বিধি-নিষেধ ঢিলেঢালাভাবে চলায় আবারও উদ্বেগ প্রকাশ

0
450

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের আদলে জারি করা বিধি-নিষেধ ঢিলেঢালাভাবে চলায় আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সারা দেশে চলমান লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় কমিটির গত ৩০ ও ৩১ মে পর পর দুই দিন দুটি সভা থেকে এসব বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সভায় সরকারের পক্ষ থেকেও একাধিক সচিব, মহাপরিচালকসহ অন্যরা আমন্ত্রিত হিসেবে অংশ নেন।

সভায় সরকারকে করা সুপারিশগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে, সারা দেশব্যাপী জারি করা সরকারি বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে তবে সরবরাহ চলতে পারে, সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে, পর্যটন স্থান ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে, সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দিতে হবে, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সব মানুষকে বাড়িতে থাকার আদেশ জারির কথাও বলা হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো, তাত্ক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতার্পণ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্ত জেলা গণপরিবহন বন্ধ, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধি-নিষেধ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কঠোর মনিটরিং জোরদার করা এবং প্রয়োজনে এই বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় দূরীকরণে আইন সংশোধন করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে।

সভায় কভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্লাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রয়োজনীয় ওষুধের সংরক্ষণ এবং স্টেরয়েডের যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এ দেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে বলে এখনই তার প্রস্তুত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সভায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত বিধি-নিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশীদ আলমও ছিলেন।

জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণ:

সভায় কভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, দেশের সার্বিক কভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী (রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট) এলাকাতে সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আরো কিছু জেলাতে উচ্চ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যেমনটি বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা গেছে। সাম্প্রতিককালে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই এবং এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের পাশাপাশি আরো তিনটি এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে। কোথাও পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে চলাচলে কড়াকরি আরোপ করা হয়েছে। এর পরও বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বেড়েই চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here