লাথি দিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙলেন সাকিব, মারলেন আছাড়ও

0
68

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হলেই মাঠ ও মাঠের বাইরে বাড়তি উত্তেজনা সব সময়ই দেখা যায়। তবে আজ এক ভিন্ন দৃশ্যের সাক্ষী হলো হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর স্টেডিয়াম। ম্যাচ চলাকালীন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে সরাসরি স্ট্যাম্পে লাথি মারেন সাকিব। এখানেই শেষ নয়, পরের ওভারে বল করতে আসেন শুভাগত হোম। ওভারের এক বল বাকি থাকতে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধের ঘোষণা দেন আম্পায়ার। রাগ সামলাতে না পেরে স্ট্যাম্পগুলো তুলে আছার দেন সাকিব।

আজ শুক্রবার দুপুরে শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে মোহামেডানের ম্যাচ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ম্যাচ রেফারি কিংবা সিসিডিএমের কোনো কর্মকর্তা।

ঘটনা ঘটে ম্যাচের পঞ্চম ওভারে। মুশফিকের বিপরীতে বল করতে আসেন সাকিব। তিন উইকেট হারিয়ে খাদে পড়া আবাহনীর ভরসা মুশফিক আর মোহামেডানের প্রয়োজন এই উইকেটটি। প্রথম বলে কোনো রান নিতে দেননি সাকিব। তবে তার পরের দুই বলে এক ছয় ও এক চারে দশ রান তুলে নেন মুশফিক। পরের দুই বলেও কোনো রান হয়নি।

ওভারের পঞ্চম বল স্ট্যাম্প বরাবর মুশফিকের পায়ে আঘাত করে, এতে লেগ বিফোরের আবেদন করেন সাকিব আল হাসান। তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপন। এতে রাগ ও ক্ষোভে স্ট্যাম্পে লাথি মারেন সাকিব। তাতে স্ট্যাম্প মাটিতে পড়ে যায়। পরের ওভারে বৃষ্টির কারণে শুভাগতকে শেষ বল করতে না দেওয়ায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাকিব।

মিডঅফে ফিল্ডিং করছিলেন সাকিব। ওভারের মাত্র এক বল বাকি, কিন্তু মাঠকর্মীদের কাভার নিয়ে আসার ইশারা করেন আম্পায়ার। তাতে অসন্তোষ সাকিবের, দৌড়ে এসে স্টাম্প তুলে নিয়ে আছাড় মারেন। সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। তার সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হন মোহামেডান অধিনায়ক। এক পর্যায়ে সতীর্থরা তাকে শান্ত করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

সাকিব কাণ্ডের পর আবাহনীকে হারালো মোহামেডান:

তিন ম্যাচ পর জয় দেখলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। গতকাল সাকিব কাণ্ডের পর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডকে হারায় মোহামেডান। বৃষ্টি আইনে ৩১ রানে জয় পায় সাকিব আল হাসানের দল। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে মোহামেডানের সংগ্রহ থামে ১৪৫/৬-এ। সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ২৭ বলের ইনিংসে সাকিব হাঁকান একটি চার ও দু’টি ছক্কা। ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান খেলেন ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংস। জবাবে আবাহনীর ইনিংসের ৫.৫তম ওভার শেষে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা।


এসময় আবাহনীর সংগ্রহ ছিল তিন উইকেটে ৩১ রান। পরে খেলা শুরু হলে আবাহনীর টার্গেট দাঁড়ায় ৯ ওভারে ৭৬ রানের। কিন্তু আবাহনীর ইনিংস শেষ হয় ৪৪/৬-এ। সর্বোচ্চ ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন আবাহনীর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ১৫ রান। ইনিংসের শুরুতেই বল হাতে পান শুভাগত হোম চৌধুরী। আর আবাহনীর স্কোর বোর্ডে কোনো রান ওঠার আগেই প্রথম ওভারের শুরুর তিন বলে দুই উইকেট তুলে নেন মোহামেডানের এ অফস্পিনার। ব্যাট হাতে ‘ডাক’ মারেন স্বাধীন ও আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো ওপেনার নাঈম শেখ। দলীয় রানে উইকেট খুইয়ে আবাহনীকে বিপদে ফেলেন আগের ম্যাচে নাঈমের সঙ্গে ১১১ রানের জুটি গড়া ওপেনার আফিফ হোসেনও। শেষ দিকে ব্যাট হাতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৩) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (০) ব্যর্থ হলে ম্যাচে আশা ফুরায় আবাহনীর। মোহামেডানের বল হাতে তিন ওভারের স্পেলে ১৭ রানে তিন উইকেট নেন অফস্পিনার শুভাগত হোম। পেসার তাসকিন দুই ওভারে মাত্র ৫ রানে নেন দুই উইকেট। আসরে তিন ম্যাচ পর জয় দেখলো মোহামেডান। এর আগে আসরের শুরুর তিন ম্যাচে জয়ের পর টানা তিন ম্যাচে হার দেখে সাকিবের দল। চলতি লীগে ৭ ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। তালিকায় তারা উঠে এলো চতুর্থ স্থানে। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আবাহনী। ১২ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।

ক্ষমা চাইলেন সাকিব
আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে স্টাম্পে লাথি দেয়া ও স্টাম্প তুলে আছাড় দেয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাকিব আল হাসান। আবাহনীর বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৩১ রানে জয়ের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন মোহামেডানের অধিনায়ক। এর আগে আবাহনীর ড্রেসিরুমে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে ক্ষমা চান সাকিব। আবাহনীর ম্যানেজার মাসুদ ইকবাল মামুন জানান, ‘ঘটনার পর সাকিব এসেছিলেন আমাদের ড্রেসিংরুমে। তিনি আমাদের কাছে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেখানে খালেদ মাহমুদ সুজনও ছিলেন।

বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। পরে দুজন বুক মিলিয়েছেন।’ ফেসবুকে সাকিব লিখেছেন, ‘প্রিয় অনুরাগী এবং অনুসারীরা, আমি মেজাজ হারিয়ে এবং ম্যাচটি সবার জন্য, বিশেষত যারা বাড়ি থেকে দেখছেন তাদের জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের উচিত ছিল না সেভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো কিন্তু কখনও কখনও সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটে। এই মানবিক ত্রুটির জন্য আমি দল, ম্যানেজমেন্ট, টুর্নামেন্টের কর্মকর্তা এবং সাংগঠনিক কমিটির কাছে ক্ষমা চাইছি। আশা করি, ভবিষ্যতে আর এটিকে পুনরাবৃত্তি করবো না। আপনাদের ধন্যবাদ এবং সবাইকে ভালবাসি।’ গতকাল আবাহনীর ব্যাটিংয়ের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে ঘটে ঘটনা দুটি। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মুশফিককে আউট না দেয়ায় সাকিব লাথি মেরে স্টাম্প মাটিতে তুলে ফেলেন। পরের ওভারে ১ বল বাকি থাকতে বৃষ্টির কারণে মাঠ কাভার দিয়ে ঢাকার নির্দেশ দেন ফিল্ড আম্পায়ার। তাতে ক্ষিপ হয়ে সাকিব একপ্রান্তের তিন স্টাম্প উপড়ে আছাড় মারেন মাটিতে। এমন ঘটনার পর মাঠের বাইরেও উত্তেজনা ছড়ায়। গতকাল মাঠের কাণ্ডে লেভেল-৩ আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন সাকিব। এতে জরিমানাসহ নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছেন দেশসেরা ক্রিকেটার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here