সাকিব আল হাসানের দেয়া পাঁচ ছক্কায় স্বস্তি এনে দিল অস্ট্রেলিয়াকে

0
68

বাংলা খবর ডেস্ক:
এই সিরিজে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতেই যেখানে ৩০ রান করতে ঘাম ছুটে গেছে দুই দলের, সেখানে কি না এক ওভারেই ৩০! সাকিব আল হাসানের জন্য পাঁচ ছক্কার বিভীষিকাময় সেই এক ওভারই যে সিরিজ হারার পর অবশেষে একটি জয়ের স্বস্তি এনে দিল অস্ট্রেলিয়াকে, তা না বলে কী উপায়!

মুস্তাফিজুর রহমানকে সামলাতে গিয়ে আরেকবার নিরুপায় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েও গলদঘর্ম kalerkanthoতাঁরা। কার্যকারিতায় পিছিয়ে ছিলেন না অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসান কিংবা আরেক বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামও। এঁদের মাঝখানে একটি ওভারেই কেবল বেদম মার খেলেন দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের ব্যাটে ওভাবে ছিন্নভিন্ন না হলে যে ৪-০ অসম্ভব ছিল না, মাত্র ১০৪ রান তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ৩ উইকেটের জয় বলছে সে কথাই।

এই সিরিজে দুই দলের ব্যাটিংই ক্রমাবনতির ছাপ রেখে চলেছে। অন্তত প্রতি ম্যাচে আগে ব্যাট করা দলের স্কোরই দিচ্ছে সে সাক্ষ্য। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ করেছিল ৭ উইকেটে ১৩১ রান। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেটে ১২১ রান পেরিয়ে যেতেও কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছিল স্বাগতিকরা। ৩-০ করার দিন এর চেয়েও বেশি ভোগান্তি সফরকারীদের। ৯ উইকেটে ১২৭ রান করেও ১০ রানের জয় মাহমুদ উল্লাহর দলের। সেটি ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সর্বনিম্ন রান ডিফেন্ড করার রেকর্ডও। কাল সেই রেকর্ডও পড়েছিল হুমকির মুখে।

সাকিবের সেই ওভারের (ইনিংসের চতুর্থ) পর থেকেই যে কাঁপতে শুরু করল অস্ট্রেলিয়া। টপাটপ পড়তে শুরু করল উইকেটও। যথারীতি মুস্তাফিজ তাঁর বোলিং জাদুতে অমীমাংসিত রহস্যই হয়ে থাকলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য। আগের ম্যাচে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে জিতিয়েছিলেন। এই ম্যাচে দুটো উইকেটও পেলেন, খরচও যেতে দিলেন না দুই অঙ্কে (এই ম্যাচেও দিয়েছেন ৯ রান)। ফেরালেন সাকিবকে পাঁচ ছক্কা হাঁকানো ক্রিশ্চিয়ান আর অ্যালেক্স ক্যারিকে। মেহেদীর দুই শিকারের একটি এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান মিচেল মার্শ (১১)। ৩০ রানের সেই ওভারের পরপরই নাসুম বেন ম্যাকডারমটকে ফিরিয়ে ভাঙেন ক্রিশ্চিয়ানের সঙ্গে তাঁর ৪৪ রানের জমে যাওয়া জুটিও।

ম্যাচ জিততে নিয়মিত উইকেট ফেলার জরুরি কাজটি অন্যদিনের মতোই করলেন বোলাররা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে যখন করতে হবে মাত্র ১০৫ রান, তখন ক্রিশ্চিয়ানের ছক্কার ঝড় এক ওভারেই লক্ষ্য নাগালে এনে দিয়েছিল অনেকটা। এমন নয় যে, এর আগে কখনো ওভারে ৩০ রান দেননি সাকিব। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল এই মিরপুরেই তাঁর এক ওভার থেকে তিনটি করে ছক্কা ও চারে তুলেছিলেন ৩০ রান। এবার বাংলাদেশের অলরাউন্ডারের জন্য হলো ভিন্ন অভিজ্ঞতাই। ওভারের চতুর্থ বলটিই শুধু ছিল ডট। বাকি পাঁচ বলেই ছক্কা হাঁকানো ক্রিশ্চিয়ানকে অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্টের তিনে পাঠানোর সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিল ম্যাচ ভাগ্য।

এর আগে ফিল্ডিংয়েও বয়সকে হার মানানো এক কাণ্ড ক্রিশ্চিয়ানের। স্বাগতিকদের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারকে ছক্কায় উড়িয়েছিলেন আফিফ হোসেন। সেটি ছক্কা হতে হতেও না হওয়ার কারণ ৩৮ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ান। ডিপ মিডউইকেটে ঝাঁপিয়ে যখন বলের নাগাল পেয়েছেন, ততক্ষণে তিনি সীমানার বাইরে শূন্যে। মাটিতে পড়ার আগেই বল ফেরত পাঠালেন সীমানার ভেতরে। ৬ রানের জায়গায় বাংলাদেশের সংগ্রহে যোগ হলো মাত্র ২ রান। ওই বাড়তি ৪ রানও কতটা অমূল্য হয়ে উঠতে পারত, শেষ ২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ৪ রানের সমীকরণ এবং ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সময় সেই আক্ষেপ বাংলাদেশ শিবিরে বেজেছে নিশ্চিতভাবেই।

অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা যেমন ভুগেছেন, এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আরো বেশি। বোলিংয়ে সাফল্যহীন সাকিব ব্যাটিংয়ে ছিলেন না ছন্দে, খেলেছেন বলক্ষয়ী ইনিংস। ২৬ বলে ১৫ রান করেছেন মাত্র। অবশ্য এ রকম ব্যাটিংয়ের দায় তাঁর একার নয়। ওপেনার নাঈম শেখও ২৮ রান করতে খেলে গেছেন ৩৬ বল। আগের ম্যাচে ফিফটি করে ম্যাচ সেরা হওয়া মাহমুদ উল্লাহকে এবার শূন্য হাতে ফেরানো লেগস্পিনার মিচেল সোয়েপসন পরের বলেই তুলে নেন নুরুল হাসানকেও। গুগলি ঠিক বুঝেই উঠতে পারেননি নুরুল। নাঈমকেও তুলে নেওয়া এই লেগস্পিনার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (১২ রানে ৩ উইকেট) হয়েছেন ম্যাচের সেরাও। পেসার অ্যান্ড্রু টাইও (৩/১৮) প্রতিপক্ষকে সাধ্যের মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টায় সফল।

কিন্তু বোলিংয়ে ব্যর্থ সাকিব। ওই একটি ওভারই নয়, বাকি তিন ওভারেও তো দিয়েছেন ২০ রান। ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটিও কম খরুচে নয়। দলের সব বোলার মিলে যেখানে দিয়েছেন ৫৫ রান, সেখানে তাঁর ৪ ওভারেই ৫০! এর মধ্যে ৩০ রান দেওয়া সেই একটি ওভারেই ম্যাচের লাগামও হাতছাড়া হয়েছিল বাংলাদেশের। সেটি আবার নাগালের মধ্যে আসতে আসতেও ছুটে গেল ৪-০!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here