বাংলা খবর ডেস্ক:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস রোধে সারা দেশে আজ একযোগে টিকা দেওয়া শুরু হলো। ১০০৫ কেন্দ্রে এ প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।
রোববার সকাল ১০টা মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, করোনার টিকাদানের মাধ্যমে দেশে একটি মহৎ কাজের শুরু হলো আজ। এর আগে যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।
শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নেওয়ার জন্য ৩ লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন নাম নিবন্ধন করেছেন।
রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতালে ২০৪ টিম এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে ২১৯৬টি টিম টিকা প্রয়োগে যুক্ত থাকবে।
এদিন ঢাকায় প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের অনেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা নেবেন।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব টিকা নেবেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ টিকা নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ ঢাবির ২০ শিক্ষক।
এর আগে ২৭ জানুয়ারি একজন নার্স টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন আরও ২৫ জন টিকা নেন। পরদিন রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে আরও ৫৪১ জনকে দেওয়া হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য এদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। খুব একটা সমস্যা না হওয়ায় ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে টিকা প্রয়োগ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টিকা নিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী:
সারাদেশ ব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেন তিনি।
এর আগে রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সারাদেশে ১ হাজার ৫ টি কেন্দ্রে শুরু হয় এ টিকাদান কর্মসূচি।
দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে আমরা কোনো গুজব কিংবা সমালোচনা চাই না। এ দিনটি আমাদের জন্য শুভদিন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার টিকাদানের মাধ্যমে দেশে একটি মহৎ কাজের শুরু হলো আজ।’ এর আগে যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।
টিকা নিলেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনা টিকা নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি। আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে টিকা নেন তাঁরা।
যে তিন বিচারপতি টিকা নিয়েছেন তাঁরা হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি জিনাত আরা, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও একই বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনা টিকা গ্রহণ করবেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও।
গত ২৮ জানুয়ারি দেশের দ্বিতীয় কেন্দ্র হিসেবে বিএসএমএমইউয়ে টিকাদান শুরু হয়। সেদিন প্রথম টিকা নিয়েছিলেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
রাজধানীর যেসব কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা:
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া। এক হাজার ১৫টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে টানা দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলবে টিকাদান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, আজ ঢাকায় ৫০টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২১ ও দক্ষিণে ২৯ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে ২০৬টি টিম কাজ করছে।
রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো সংসদ সচিবালয় ক্লিনিক, মহাখালীতে সংক্রামক রোগ হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, শ্যামলীতে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, জাতীয় বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।
এছাড়া ডিএনসিসির মগবাজারের নয়াটোলা মাতৃসদন কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুর মাজার রোডের নেকি বাড়ির টেক মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকা মাতৃসদন কেন্দ্র ও উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের মাতৃসদনে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো- সচিবালয় ক্লিনিক, ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মজীবী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতাল, রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতাল, আজিমপুর মা ও শিশু হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, পিলখানার বিজিবি হাসপাতাল, লালবাগে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতাল।
এ ছাড়া বংশালের কসাইটুলী নগর মাতৃসদন, হাজারীবাগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নগর মাতৃসদন, ধলপুরে নগর মাতৃসদন, উত্তর মুগদা মাতৃসদন ও খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া মাতৃসদন কেন্দ্রে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
আর ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন।
দেশে প্রথম টিকা দেওয়া হয় ২৭ জানুয়ারি, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী দিনে টিকা নেন ২৬ জন। দেশে প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। পরদিন রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ পাঁচ শতাধিক কর্মীকে টিকা দেওয়া হয়।