাহিদা বৃদ্ধির চিঠি, ফোন প্রতিদিনই আসতে থাকে। আর তিন দিনের মাথায় ঢাকার দুই হকার্স সমিতি চাহিদা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। চাহিদা যত বাড়তে থাকে আমরা ততটা পূরণ করতে সক্ষম ছিলাম না। কারণ প্রেস। আমাদের প্রেসে যে পরিমাণ ছাপার ব্যবস্থা ছিল তার চাইতে বেশি একমাসের মধ্যেই ছাপতে হয়। রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর ৮টা পর্যন্ত পত্রিকা ছাপা হচ্ছে। হকাররা সরাসরি অফিসে এসে পত্রিকা নেয়ার জন্য ভিড় করে। সংবাদপত্র শিল্পে এটি একটি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকপ্রিয়তা এবং বাজার বৃদ্ধিতে কর্তৃপক্ষও বেশ খুশি। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ নতুন প্রেস কমপ্লেক্স স্থাপনের কাজ শুরু করে। বসুন্ধরার ভেতরে বিশাল কমপ্লেক্স। শাহ আলম সাহেব জানালেন নিজেদের কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে আপনি ইচ্ছেমতো পত্রিকা ছাপাতে পারবেন। আর চাহিদা পূরণও সম্ভব হবে। ঠিক তাই হলো। প্রেস বসানো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৬ মাসের মাথায় আমরা তিন লাখ পত্রিকা ছাপা শুরু করি। তবুও চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এরই মধ্যে মগবাজার থেকে আমাদের অফিস বসুন্ধরায় স্থানান্তর হলো। এক কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ। এতদূর যেতে অনেকের মতানৈক্য থাকলেও উপায় ছিল না। কর্তৃপক্ষ একস্থানে সব অফিস রাখতে চান। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাই বড়। সবাইকে যেতে হলো। অনেকের বেশ কষ্ট। উল্টো দিকেই বেশিরভাগ সাংবাদিক-কর্মচারীর বাসা। বসুন্ধরা অনেক দূরে। এরপর যাতায়াতেও সমস্যা। আমারও একই সমস্যা। বাসা থেকে অফিসে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আর রাতে ফিরতে প্রায় দু’ঘণ্টা। কিন্তু উপায় নেই। চাকরি করলে অফিস যেখানেই হোক যেতেই হবে। বসুন্ধরায় অফিস যাওয়ার পর চাহিদামতো পত্রিকা সরবরাহ করতে আমরা চেষ্টা করি। শাহ আলম সাহেবকে পত্রিকার চাহিদা অব্যাহত বৃদ্ধির বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘দিতে থাকেন। আমি চাই দেশের প্রতিঘরে বাংলাদেশ প্রতিদিন পৌঁছুক।’ তার ইচ্ছাশক্তিও মনোবল দৃঢ়। কিন্তু বাস্তব হলো প্রতিঘরে কাগজ পৌঁছানো সম্ভব নয়। এত কাগজ ছাপা হলে বিপুল লোকসান গুনতে হবে। পত্রিকার মূল আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। ১২ পৃষ্ঠার পত্রিকায় এতবড় অংকের বিজ্ঞাপন আনা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। চাহিদানুযায়ী পত্রিকা দিতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন যেতে হবে সব বাড়িতে। যাহোক দেড় বছরের মাথায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সার্কুলেশন দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। উপমহাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এটি একটি বিপ্লব। এর মধ্যে বিজ্ঞাপনী আয়ও বেশ বাড়তে থাকে। প্রথম প্রথম আমরা এজেন্ট ও সমিতিকে কমিশন একটু বেশি দিলেও পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনি। যাতে দেড়বছরের মাথায় আমি ব্যক্তিগতভাবে হিসাব-নিকাশ করে দেখতে পাই, পত্রিকা এখন আর লোকসানে নেই। বরং কিছু লাভ হচ্ছে।

এখানে অবশ্যই বলতে হবে, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকাটি জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে এর সাহসী ভূমিকা। বিভিন্ন ব্রেকিং নিউজ, দুর্নীতি অনিয়মের খবর সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরা। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সংবাদ দিতে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং উৎসাহ যুগিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রকাশনার প্রথম দেড় বছর পর্যন্ত মন্ত্রী, এমপি, আমলারা তটস্থ থাকতেন কাকে নিয়ে কী লেখা হলো। সকালে উঠেই প্রতিদিন মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিকরা আগে দেখতেন বাংলাদেশ প্রতিদিন। একদিন প্রতিদিনেরই এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন একজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে বলেন, ‘আমরা ভীত থাকি, উদ্বিগ্ন থাকি। কখন কী লেখা হয় প্রতিদিনে। আমরা সব কাজ যে নিয়মের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে করতে পারি তা নয়, সম্ভবও নয়। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক ভুলত্র“টি হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন সেগুলোই কীভাবে যেন তুলে ধরে। বাংলাদেশ প্রতিদিন এমন অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছে যা অনেক সংবাদপত্রের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশে প্রতিদিনের যাত্রাকালে দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন ভোরের ডাকের সাংবাদিক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আরও কিছু উদ্যমী ও সৃষ্টিশীল তরুণ। তারা বিভিন্ন পত্রিকা থেকে আসেন। এদের মধ্যে আরিফুর রহমান একজন। প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশ হবার আগেই তিনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। উপ-সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আর আগে থেকেই ছিলেন মাহমুদ হাসান। তখন ছিলেন নগর সম্পাদক। এখন উপ-সম্পাদক। শান্তভাবে কাজ করেন, ভাল কপি দেখেন, এর আগে তিনি যুগান্তরের চিফ রিপোর্টার ছিলেন। চিফ রিপোর্টার ছিলেন পথিক সাহা। তিনি ভোরের ডাক থেকেই আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হন। আর রিপোর্টারদের মধ্যে নতুন পুরানো অনেকেই ভাল করেন। তবে মূল নিউজগুলো পরিকল্পনামাফিক করা হতো, বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে রিপোর্টারদের ব্রিফিং করলে তারা তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করতেন। ফিচার, বিনোদনও বেশ ভাল হয়। ভাল ভাল লেখকের লেখাও নিয়ে এসে ছাপানো হয়। সব মিলিয়ে ১২ পৃষ্ঠার ছোট পত্রিকা সত্যিকার অর্থেই বড় পত্রিকা হয়ে দাঁড়ায়।তবে একথাও সত্য, অতি সাহসিকতা, দুর্নীতি, অনিয়ম বিশেষ করে মন্ত্রী, আমলাদের সম্পর্কে নিউজ করতে গিয়ে আমরা কখনো কখনো সংবাদপত্রের রীতি-নীতি, সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, মন্তব্য নেইনি বা নিতে পারিনি। একতরফাভাবে কিছু কিছু নিউজ হয়েছে। আমার মনে হয়েছে এবং পরে প্রমাণও পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের দু’একজন সিনিয়র সাংবাদিক মালিককর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে এধরণের সুযোগ নিয়েছেন বলে শুনেছি। ব্যক্তিগত পরিচিত কাউকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আবার পছন্দ না হলে বনিবনা না থাকলে বিদ্বেষপূর্ণ খবর। কোনো সম্পাদকের পক্ষেই সব খবরাখবর দেখা সম্ভব নয়। তবে সব দায় সম্পাদকের। মামলা হয় সম্পাদকের বিরুদ্ধে। যা আমার বিরুদ্ধেও হয়েছিল। একটি সংবাদের জন্য শাহ আলম সাহেবের অনুরোধে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে আমাকে দুঃখ প্রকাশও করতে হয়েছিল। সেটাও ছিল এক সাবেক ছাত্রনেতা ও একটি বেসরকারি ব্যাংককে জড়িয়ে। বর্তমান আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। ওই নেতা বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। এই নেতার সঙ্গে স্রেফ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের অথবা অন্য কোনো কারণে সংবাদটি প্রকাশ হয়ে থাকতে পারে। এই ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক বেশ প্রভাবশালী। তিনি এই সংবাদটির জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের খোদ মালিকের কাছে নালিশ করেছিলেন। পরে মালিকের পরামর্শমতে পত্রিকায় দুঃখ প্রকাশ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়েছিল আমাকে। আমার সাংবাদিকতা জীবনে এমন দুঃখজনক ঘটনা কখনও ঘটেনি। মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়েছি। কিন্তু নিউজ প্রকাশের জন্য ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। কিন্তু যে বা যারা নিউজটি করল তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হলো না। ব্যাংকের ওই চেয়ারম্যান এবং বড় ব্যবসায়ী এতই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে, তাকে শান্ত করতে একজন রাজনৈতিক নেতাকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। ওই নেতার হস্তক্ষেপ ছিল শুধু আমার প্রতি তার ভালবাসার জন্য। আমরা যখন মালিকের পরামর্শে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তার কাছে যাই এই নেতাও সেখানে যান। যে সাবেক ছাত্রনেতা ও ব্যাংককে জড়িয়ে এমন সংবাদ হলো, কিছুদিনের মধ্যে তারই সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠলো বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঊর্ধ্বতন একজনের। অথচ এই একটি সংবাদের কারণে আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের মালিককে এই প্রথম দুর্বল হতে দেখেছি। তবুও তিনি কিছু বললেন না। সম্পাদক হিসাবে পত্রিকায় এবং ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করলেও এবং মালিক কর্তৃপক্ষ বিব্রত হলেও যিনি খবরটি করালেন তিনি ভালই থেকে গেলেন। কর্তৃপক্ষ জানলো না অথবা জানার চেষ্টাও করলো না। আমি এমন সব তথ্য জানলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সম্পাদক হিসেবে এসব আমাকে বেশ পীড়া দিয়েছে। বিশেষ করে আমি এমনও দেখেছি, পর পর কয়েকদিন কাউকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে, দুর্নাম করে তার সঙ্গে গভীর রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঊর্ধ্বতন কেউ কেউ ভোজের আড্ডায় মেতেছে। আবার এমনও হয়েছে, শুধু ব্যক্তিগত সখ্যের কারণে একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিষয় নিয়ে দেড়বছরে প্রায় অর্ধশতবার নিউজ করা হয়। সব বিষয়ে মালিকের দোহাই দেয়া হয়। এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললেই মালিকদের কথা বলা হত। নানা কারণে এসব সংবাদ প্রদানকারী বা প্রদানকারীদের দোহাইয়ের সত্যতাও যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে আমি দায়িত্বে থাকার সময় কয়েকদফা নিউজ হয়। আবার কিছুদিন পর সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। শুনেছি তাদের একজনের সাথে ওই কর্মকর্তার একটি বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে একটি তদ্বিরের প্রস্তাব ছিল। কর্মকর্তাটি সে কাজটি করেও দিয়েছিলেন। তাই পরে সব ঠিক হয়ে যায়। আমি একদিন সেই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার সাথে ওদের কী সমস্যা ছিল? কারণ আমি নিশ্চিত জানতাম, এতে মালিকের নির্দেশ ছিল না। জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করিয়ে দেয়ার জন্য তাকে একজন অনুরোধ করেছিলেন। এটা করতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই তাকে নিয়ে লেখালেখি করা হয়। পরে ওই কর্মকর্তা সে অনুষ্ঠানে ওই সাংবাদিককে সুযোগ করে দেন বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। এছাড়া তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে অনেক সংবাদ হয়। বিনয়ী ভদ্র হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।

মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে এবং ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে তার অনিয়ম ও ত্র“টি ছিল সত্য। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, তাকে নিয়ে এতবার লেখা হয়েছে শুধুমাত্র একজনের ব্যক্তিগত স্বার্থে। কেননা মন্ত্রীর এলাকার দলীয় এক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে জ্যেষ্ঠ এক সাংবাদিকের বেশ সখ্য। ওই ব্যক্তির নানা কার্যক্রম নিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক’দিন পরপরই সংবাদ ছাপা হতো। তথ্যমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য। তিনি আবার মালিক কর্তৃপক্ষেরও ঘনিষ্ঠ। আমার মনে হয়েছে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হয়তো ওই নিকটত্মায়ীকে দিয়ে পরে তদ্বির করিয়ে থাকতে পারেন। যে কারণে শেষদিকে তাকে নিয়ে লেখা বন্ধ হয়। তথ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা বন্ধের আগে মালিক কর্তৃপক্ষ আমিসহ ৫ সিনিয়র সাংবাদিককে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন। মালিক ওই নেতার সুপারিশের কথা জানিয়ে বলেন, এ হাউজ থেকেই ওই ব্যক্তির কাছে খবর গেছে। খবরটা কে দিতে পারে তা আমার কাছে সহজেই অনুমেয় ছিল। কেননা ওই প্রেসিডিয়াম সদস্যের সুপারিশেই কয়েকদিন আগে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক যোগ দেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র দুই সাংবাদিকের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয়। সম্পাদক হিসেবে এতে আমি ভীষণ বিব্রত। একজন বাইরে এক রেস্টুরেন্টে বৈঠক করে আরেকজনকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন বলে কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে। যা আমাকে জানানো হয়। অন্যজন অফিসে তার ঘনিষ্ঠ সরকারদলীয় প্রভাবশালীদের ডেকে আনেন। নিয়মিত বৈঠক করেন। দু’জনই পরস্পরের বিরুদ্ধে আমার কাছে নালিশ করেন। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। অথচ এ দু’জন দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে চলা-ফেরা করেছেন। আমি এসব সহজেই বুঝতে পারি। মালিকের কাছে ভাল থাকার জন্য যা যা করার তারা সব করার চেষ্টা করেছেন। এই যে বললাম, একজন মন্ত্রীকে নিয়ে কয়েকটি নিউজ করে সেই মন্ত্রী ও তার সহযোগীদের সঙ্গে নৈশভোজ করেছেন। কিন্তু কী এমন হল যে এখন হঠাৎ দু’জনের মধ্যে এত বৈরিতা। নিশ্চয়ই কোন স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত অনেক দূর গড়ায়। তারা দু’জন পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে মালিক আমাকে এক সন্ধ্যায় বাসায় ডেকে নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। আমি বললাম, আপনি দু’জনকে ডেকে কথা বলেন। তারা আগেও যা করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন সবক্ষেত্রে আপনাদের কথাই বলেছেন। বিভিন্ন জনকে নিয়ে সংবাদ ছাপার সময়ও তারা একই কথা বলেছেন। এখন আপনিই ডাকেন। দু’জনের কথা শোনেন, পরে সিদ্ধান্ত নেন। তাই হলো। পরের সন্ধ্যায় তাদের দু’জন এবং আমাকে ডাকলেন। দু’জনের কথা শুনলেন। এর মধ্যে একজনের পক্ষ হয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও সরকারি দলেন তৎকালীন একজন হুইপ। অন্যজনেরও সমর্থনে ছিলেন প্রভাবশালী এক মন্ত্রী। মালিক তার মতো করে সিদ্ধান্ত নিলেন। একজন পদত্যাগ করলেন। আরেকজন থেকে গেলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগলো। তবে এতসব ঘটনার মধ্যেও পত্রিকার প্রচারে কোন প্রভাব পড়েনি। কিছুদিনের মধ্যে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে আসে।

(সুপ্রিয় পাঠক, সময়ের অভাবে যদি কেউ পূর্বের পোস্টকৃত কোন পর্ব পড়তে না পারেন, তাহলে ফেসবুকের এই আইডি থেকে অথবা বাংলাদেশ জার্নাল অনলাইনের ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরি থেকে ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি পড়তে পারবেন।)

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here