চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা!

0
63

বাংলা খবর ডেস্ক:
আগস্টে চীন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে। বিষয়টি অনেক পরে আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশ্বজুড়ে মিডিয়ার বড় অংশ জুড়ে এ নিয়ে আলোচনা। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্টকে এক হাত দেখা নেয়ার মতো অবস্থায় আছে চীন এবং চীন যে এটা করবে তা অপরিহার্য। আগস্টে উৎক্ষেপণ করা ওই নতুন পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণান্ত্রের গতি ঘন্টায় ২১ হাজার মাইল। মহাশূন্য থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে কোনো লক্ষ্যে আঘাত করার আগে পৃথিবীকে নিচু দিয়ে কক্ষপথে অতিক্রম করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনের এই পরীক্ষাকে তাদের হাইপারসনিক অস্ত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ খবরে সচেতন যুক্তরাষ্ট্রও।

কারণ, নিজস্ব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশ। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার এক মতামত কলামে বলা হয়েছে যে, চীন এখন অপ্রতিরোধ্য। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তির ব্যবধান কমিয়ে আনছে।

এ নিয়ে লন্ডনের অনলাইন দ্য মেইল বলছে, বেইজিং বলেছে, তারা ঘন্টায় ২১ হাজার মাইল বেগে চলমান পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণান্ত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে গোপনে। এটি টার্গেটে আঘাত করার আগে বিশ্বকে চারপাশ দিয়ে একবার অতিক্রম করেছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করেছে বেইজিং। একই সঙ্গে চীন ইস্যুতে এটা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত আধিপত্যের ওপর নতুন এক আঘাত। এখানে অন্য প্রশ্ন। তা হলো, চীন এত বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র টেরই পায় নি! টের পেলে তারা তখনই কথা বলতো। আগস্টে চীন এই পরীক্ষা চালানোর পর সবেমাত্র সেই খবর প্রকাশ হয়েছে। পাঁচটি অজ্ঞাত গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তাতে বলা হয়েছে, আগস্টে লং মার্চ রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীন। তা কক্ষপথের নি¤œ এলাকায় বহন করে নিয়েছে হাইপারসনিক একটি যান। টার্গেটে আঘাত করার আগে তা সারা পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করেছে। এর ফলে চীন যে প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে টপকে যেতে পারে।

এ খবরকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায় বিস্ময়ের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সূত্র। তারা বলেছেন, এতে চীনের হাইপারসনিক অস্ত্রের উন্নয়নে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, সেটাই ফুটিয়ে তোলে। ওদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া গ্লোবাল টাইমস বলেছে, এই পরীক্ষার অর্থ হলো চীনের পারমাণবিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যুক্ত হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মানসিকতায় নতুন এক আঘাত। এটা কয়েক মিনিটের মধ্যে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে আঘাত করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আলাস্কায় অবস্থিত এবং উত্তর মেরুতে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র গেলে তাকে গুলি করে ভূপাতিত করার সক্ষমতা আছে তার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ দিক দিয়ে হামলা বা আঘাত চালাতে সক্ষম চীনের ব্যবস্থা।

চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে ক্রমশ উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে এশিয়ায়ও অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তার মধ্যে চীনের সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এক ভয়াবহতার জন্ম দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ কমপক্ষে আটটি দেশ বর্তমানে হাইপারসনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছে। গত মাসে উত্তর কোরিয়া বলেছে, তারা নতুনভাবে তৈরি একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০১৯ সালের প্যারেডের সময় চীন তার অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন করেছে। এর মধ্যে ছিল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা ডিএফ-১৭ নামে পরিচিত। এসব ক্ষেপণাস্ত্র আলোর গতির পাঁচ গুণেরও বেশি গতিতে টার্গেটে হামলা করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here