‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ – (পর্ব- ২২)

0
80

শাহজাহান সরদার:
আমার লেখা ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি এই ‘করোনাকালের’ অবসরে ধারাবাহিকভাবে একদিন পর পর পোস্ট করা হবে। আশা করি আপনারা বইটি পড়ে দেশের সংবাদপত্র ও রাজনীতির ভেতরের অনেক খবর জানতে পারবেন।

(বইটি ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়)

(পর্ব- ২২)

হরতাল আর সমঝোতার উদ্যোগ এবং শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার

সেপ্টেম্বর ’৯৫। সরকারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সংসদে পদত্যাগকারী বিরোধীদলীয় সদস্যদের শূন্য আসনে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তবু মূল দাবি মেনে নেয়নি। এ-সময় বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে ৩০ দিন আগে সরকার পদত্যাগ করতে রাজি আছে। কিন্তু এ ৩০ দিনেও প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকবেন বেগম খালেদা জিয়া। তার অধীনেই সরকারি ও বিরোধীদলের ৫ জন করে মন্ত্রী নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো দাবি অগণতান্ত্রিক’, দাবি তারা মেনে নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় সরকারি দল। বিরোধীদল ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার ৭২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয়। এর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস রবিন র‌্যাফেল ঢাকা এসে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। গভীর রাতে বৈঠকের খবর আমি সংগ্রহ করি। ইত্তেফাকে পরদিন বিশদভাবে তা ছাপা হয়। রবিন র‌্যাফেল ঢাকা অবস্থানকালেই শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান প্রধান বিচারপতি অথবা সাবেক কোন প্রধান বিচারপ্রতির নেতৃত্বে ৩ মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানান। ১৩ সেপ্টেম্বর ’৯৫ সংসদের অধিবেশন সমাপ্তির পর আমি কয়েকজন সাংবাদিকসহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য জানার উদ্যোগ নিই। সংসদের যে ফটক দিয়ে খালেদা জিয়া বের হন আগেই তিনতলার লিফটের কাছে আমরা ক’জন গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। দূর থেকে তিনি আমাদের দেখেন। সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ এসএসএফ কর্মকর্তারা। আমি আর দু’জন এর মধ্যেই এগিয়ে যাই। এসএসএফ সদস্যরা এগিয়ে আসার আগেই প্রশ্ন করে ফেলি। বেগম জিয়ার পায়ের অসুস্থতা নিয়ে হাঁটছেন কষ্ট করে। তিনি সরাসরি কোন কিছুর জবাব না দিয়ে বললেন, সময়মত সব বলবো। ততক্ষণে এসএসএফ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ফেলে আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে আমি দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলে তিনি কিছু বলার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাসটা আন্দোলনে আন্দোলনে আর লাগাতার হরতালে কেটে যায়, টানা ৯৬ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়।

অক্টোবরে এসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড এস মেরিল আবার উদ্যোগী হন। কথা বলতে থাকেন বিভিন্ন জনের সঙ্গে। তবে ৯ অক্টোবর আকস্মিকভাবে দেশের বিশিষ্ট পাঁচ বুদ্ধিজীবী সমঝোতার অন্বেষণে নেমে পড়েন। অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ফখরুদ্দিন আহমদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ কামালউদ্দিন হোসেন, ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদ এবং ফয়েজ আহমদ টানা ৫ দফা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার ব্যর্থ প্রয়াস চালান। খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের সরাসরি বলে দেন ৩০ দিন আগে সরকার পদত্যাগ করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও বিএনপি’রই একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। এ ব্যাপারে আপোস নেই। এ-প্রস্তাব নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে এলে তিনি দলীয় নীতিনির্ধারকদের নিয়ে বসে তাদের বলেন, আপনারা আগে জেনে আসুন একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে বেগম জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চান কিনা। বুদ্ধিজীবীরা শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে জানতে চাইলে তিনি বলে দেন, ‘নিরপেক্ষ বলতে কিছু নেই। পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। নিরপেক্ষ বলতে আমি কিছু বুঝি না।’ ইত্তেফাকে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য ১৭ অক্টোবর ছাপা হয়। আমি বুদ্ধিজীবীদের একজনের সঙ্গে কথা বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিপোর্টটি পেয়ে যাই। রিপোর্ট প্রকাশের পর হৈ-চৈ পড়ে যায়। বিরোধী শিবিরে তুমুল উত্তেজনা। যদি নিরপেক্ষ বলতে প্রধানমন্ত্রী কিছু না বোঝেন তাহলে আলোচনায় কী হবে? তবে আমার এ রিপোর্ট সম্পর্কে কেউ কেউ বলতে থাকেন আমি বাড়িয়ে লিখেছি। কোন কোন সাংবাদিক বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একই কথা বলেন, সে বক্তব্যের রিপোর্টও আমি করেছি। যেসব সাংবাদিকের মনে সন্দেহ ছিল বেগম জিয়া এমন কথা বলতে পারেন না তাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে একদিন বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের বাসভবনে ছিলেন। সে সদস্য উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের সামনেই বলেন বেগম জিয়া স্পষ্ট তাদের বলে দিয়েছেন, ‘নিরপেক্ষ বলতে কিছু নেই।’

সমঝোতার উদ্যোগ আর হরতালের পর হরতালের মধ্যেই আমি ১৯ অক্টোবর ’৯৫ বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অ্যাপায়েনমেন্ট পাই। সেদিনও হরতাল ছিল। সকাল ১১টায় সময় নির্ধারণ হয়। আগের দিন বার্তা সম্পাদক সারওয়ার ভাইকে অনুরোধ করি তিনি যেন সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত থাকেন। তিনি রাজি হন। পরদিন যথাসময়ে সারওয়ার ভাই, আমি ও রিপোর্টার রেজানুর রহমান (বর্তমানে আনন্দ আলো সম্পাদক) শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবনে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই দোতলায় তার স্টাডি রুমে গিয়ে দেখি তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হরতাল সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঘরে তৈরি পিঠা দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করা হয়। এরই মধ্যে আসেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমদ। সাংবাদিক বেবী মওদুদও এ-সময়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ টুকটাক কথার পর সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করি। আমিই প্রশ্ন করি এবং উত্তর লিখি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপিকে আন্দোলনের মাধ্যমেই হঠাতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে।বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগ তখনও চলছে। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আলোচনার প্রস্তাব করে চিঠি পাঠান শেখ হাসিনার কাছে। ২৮ অক্টোবর রাত ১০টা ২০মিনিটে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ চিঠি নিয়ে বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে যান। মান্নান ভুঁইয়া চিঠি নিয়ে যাওয়ার খবর মুহূর্তেই সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আমি খবর পাই মান্নান ভুঁইয়া রওনা হওয়ার আগেই। সঙ্গে সঙ্গে আমি অফিস থেকে রওনা হই। সারওয়ার সাহেব নিজের গাড়ি নিয়ে আমাকে তড়িঘড়ি যেতে বললেন। আমি গিয়ে দেখি আজকের কাগজের একজন সাংবাদিক সেখানে হাজির। তিনি আগে থেকেই ছিলেন। দশ মিনিটের মধ্যেই বিভিন্ন কাগজের প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক হাজির হন শেখ হাসিনার বাসভবনে। আসলে চিঠি নিয়ে যাওয়ার আগেই সেনসেশনাল নিউজ হিসাবে মেকানিজমের মাধ্যমে খবরটি সাংবাদপত্র অফিসে রটিয়ে দেয়া হয়। সে-সময় সরকারপক্ষ এ খবরটির গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মনে করে। খালেদা জিয়ার চিঠি শেখ হাসিনা পেয়ে পরদিনই জবাব তৈরি করে দেয়ার জন্য উদ্যোগ নেন। তোফায়েল আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হয় শেখ হাসিনার চিঠিটি বেগম খালেদা জিয়ার হাতে পৌঁছে দিতে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানেন যে, প্রধানমন্ত্রী দেশের উত্তরাঞ্চলে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে চিঠি দেয়ার জন্য অ্যাপায়েনমেন্ট না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শেখ হাসিনার সহাকারী প্রেস সচিব নকিবউদ্দিন মান্নু চিঠিটি মান্নান ভুঁইয়ার বাসায় পৌঁছে দেন। খবর পেয়ে আমি রাত ১০টার দিকে মান্নান ভুঁইয়ার বাসায় পৌঁছি। তিনি তখন উপরে শুয়ে আছেন। নিচে এমপি আমানউল্লাহ আমান ও অন্য এক ছাত্রদল-নেতা অবস্থান করছেন। আমি নিচে থেকে টেলিফোনে উপরে মান্নান ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি চিঠি পেয়েছেন বলে জানান। অফিসে গিয়ে চিঠির জবাব পেয়ে যাই। আর বেগম জিয়ার প্রথম চিঠিটিও ফ্যাক্সে কে বা কারা আমার নামে পাঠিয়ে দেয়। তবে চিঠিটিতে অসংখ্য বানান ভুল থাকায় সেগুলো গোল চিহ্ন দিয়ে পাঠানো হয়। চিঠিটি আমার নামে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছিল। পরের দিন শুনেছি আমার নামের দৃষ্টি আকর্ষণের এ চিঠি বিভিন্ন সংবাদপত্রেও গিয়েছে। শব্দের মারপ্যাঁচ, একজনের চাইতে আরেকজনের বিনয়ী হওয়ার ভাষায় চিঠি চালাচালি চলতে থাকে কয়েকদিন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। চিঠি চালাচালির মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকে। ৬ নভেম্বর ’৯৫ সর্বশেষ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বিএনপি’র কোন নেতা ছাড়া অন্য কাউকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তিনি মেনে নেবেন না। ১১ নভেম্বর ৬ দিনের লাগাতার হরতাল শুরু হয়। একই দিন বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া আবার বলেন, নিরপেক্ষ কেউ আছেন বলে তিনি মনে করেন না। একই বৈঠকে বেগম জিয়া বুদ্ধিজীবী ফয়েজ আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘বিরোধীদল নমনীয় হতে পারে। তারা মুখ রক্ষার জন্য কিছু চায়।’ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সভায় এ আলোচিত সংবাদ আমি একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহজেই পেয়ে যাই। পরদিন ইত্তেফাকে এ খবর ছাপার পর আবার হৈ-চৈ। বিশেষ করে ফয়েজ আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে ব্যাপক হৈ-চৈ। ফয়েজ আহমদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগ সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে প্রতিদিনই কম-বেশি খবর পেয়েছি। তিনি যতটুকু খবর দেয়া সম্ভব তা আমাকে দিতেন। তিনি আমাদের অগ্রজ প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক (এখন জীবিত নেই)। তিনিও জানেন কতটুকুতে নিউজ হবে আর আমিও জানি কীভাবে নিউজে তা আনতে হবে। তাই তার সম্পর্কে বৈরীমূলক কিছু লেখা আমার দ্বারা সম্ভব ছিল না। আমি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেগম জিয়া কর্তৃক তার উদ্ধৃতি দেয়া অংশই লিখেছি। কিন্তু তিনি পরদিন একটি প্রতিবাদ লিপিতে জানান, প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের কথা তিনি বলেননি। তিনি প্রতিবাদ করলেও বিএনপি’র পক্ষ থেকে কেউ কিছু বলেনি বরং প্রতিবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আমি আবার দু’জন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। এভাবেই পাঁচ বুদ্ধিজীবীর উদ্যোগের পরিসমাপ্তি ঘটে। আর সরকারের পক্ষে দু’বার তারিখ নির্ধারণ করেও উপনির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস ২৪ নভেম্বর ’৯৫ দেশের ৫ম জাতীয় সংসদের বিলোপ ঘোষণা করেন। শুরু হয় নতুন সংকট। খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে শুরু করেন ট্রেন মার্চ। এদিকে নভেম্বর মাসের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে সকল দলের পূর্ণ অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মতবিরোধ নিরসনের বক্তব্য দেয়া হয়। সক্রিয় হয়ে ওঠে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতগণ। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অব্যাহত প্রয়াস চালাতে থাকেন। ডেভিড মেরিল সরকারি ও বিরোধী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা বলতে থাকেন। পরে ইতালি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারগণ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দফায়-দফায় সাক্ষাৎ করে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আবেদন জানান। তাদের সঙ্গে সংকট নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। এরই মধ্যে বিএনপি একদলীয়ভাবে নির্বাচন করে ফেলে ১৫ ফেব্র“য়ারি ’৯৬। নজিরবিহীন এ নির্বাচন। ভোটার ছিল না, কিন্তু বাক্স ভোটে ভর্তি হলো। বিএনপি, কর্মীদের প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার সীল মারার খবর ও ছবি জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। ভোটের দিন বিরোধীদলের ‘গণকার্ফু’ ছিল। রাস্তাঘাটে মানুষ ছিল না। তবুও নির্বাচন হয়ে যায়। আর্মি, বিডিআর ও পুলিশের প্রহরায় অনুষ্ঠিত একদলীয় নির্বাচন সংকটকে যেমন বাড়িয়ে তোলে তেমনি সমাধানের পথও খুলে দেয়। কেননা যে বিএনপি কোনদিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজি ছিল না, নিরপেক্ষ বলতে কিছু নেই বললেও তারা নিজেরাই একতরফাভাবে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে। এ বিলে নিরপেক্ষ সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে বিএনপি’র ক্ষমতার অবসান ঘটলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। সে নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। বেগম খালেদা জিয়া হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

(সুপ্রিয় পাঠক, সময়ের অভাবে যদি কেউ পূর্বের পোস্টকৃত কোন পর্ব পড়তে না পারেন, তাহলে ফেসবুকের এই আইডি থেকে অথবা বাংলাদেশ জার্নাল অনলাইনের ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরি থেকে ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’ বইটি পড়তে পারবেন।)

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে অর্ডার করুন #www.rokomari.com/utso
#www.porua.com.bd
#www.boimela.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here