অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

0
77
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: ফোকাস বাংলা

বাংলা খবর ডেস্ক:
দেশের এগিয়ে চলা এবং চলমান উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে। এটা যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’

সরকারের দুই বছরপূর্তি এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে হবে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী-মর্যাদাশীল দেশ। প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা পথনকশা তৈরি করেছি। রূপকল্প ২০৪১-এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি আমার ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এর আগে ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’’

সরকার প্রধান দেশকে এগিয়ে নিতে তার দৃঢ় সংকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘উন্নয়নের পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। কিছু অসাধু মানুষ নানা কৌশলে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন, আমরা তা করবো। আমরা কঠোরহস্তে জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করেছি।’

সরকার পরিচালনার দায়িত্বকে জনগণের দেওয়া পবিত্র আমানত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং উপর্যুপরি বন্যা আমাদের অর্থনীতির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে এখনও সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার অনেক কম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখার। আশার কথা, বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও আমরা দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছি। টিকা আসার পর পরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার সংকট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা মোট জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ। এটা এখনও অব্যাহত আছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় আড়াই কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আমরা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তার আওতায় এনেছি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ দেশবাসীর সহায়তায় করোনাভাইরাস সফলভাবে মোকাবিলা হচ্ছে উল্লেখ করে এ ধরনের যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও জনগণকে পাশে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সরকার প্রধান উল্লেখ করেন, করোনার ছোবল সত্ত্বেও গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭.৪ শতাংশে। ২০২০-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এ মেয়াদে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৪ শতাংশে নেমে আসবে। শেষ বছর ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮.৫১ শতাংশে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর এই স্বপ্নের সেতু যানবাহন এবং রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানো হয়েছে। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ এই ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ৬২ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।’

শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির স্মরণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। বিদ্যুতের অভাবে মানুষের জীবন ছিল দুর্বিষহ। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পায়রাতে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী ও মাতারবাড়িতে আরও মোট ৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পল্লি এলাকায় ৬৩ হাজার ৬৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩ লাখ ৭৬ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট, ১ হাজার ৬৮৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ৯৩৬টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ২৪৯টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০টি। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৩৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। বিমান এয়ারলাইন্সের বিমানবহরে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং এবং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। গত মাসে ১টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। চলতি মাসে আরও ২টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংযোজিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, সারা দেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২.৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। ৫-বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনূর্ধ্ব ১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘অনলাইনে এবং স্কুল পর্যায়ের জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে।’

তিনি জানান, দেশের ৭ হাজার ৬২৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রতিমাসে ২৭৬ কোটি টাকা বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে নতুন করে ৪৯৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ১ হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৪ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে ত্রৈমাসিক ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। দাওরায়ে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স সমমান দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।

এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘তার সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই এই ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন সুবিধা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন।’

তিনি জানান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, চা শ্রমিক, বেদে সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীসহ দুরারোগ্য ব্যক্তিদের চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে সর্বমোট ৬ হাজার ৫২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ ৫০ হাজার।

সরকার প্রধান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রত্যেকে ২ শতাংশ খাসজমি বরাদ্দসহ ৬৫ হাজার ৭২৬টি ঘর তৈরির কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৪ হাজার গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ইউনেসকো সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি পুরস্কার চালু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতেও দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার।’ এ লক্ষ্যে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্য পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। পথ যত কঠিনই হোক, লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। জাতির পিতার বক্তব্য মেনে আমরা যদি একটু কষ্ট করি, একটু বেশি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে এ দেশ অবশ্যই সোনার বাংলায় পরিণত হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে আসুন আমরা নতুন করে শপথ নেই—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শকে ধারণ করে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’’

করোনাভাইরাসের এই অমানিশা দ্রুত কেটে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানের মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here