গণভবনে প্রধানমন্ত্রী সাথে শ্রিংলার বৈঠক

0
99
ফাইল ছবি।

বাংলা খবর ডেস্ক:
দুই দিনের এক অনানুষ্ঠানিক (আন-অফিসিয়াল) সফরে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সফরকালে তিনি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নেবেন বলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। গতকাল রাতে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে ঢাকার বাইরে থাকায় তার সঙ্গে শ্রিংলার সৌজন্য সাক্ষাত্ হচ্ছে না।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় হঠাত্ কেন তার এই সফর, সেই বিষয়ে বাংলাদেশ বা ভারতের কোনো পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে আগে কোনো কিছু বলা হয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, করোনা পরবর্তী সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে আরো গতি আনা যায় তা খতিয়ে দেখতেই এই সফর। দিল্লি এই বার্তা দিতেই পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলাকে ঢাকা পাঠিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল দিক পর্যালোচনার জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের (জেসিসি) বৈঠক সহসাই অনুষ্ঠিত হবে। সুবিধাজনক সময়ে ভার্চুয়ালি এই বৈঠক হবে বলে সূত্রটি জানায়। সেখানে ভারতীয় আট বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঋণে (এলওসি) বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সৌজন্য সাক্ষাত্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত ১০টি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন প্রদান করায় ধন্যবাদ জানান। দুই দেশের মধ্যে রেল চলাচল করছে। সহসাই কেবল দুই দেশের বিমান যোগাযোগ চালু হবে। করোনার কারণে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও কীভাবে তা শুরু করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, তিনি শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে এসেছেন। গত মার্চে মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী পর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদান করোনার কারণে স্থগিত করতে হয়। তবে ভার্চুয়ালি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে সফর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী দুই দেশ যৌথভাবে উদ্যাপন করবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সহযোগিতামূলক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শ্রিংলার সাক্ষাত্কালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক ইস্যু ছাড়া আঞ্চলিক কোনো ইস্যু উত্থাপিত হয়নি। কানেকটিভি, বাণিজ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো এগিয়ে নিতে আলোচনা হয়।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সফর ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফর আকস্মিক নয়। এটি নিয়মিত সফর। তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে সে হিসেবে কমই হয়েছে। সব সময় আলোচনায় সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি থাকে। তবে এবার কোভিড-১৯ নিয়ে সহযোগিতার বিষয়টি থাকছে। তিনি বলেন, ভারতে এখন করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা কে কোন পর্যায়ে আছি সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, গত ছয় মাসে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ট্রান্সশিপমেন্ট ও রেলওয়ের সহযোগিতা ত্বরান্বিত হয়েছে।

শ্রিংলার সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু আসবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, হতে পারে। ভারত এই ইস্যুতে আমাদেরকে সহযোগিতার কথা বলে আসছে। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করছে যাতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন হতে পারে। এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইতে পারি।

পররাষ্ট্রসচিব মোমেন আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীর। এ সম্পর্কের যত্ন নেওয়া দরকার হয় যাতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। এছাড়া সম্প্রতি ভারতের কিছু গণমাধ্যমে কাল্পনিক খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হবে যাতে সম্পর্কে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয় সেই চেষ্টা থাকবে।

যদিও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, ভারতের আগ্রহের কারণেই এই সফরটি হচ্ছে।

বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের যুগ্ম সচিব স্মিতা পন্ত।

এদিকে শ্রিংলার সফর নিয়ে গতকাল ভারতের ‘টাইমস নাও নিউজ ডটকম’ এর এক খবরে বলা হয়েছে, দুই দিনের সফরে ঢাকায় গেলেন পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। করোনা মহামারি শুরুর পর এটিই তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। টাইমস নাও’য়ের ন্যাশনাল এডিটর শ্রীঞ্জয় চৌধুরী বলেন, করোনাকালে দুই দেশের জোরালো সম্পর্কের বিবেচনায় এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন। করোনাকালে সহযোগিতার মতো ইস্যু এই আলোচনায় থাকবে। চীনের ইস্যুও আরেকটি ইস্যু হতে পারে। লাদাখের নেতৃত্ব নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব সেখানে আলোচনা করবেন। দ্বিপাক্ষিক ইস্যুও আলোচনায় থাকবে।

দ্য প্রিন্ট্র অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, চীন যখন বাংলাদেশকে আগ্রাসিভাবে সহায়তা দিচ্ছে তখন মোদি সরকার তড়িঘড়ি করে পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলাকে ঢাকা পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, এই বৈঠক খুবই তাত্পর্যপূর্ণ এবং লক্ষ্য হলো সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। কারণ বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক অনেক বেশি উষ্ণ হয়েছে। অন্যদিকে গত বছর থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা টান টান অবস্থা তৈরি হয়েছে।

ঐ খবরে বলা হয়েছে, তিস্তা নদী প্রকল্পে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার (৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) পাচ্ছে এমন ঘোষণার পটভূমিতে শ্রিংলার এই আকস্মিক সফর। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু। ২০১৫ সালের সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে শিগিগরই এর সমাধান হবে। যাহোক এক্ষেত্রে অগ্রগতি কমই হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারত সরকার চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে। ঐ খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) করার পর থেকে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে বিশেষভাবে ‘টানাপোড়েন’ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here