সাগরে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাবনা

0
69

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন—ইইজেড) .১১ থেকে .৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট (মূলত মিথেন গ্যাস) মজুদ থাকার ইঙ্গিত মিলেছে। এটি ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের সমান।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় গ্যাস-হাইড্রেটের উপস্থিতি নিয়ে জরিপ ও সমীক্ষা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বুধবার তা সাংবাদিকদের জানান।

সমুদ্র আইনবিষয়ক জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী, উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা হলো ইইজেড। এই অঞ্চলে পানি ও বাতাস থেকে শক্তি উৎপাদন, সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান ও ব্যবহারে রাষ্ট্রের বিশেষ অধিকার রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ উদ্যোগে সুনীল অর্থনীতি : উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে এই সমীক্ষা পরিচালনা করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমীক্ষায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ২২০ প্রজাতির সিউইড বা সামুদ্রিক শৈবাল, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, পাঁচ প্রজাতির লবস্টার, ছয় প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় পাওয়া নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু সামুদ্রিক শৈবাল পাঁচটি শিল্পে ব্যবহার করার উপযোগী বলে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো—মাছের খাবার, প্রাণীর খাবার, ফুড অ্যাডিটিভ, বাল্ক কসমেটিক ইনগ্রেডিয়েন্ট ও হাই ভ্যালু কসমেটিক ইনগ্রেডিয়েন্ট।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সাবান, শ্যাম্পু ও পোলট্রি ফিড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে সামুদ্রিক শৈবাল প্রয়োজন। প্রতিবছর আমরা বিভিন্ন শিল্পের জন্য ২৮ হাজার কোটি টাকার কাঁচামাল কিনে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সামুদ্রিক শৈবাল নিজেরাই ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এর ১৬ হাজার কোটি টাকা দেশে থেকে যাবে।’

বিনিয়োগ করতে হবে সামুদ্রিক শৈবালের পেছনে : বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবালের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি আরেকটি সোনার খনি। সামুদ্রিক শৈবাল প্রতি কেজি বিক্রি হবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আরেক প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল আছে যার পেছনে ১২০০ টাকা খরচ করলে প্রতি ছয় মাসে কেজিতে আয় হবে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে অতি সহজেই করা সম্ভব। সামুদ্রিক শৈবালের চাষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ উপকূলীয় এলাকা রক্ষা, জনগণের জন্য, বিশেষ করে নারীদের সহজ ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, আগ্রহী ও যোগ্য উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক শৈবালের সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ, অংশগ্রহণ করানো।’

৯ খাতের প্রস্তুতির জন্য সমীক্ষা : সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই সমীক্ষা ৯টি খাতের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো—সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক মৎস্য চাষ উন্নয়ন, বাণিজ্যিক নৌপরিবহনের উন্নয়ন, সমুদ্র পর্যটনের বিকাশ, অফশোর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুনীল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন, জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্প সম্প্রসারণ, স্থিতিশীল জীবিকার জন্য ম্যানগ্রোভের বাস্তুসংস্থানগত সেবা, সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং মেরিন স্পেশাল প্ল্যানিং বাস্তবায়ন।

অফশোর জ্বালানি এবং সুনীল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট ও মেরিন জেনেটিক রিসোর্স বিশেষ করে সামুদ্রিক শৈবালের সম্ভাবনা, উপস্থিতি, প্রকৃতি ও মজুদ নির্ণয়ের জন্য দুটি গবেষণা করেছে। এতে সহায়তা করেছে যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস।

প্রকৃত মজুদ জানতে প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ সিসমিক জরিপ : সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশের আগে সম্পাদিত বিভিন্ন জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গ্যাস হাইড্রেটের ভলিউম এবং এই গ্যাস হাইড্রেটটিতে থাকা মিথেনের ভলিউম অনুমান করা হয়েছে। এই ‘সিসমিক রিমোট সেন্সিং স্টাডি’ শুধুমাত্র গ্যাস হাইড্রেটের সম্ভাব্য উপস্থিতি এবং বিতরণের ইঙ্গিত দিতে পারে। সিসমিক লাইনের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে শুধু বাংলাদেশের ইইজেডে দশমিক ১১ থেকে দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট জমার অনুমান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ইইজেড ও মহীসোপানের সব এলাকার পূর্ণাঙ্গ সিসমিক জরিপ সম্পন্ন করা হলে প্রকৃত মজুদ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সমীক্ষা অনুযায়ী করা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, বাংলাদেশের ইইজেডের উল্লেখযোগ্য এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের উপস্থিতি ও মজুদের সমূহ সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ভারতও গ্যাস পেয়েছে : সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে বিশেষ করে ভারতের কৃষ্ণ-গোদাভারী এবং মহানন্দা বেসিনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেটের মজুদের সম্ভাবনা বিষয়ে ভারত এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here