সুশান্ত-মৃত্যুর তদন্তে এ বার ইডি, টানাপড়েন তুঙ্গে

0
96
সুশান্ত সিংহ রাজপুত

বাংলা খবর ডেস্ক:
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে কোনও আর্থিক কারচুপির গল্প লুকিয়ে রয়েছে কি না, তার অনুসন্ধানে নামল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সুশান্তের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছিল বিহার পুলিশ। সেই এফআইআরে ১৫ কোটি টাকার আর্থিক কারচুপির উল্লেখ ছিল। যার ভিত্তিতে শুক্রবার একটি ‘এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট’ (ইসিআইআর) ফাইল করে ইডি। সূত্রের খবর, মৃত অভিনেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে দেখার পরে আগামী সপ্তাহের গোড়া থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হবে।

সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করছে মুম্বই পুলিশ। কিন্তু দিন কয়েক আগে সুশান্তের বাবা কে কে সিংহের করা অভিযোগের পরে গত তিন দিন ধরে মুম্বইয়ে ঘাঁটি গেড়েছে বিহার পুলিশ। রিয়া ও তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে দু’টি সংস্থা খুলেছিলেন সুশান্ত। সেই সংস্থা দু’টির যাবতীয় লেনদেন খতিয়ে দেখছে বিহার পুলিশ। সূত্রের খবর, মুম্বই পুলিশের তদন্ত চলছে মূলত সুশান্তের পেশাগত জগৎকে কেন্দ্র করে। ১৪ জুন অভিনেতার মৃত্যুর পরে-পরেই তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা বলিউডের নানা ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং সুশান্তকে কাজ না-দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। মূলত সেই ধারাতেই এত দিন ধরে চলছে মুম্বই পুলিশের তদন্ত। কিন্তু সুশান্তের বাবার এফআইআরে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের স্পষ্ট অভিযোগ ছিল। যার পরে বিহার পুলিশ নিজে থেকেই তদন্ত করতে মুম্বই চলে আসে। বিহার পুলিশ এক্তিয়ার-বহির্ভুত কাজ করছে বলে দাবি করে মুম্বই পুলিশ তাদের কোনও সাহায্য করছে না।

একই ঘটনায় দু’টি রাজ্য থেকে দু’টি পৃথক এফআইআর দায়ের এবং দু’টি সমান্তরাল মামলা না-চালিয়ে প্রথম করা মুম্বই পুলিশের মামলাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হোক— এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন রিয়া। তিনি আরও জানান, তদন্তের প্রথম দিন থেকে তিনি মুম্বই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদনের বিরোধিতা করেছে সুশান্তের পরিবার ও বিহার সরকার। পরিবারের বক্তব্য, পটনায় থাকা সুশান্তের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেননি রিয়া। যার সুযোগ নিয়ে সুশান্তের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি। ফলে অপরাধের শুরু পটনাতেই। সুশান্তের পরিবার কেন এত দিন মুখ খোলেনি, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কিন্তু পরিবারের আইনজীবী বিকাশ সিংহ জানিয়েছেন, রিয়া যে সুশান্তের উপর প্রভাব খাটিয়ে তাঁর টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, এই অভিযোগ তুলে সুশান্তের মৃত্যুর আগেই মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তাঁর পরিবার। ৫ অগস্ট এই মামলার শুনানি হবে।

সুশান্তের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে নীতীশ কুমার সরকার। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী এ দিন টুইট করেন, ‘‘বিহারের পুলিশের তদন্তে বাধা দিচ্ছে মুম্বই পুলিশ। বিজেপি চায়, সিবিআই এই মামলার দায়িত্ব নিক।’’ দিন কয়েক আগে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ অবশ্য জানিয়েছিলেন, মুম্বই পুলিশ ঠিক মতো তদন্ত চালাচ্ছে। ফলে সিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট নির্দেশ না-দিলে উদ্ধব ঠাকরে সরকারের অনুমতি ছাড়া মহারাষ্ট্রে এসে তদন্ত করতে পারবে না সিবিআই।

আজ সারা দিন অবশ্য বিহার পুলিশের অফিসারেরা বিএমডব্লিউ, জাগুয়ারের মতো নানা বিদেশি গাড়ি চড়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শুধু দামি গাড়ি নয়, সূত্রের খবর, অটোরিকশাতেও ঘুরতে দেখা গিয়েছে বিহার পুলিশের কিছু কর্মীকে।

অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে, সেই রিয়া চক্রবর্তীর একটি ভিডিয়ো আজ একটা সংবাদ চ্যানেলে দেখানো হয়। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ২৮ বছরের অভিনেত্রী হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘‘ঈশ্বর এবং বিচারব্যবস্থার উপরে আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আমি জানি, আমি ন্যায়বিচার পাব। অনেকেই আমার নামে নানা কুৎসা রটাচ্ছেন। বিষয়টি বিচারাধীন বলে এ নিয়ে আমাকে কোনও রকম মন্তব্য করতে নিষেধ করেছেন আমার আইনজীবী। সত্যের জয় হবে।’’ আজই আবার, সুশান্তের মৃত্যুর ৪৫ দিন পরে, প্রথম মুখ খুলেছেন তাঁর প্রাক্তন বান্ধবী অঙ্কিতা লোখান্ডে। বৃহস্পতিবার রাতে পটনা পুলিশের কাছে রেকর্ড করা বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘সুশান্ত অবসাদগ্রস্ত ছিলেন এ কথা মানা সম্ভব নয়। সে আত্মহত্যা করার ছেলে নয়।’’ পরে একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ও। কখনও হাল ছেড়ে দিতে দেখিনি। সব সময়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা করত সুশান্ত। পাঁচ বছরের মধ্যে সব স্বপ্নপূরণ করত। সে এ ভাবে সব কিছু ছেড়ে চলে যাবে, বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here