জোরালো হচ্ছে ট্রাম্পকে বিতাড়নের দাবি

0
66

বাংলা খবর ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়নের দাবি জোরালো হচ্ছে। বুধবার ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার পরই এই দাবি উঠেছে। কেউ দাবি জানাচ্ছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে উদ্যোগী হতে। আবার কেউ ট্রাম্পকে অভিশংসন করার দাবি জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যালঘিষ্ঠদের নেতা ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ক্যাপিটল ভবনে গতকাল (বুধবার) যা ঘটেছে, তা প্রেসিডেন্টের উসকানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এই প্রেসিডেন্টের আর এক দিনও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।’

নিউইয়র্কের এই সিনেটর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা একমত হয়ে তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেন। চাক শুমার বলেছেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা যদি পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে কংগ্রেসের উচিত প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার উদ্যোগ নেওয়া।’

ইলিনয় থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যাডাম কিনজিঞ্জারও ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই বিভীষিকাময় অধ্যায়ের সমাপ্তি টানতে ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করার এখনই সময়। প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অযোগ্য। তিনি অসুস্থ।’

এ ছাড়া প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট সদস্য ইলহান ওমর ও আলেক্সান্দ্রিয়া অকাসিও কর্তেজের নেতৃত্বে একদল আইনপ্রণেতা পৃথকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব আনতে প্রস্তুত।

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা:

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয় অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা। তার আগে যৌথ অধিবেশন চলকালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা দেশটির কংগ্রেস ভবনে হামলা চালায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। তবে বুধবার দেশটির পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলার পর অনেক মার্কিনির কাছেই এই ১৩ দিন অনেক বেশি দীর্ঘ মনে হতে পারে। কারণ, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প যেকোনো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২২০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন ‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ আচরণ তাঁর ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে হোয়াইট হাউসে বড় ধরনের একটি সংকট তৈরি করেছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘অতি অনুগত’ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ফাটলে এই সংকট যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের আগমুহূর্তে বিবৃতি দিয়ে পেন্স জানান, নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফল আটকে দিতে পেন্সকে চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে একটি ‘কালো দিন’ রচনা করে এবং পরাজয় স্বীকার না করে গণতন্ত্রকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে ট্রাম্প হঠাৎ করেই নিয়মানুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।

তবে ট্রাম্পের হঠাৎ এ অবস্থান পরিবর্তনে অনেকেই আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁদের কেউ কেউ ভাবছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছেন, তা যতটা না দায়িত্ববোধ থেকে, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিস্বার্থ থেকে। সম্ভবত হোয়াইট হাউসে কর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক এবং অভিশংসন অথবা মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করা ঠেকাতেই তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সংবিধানের এ সংশোধনীর ৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রেসিডেন্ট যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সিংহভাগ একমত হয়ে প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চোখ রাখতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর:

মার্কিন ইতিহাসবিদ ডগলাস ব্রিঙ্কলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, শৃঙ্খলাহীন ও ক্ষুব্ধ একজন প্রেসিডেন্ট পরবর্তী দুই সপ্তাহে যেকোনো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চোখ রাখতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর। কারণ, তিনি অসংযত আচরণ করছেন।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলার ঘটনায় ভীতিকর এক সত্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আর তা হলো ‘উন্মাদ’ এক প্রেসিডেন্ট জাতীয় আইনসভার ওপর হামলার পট রচনা করেছেন। তিনি রাজনৈতিক বিভেদের ক্ষত এতটাই গভীর করেছেন যে তাঁর বিদায়ের দীর্ঘদিন পরও তা রয়ে যাবে।

ওয়াশিংটনের পুলিশ বিভাগের সাবেক প্রধান চার্লস রামসের ভাষায়, বুধবারের ঘটনাটি অভ্যুত্থানচেষ্টার মতোই, যা যুক্তরাষ্ট্র এর আগে কখনো দেখেনি।

আর নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ টিমোথি নাফটালি বলেছেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের সোনালি সুতাটি ছিঁড়ে ফেলেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা টিকিয়ে রেখেছে এত দিন। তিনি বলেন, ‘আজ (বুধবার) আমাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছেন।’

বুধবারের ঘটনার সূত্রপাত ট্রাম্পের সমাবেশ থেকে। এ সমাবেশে তিনি সমর্থকদের প্রতি ক্যাপিটল ভবনে পদযাত্রার আহ্বান জানান। এরপরই ওই সমর্থকেরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা। কিন্তু বিষয়টি শেষ পর্যন্ত ওই পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ট্রাম্পের সমর্থকেরা ক্যাপিটল ভবনের দরজা–জানালা ভাঙচুর করেন, প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট অধিবেশন কক্ষে ঢুকে পড়েন। গুলি, সংঘর্ষ, প্রাণহানি—সবই ঘটেছে এদিন। অনেকেই বলছেন, বুধবারের ঘটনাটি ছিল ট্রাম্পের অভ্যুত্থানচেষ্টা।

অবশ্য কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন শেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। এর কিছু পরই ট্রাম্প একটি লিখিত বিবৃতি দেন, যাতে তিনি ২০ জানুয়ারি নিয়ম মেনে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেন। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ থেকে সরে আসেননি তিনি। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের মেয়াদের উজ্জ্বলতম প্রথম অধ্যায় শেষ হচ্ছে। তবে এখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে মহান করার লড়াইয়ের শুরু।’

ট্রাম্প যুগের সমাপ্তি আসন্ন হলেও শেষ এই কটা দিন নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়ের। কারণ, ট্রাম্পের মানসিক স্থিতিশীলতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে এখন। তাঁর উসকানি দেওয়ার প্রবণতার কারণেই ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর টুইটার, ফেসবুক ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিজেদের প্ল্যাটফর্মে তাঁকে নিষিদ্ধ করেছে।

এদিকে হোয়াইট হাউসের ভেতরে বুধবার রাতটা কেটেছে ট্রাম্পের ক্ষোভে ফেটে। ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টিকে এখন তিনি দেখছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে। এদিকে রিপাবলিকান সূত্র বলেছে, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন বুধবার। এ ছাড়া প্রতিনিধি পরিষদে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য ট্রাম্পকে অভিশংসনেরও দাবি তুলেছেন। বুধবারের সংকট কাটলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন, ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ একজন প্রেসিডেন্ট যেকোনো মুহূর্তে আবার কোনো সংকটের জন্ম দেবেন। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, ‘তিনি পাগল হয়ে গেছেন।’

ট্রাম্পের ক্রমাগত উসকানির ফল এ হামলা:

নির্বাচনের আগে-পরে তাঁর আচরণ ছিল অসংযত। ভোটের ফল তাঁর পক্ষে না এলে তিনি যে তা মানবেন না, তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মানেনওনি। এমনকি গতকাল জর্জিয়ায় সিনেট নির্বাচনে নিজের দুই প্রার্থী হেরে যাওয়ার পরও তা মানতে চাননি। আর এরপর যা হলো, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক কৃষ্ণ অধ্যায়।


খোদ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ রিপাবলিকান পার্টির অনেক বড় নেতার মুখেই শোনা গেল এ কথা। ঠিক সেই হামলার সময় উগ্র সমর্থকদের ফিরে যাওয়ার কথা বলেও অত্যন্ত স্বচ্ছ এ নির্বাচন নিয়ে বিষোদগার করছিলেন। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে গতকাল বুধবার নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটল।

আর এই ঘটনার পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই উসকানি। কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ক্রমাগতভাবে গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিজ সমর্থকদের কান ভারী করে আসছিলেন। উসকানির চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর শত শত উগ্র সমর্থক মার্কিন গণতন্ত্রকে প্রতিনিধিত্ব করা ওই ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ করে একপর্যায়ে হামলাই করে বসলেন।

নির্বাচনে স্পষ্ট ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু হার মানতে নারাজ তিনি। তাঁর দাবির সপক্ষে মিছিল নিয়ে গতকাল ওয়াশিংটনে আসতে তিনি কয়েকবার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে যৌথ অধিবেশন বসে কংগ্রেসের।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ ডিসেম্বর এক টুইটে লেখেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে ২০২০-এর নির্বাচনে হার মেনে নেওয়াটা অসম্ভব। ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় বিক্ষোভ। সেখানে আসুন। ঝোড়ো বিক্ষোভ হবে!’
প্রেসিডেন্টের কথামতো ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তাঁর হাজারো সমর্থক। তাঁরা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও ফলাফল বাতিলে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ট্রাম্পের ক্যাপিটল ভবন অভিমুখে মিছিল করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

এর আগে হোয়াইট হাউসে দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ক্যাপিটলে যেতে চলেছি। সেখানে আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও উইমেনদের সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করব।’

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দৃশ্যত এটি ছিল ট্রাম্পের সর্বশেষ জনসভা। সেখানে উপস্থিত হওয়া সমর্থকদের তিনি ‘লড়াইয়ে’ উৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা কখনো হাল ছাড়ব না, কখনো পরাজয় মানব না।’ ডেমোক্র্যাটদের বিজয়কে বাজে কথা বলে আখ্যায়িত করে সমর্থকদের উজ্জীবিত করে তোলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সমর্থকেরাও ‘বাজে কথা, বাজে কথা, বাজে কথা’ বলে স্লোগান দেন।
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ভন্ডুল করতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তাঁর এই চেষ্টায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মিথ্যা দাবি ছড়িয়ে সহায়তা করেছে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (চুরি বন্ধ করো)-এর মতো কয়েকটি গ্রুপ।

এসব চেষ্টার চূড়ান্ত রূপ গতকালের হামলা, সহিংসতা। সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প প্রায় ৫০ মিনিট বক্তৃতা দেন। বক্তৃতা চলাকালেই কোনো কোনো সমর্থক দলীয় পতাকা উড়িয়ে ক্যাপিটল হিলের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

পরে ট্রাম্পের উত্তেজিত সমর্থকেরা মিছিল করে ক্যাপিটল ভবনে জড়ো হন। পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে ঝোড়ো গতিতে একেবারে ভবনের ভেতর আইনপ্রণেতাদের অধিবেশনকক্ষে ঢুকে পড়েন। তাঁদের তাণ্ডবে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় যৌথ অধিবেশন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা সরিয়ে নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও অন্য কংগ্রেস সদস্যদের। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। রাত নেমে এলে ক্যাপিটলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তখনো ভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন এই সমর্থকদের অনেকে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন কট্টর ডানপন্থী গ্রুপের সদস্যরাও।

‘আমি জানি আপনারা ব্যথিত’

টেলিভিশনের পর্দায় ওভাল অফিস থেকে সমর্থকদের তাণ্ডব দেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁদের হামলা ও সহিংসতায় ক্যাপিটল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর টুইট করেন তিনি। তাতে বিক্ষোভকারীদের ‘শান্ত থাকা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প এই দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন বলে সমালোচনা শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য তাঁকে আরও কিছু বলার অনুরোধ জানান প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ও হোয়াইট হাউসের কয়েকজন উপদেষ্টা। এমনকি জো বাইডেনকে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠানে আসতে হয়। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা কোনো বিক্ষোভ না, এটা বিদ্রোহ।’ ট্রাম্পের প্রতি এ অবস্থার অবসান ঘটানোর দাবি জানান তিনি।

শেষমেশ ট্রাম্প টুইটারে তাঁর আগে ধারণ করা একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা ব্যথিত হয়েছেন। আমাদের এমন এক নির্বাচন হয়েছে, যেখানে আমাদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছিল এক ভূমিধস নির্বাচন।’ মিথ্যা দাবির পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘তবে এখন আপনাদের ঘরে ফিরে যাওয়া দরকার। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’ আরেক বার্তায় তিনি তাঁর উন্মত্ত সমর্থকদের ‘মহান দেশপ্রেমী’ আখ্যায়িত করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here