দেশে করোনায় প্রাণ গেল আরো ২৭ জনের

0
81

বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৯৩২ জন।

সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রপাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৯৩২ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৭ জনকে নিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৪৭৯ জন।

এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৩৫৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ হয়েছেন মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৮ জন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রব শুরু হয়। এটি বর্তমানে বিশ্বের ২১৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ১১ মার্চ কোভিড ১৯-কে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

লন্ডন থেকে এলেই বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন

যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এলে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।


শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, লন্ডন থেকে যেই আসুক, তার যদি করোনা রিপোর্ট নেগেটিভও থাকে, তারপরেও তাকে অবশ্যই ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাজধানীর দিয়াবাড়ী ও হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে ব্যবস্থা আছে। অথবা নিজস্ব খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

আরও এক সপ্তাহ সৌদিতে প্রবেশ বন্ধ

ওদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবে আকাশ, সড়ক ও নৌপথে বাইরের দেশ থেকে মানুষের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে; এই সিদ্ধান্ত আরও এক সপ্তাহ কার্যকর থাকবে।

স্থানীয় সময় সোমবার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় বলে সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, কয়েকটি দেশে সম্প্রতি করোনার যে নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়েছে; তারই নিয়ন্ত্রণে দেশে বাইরের দেশ থেকে মানুষের প্রবেশ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর এক সপ্তাহ সৌদিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। সড়ক পথ ও নৌপথের জন্যও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার।

বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে, সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও এই সময়ের মধ্যে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতি প্রয়োজনীয় ফ্লাইট চালু থাকবে। সৌদির বাসিন্দা নন- এমন মানুষের সৌদি ত্যাগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

আরব নিউজ বলছে, ৮ ডিসেম্বরের পর ইউরোপ বা করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো থেকে যারা সৌদিতে প্রবেশ করেছেনে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

গত তিন মাসের মধ্যে যারা ইউরোপের কোনও দেশ থেকে বা এই পথে সৌদিতে প্রবেশ করেছেন তাদের প্রত্যেককে করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বে শনাক্তের সংখ্যা ৮ কোটি ১১ লাখ ছাড়িয়েছে

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা আট কোটি ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আট কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার ১১৩। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৮৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে পাঁচ কোটি ৭২ লাখ ৯১ হাজার ২১৮ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। এরইমধ্যে করোনার টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৭। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৪১ হাজার ১৩৮ জনের।

আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি দুই লাখ আট হাজার ৭২৫। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৮৫। এর মধ্যে এক লাখ ৯১ হাজার ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯৭৬। এর মধ্যে চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’

মহামারির শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছিল, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই দাবিকে আরও জোরালো করে চীনের উহানের ল্যাবের এক ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ানের বক্তব্য। লি মেং ইয়ান বলেন, চীনের ল্যাবেই তৈরি করা হয়েছে করোনাভাইরাস। এটি মানুষের তৈরি বলে তার কাছে শতভাগ প্রমাণ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here