‘সারা বিশ্বে নারীরা বৈষম্যের শিকার’

0
67
ডিআরইউয়ে তিন দিনব্যাপী নারী দিবসের কর্মসূচি শুরু

বাংলা খবর ডেস্ক:
নারী দিবসে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ‘করোনা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি, সমতা অর্জনে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করি’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষ্যে অনলাইনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ৮ মার্চ বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভার শুরুতে নারী নেত্রী আয়শা খানম, বুলা ওসমান এবং অধ্যাপক মমতাজ বেগম সহ আরও যারা এই সময়ে প্রয়াত হয়েছেন তাদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে সংগীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা উর্বি এবং কবিতা পরিবশেন করেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মুন চাকমা।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি নারী শাহীনূর; বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম; উইমেন ফর উইমেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদা আখতার খানম; স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের চন্দন লাহিড়ী; নাগরিক উদ্যোগের মাহবুব আখতার; প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মর্জিনা আহমেদ।

বক্তারা জানান, এবারের ৮ই মার্চের শ্লোগানে নারী নেতৃত্বের কথা বলা হচ্ছে। কেননা সারাবিশ্বে নারীরা বৈষম্যের শিকার, করোনায় এই পরিস্থিতি আরো বেড়েছে। পাশাপাশি নারী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠীর নারীরা বৈষম্যমূলক বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার। করোনায় চাকরি হারানো অনেক নারী সংগ্রাম করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে, তাদের পাশে মানবাধিকার সংস্থা দাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও নারীরা ঘরে – বাইরে সংগ্রামের অগ্রভাগে আছেন। তিনটি দেশ নারী নেতৃত্বে এগিয়ে আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

বক্তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, নারী-নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন সম্পর্কে গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে, পুরুষদের মানসিতার পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা, পিছিয়ে থাকা নারীদের বিষয়ে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

সভায় ঘোষণা পাঠ করেন এডাবের সমাপিকা হালদার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক খাতের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পারিবারিক গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে এদেশের নারীরা আজ কম-বেশি সকল ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিলেও প্রত্যাশিত নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার পথ এদেশে এখনো কণ্টকাকীর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটলেও সামাজিক বিকাশ সমভাবে না হওয়ায় নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আশানুরূপ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটছে ও নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে মোট ১৭ টি সুপারিশ তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন নারী জীবনের অগ্রগতির সাথে সাথে তার প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হচ্ছে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সাথে এগিয়ে যেতে নারী আন্দোলনের ক্যানভাসকে নতুনভাবে দেখতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে এতে নারীদের অনেক অবদান আছে, নারীরাও এর অংশীদার। তাদের প্রাপ্যতা ও ন্যায্যতা থেকে বিস্তৃত হলে চলবে না। তিনি শিক্ষা, শ্রম ও কর্মক্ষেত্র এবং স্বাস্থ্যে নারীর অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন এসব ক্ষেত্রে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান। নারীর উন্নয়নকে কি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হবে তার উপর নির্ভর করবে নারীর মর্যাদা, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর উন্নয়নকে না দেখলে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর হবে না। কেবল নারী আন্দোলনের মাধ্যমে নয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার দূর করা উদ্যোগ নিতে হবে। সহিংসতার সংকট, গৃহকর্মে নারীর শ্রমের স্বীকৃতির অভাব, সাইবার অপরাধ এসব নতুন সমস্যা বিবেচনা করে নতুন মানুষকে সাথে নিয়ে নারী আন্দোলনকে নতুনভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here