বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস মহামারি কমিয়ে আনতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে নিউ ইয়র্কে। মেয়র বিল ডি ব্লাসিও সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের ঢেউ থামানোর জন্য এটাই হলো শেষ সুযোগ। এর অধীনে রাত ১০টা থেকে অবশ্যই সব বার, রেস্তোরাঁ এবং জিম বন্ধ করতে হবে। ১০ জনের বেশি মানুষ একত্রিত হতে পারবেন না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ৬১ হাজার ৯৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। এ অবস্থায় সেখানে করোনা সংক্রমণ আবার তীব্র হচ্ছে বলেই মনে করা হয়। করোনা ভাইরাসে গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন কমপক্ষে ৯০০ মানুষ।
নভেম্বরে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক লাখ। সেই সংখ্যা মিলে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩২ জন। গত ১০ দিনে সেখানে গড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি শীতে আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্কতা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই বলে যে, হাসপাতালগুলো খুব শিগগিরই তার সক্ষমতা ছাড়িয়ে যেতে পারে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোভিড-১৯ উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য বুধবার বলেছেন, চার থেকে ছয় সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হতে পারে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে। তিনি হলেন মাইকেল ওস্টারহোম । তিনি বলেন, শাটডাউনের সময় ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকার প্রচুর অর্থ ধার করতে পারে।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যানড্রু কুমো বুধবার বলেছেন, জাতীয় ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে করোনার বিস্তার দেখতে পাচ্ছি আমরা। করোনা জোয়ারের মধ্যে নিউ ইয়র্ক হলো একটি জাহাজের মতো। যদি নতুন করে সংক্রমণের হার অব্যাহতভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে মেয়র ব্লাসিও বলেছেন, নিউ ইয়র্ক সিটির সরকারি সব স্কুল বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। তখন শিশুরা অনলাইনে ক্লাস করবে। তিনি এক টুইটে বলেছেন, দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ রোধ করতে এটাই আমাদের জন্য শেষ সুযোগ। আমরা এটাকে থামিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমাদেরকে এখনই এর জন্য কাজ শুরু করতে হবে।
উল্লেখ্য, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে নিউ ইয়র্ক সিটিতে আঘাত হানে করোনা ভাইরাস। মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে সেখানে মারা গেছেন প্রায় ১৮০০০ মানুষ। অন্য রাজ্যগুলোতে এ সপ্তাহে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড গড়েছে। ১০ই ডিসেম্বর প্রথম ১০ লাখ আক্রান্তের রাজ্যে পরিণত হয় টেক্সাস। যদি এই রাজ্যটি একটি আলাদা দেশ হতো তাহলে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের তালিকায় তারা হতো ১১তম দেশ। এ ছাড়া ইলিনয়, উইসকনসিন, মিনেসোটা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ফ্লোরিডা সহ বিভিন্ন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিবিএস নিউজ বলছে, ১৫টি রাজ্যে গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। ইডাহো এবং মিসৌরির মতো রাজ্যগুলোতে অনেক হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে। উইসকনসিন এবং নেভাদার জনসাধারণকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। মিনেসোটায় রাত ১০টার পর সব বার ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায় সংক্রামক ব্যাধি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ওস্টারহোম। তিনি বলেছেন, জাতীয় পর্যায়ে লেবার ডে-এর পর নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজারের মধ্যে। দিনে দুই লাখ আক্রান্ত হলেও আমাদের বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তবে একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক প্রধান ড. অ্যান্থনি ফাউচি কিছু ভাল খবর শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে বা এর কাছাকাছি সময়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ফাইজারের করোনা ভাইরাসের টিকা অনুমোদন দেয়া হতে পারে। এই টিকা এরই মধ্যে মানুষের জন্য শতকরা ৯০ ভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি