জাতিসংঘ পিস বিল্ডিং কমিশনের প্রথম নারী সভাপতি ফাতিমা রাবাব

0
425

বাংলা খবর ডেস্ক:
উন্নয়ন ও শান্তির অগ্রযাত্রায় করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা তথা বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিতে ‘সংহতি’ এগিয়ে নিতে বিশেষ মনোযোগী হবেন বলে জানালেন জাতিসংঘ পিস বিল্ডিং কমিশনের নবনির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। করোনা অতিমারির চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে জতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশন (পিবিসি)-এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করায় সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন কমিশনের ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করা ফাতিমা রাবাব।

এ জয়কে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা-বিশ্বাসের প্রতিফলন বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেন তিনি। ২০২২ সালে পিস বিল্ডিং কমিশনের চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে স্থায়ী প্রতিনিধি মিজ ফাতিমা বলেন, উন্নয়ন ও শান্তি বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কোভিড অতিমারি যে প্রভাব ফেলেছে তা প্রশমিত করতে আমরা বৈশ্বিক সংহতি এগিয়ে নিতে বিশেষ মনোযোগ দেব। সংঘাতপূর্ণ দেশ বা অঞ্চলে শান্তিবিনির্মাণ সক্ষমতাসমূহের উন্নয়নে শান্তিরক্ষীগণ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এবং শান্তিবিনির্মাণ কাজে যুক্ত অন্যান্য অংশীজনকে সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবেলায় যেভাবে সহায়তা করছে তা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

এ প্রেক্ষিতে তিনি শান্তিরক্ষা এবং শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমের আন্ত:সম্পর্ককে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, জয়ের পর সভাপতির আসন অলংকৃত করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, শান্তিরক্ষীগণ যে সকল দেশে নিয়োজিত সেই দেশসমূহের উন্নয়নে তারা যে অবদান রেখে চলেছে, শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই তা গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করে।

বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শান্তিবিনির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে পিবিসি সদস্য ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

জাতীয় পর্যায়ে শান্তি বিনির্মাণ ও টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক/আঞ্চলিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “সাউথ-সাঊথ ও ট্রায়েঙ্গুলার কো-অপারেশন থেকে অনেক কিছুই অর্জন করা যেতে পারে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদসমূহের সঞ্চালন এবং উত্তম অনুশীলন ও উত্তম ধারণাসমূহ ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা”। শান্তি বিনির্মাণে নারী ও যুবকদের পূর্ণ, সমান এবং অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তা’ (ডব্লিউপিএস) এবং ‘যুব শান্তি ও নিরাপত্তা (ওয়াইপিএস) এজেন্ডাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, ও ইকোসককে সংযুক্ত করা এবং জাতিসংঘের গোটা ব্যবস্থাপনার সমন্বয় ও তা সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী ও মতামত প্রধানকারী হিসেবে পিবিসি’র ভূমিকা আরও সুসংহত করার উপর জোর দেন তিনি। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “জাতীয় পর্যায়ে সুসংহত ও কার্যকর শান্তিবিনির্মাণ প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে যে সকল সংস্থা, তহবিল, কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের কান্ট্রি টিম কাজ করছে তাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল রাখতে আমরা অব্যাহতভাবে কাজ করে যাব” উল্লেখ্য মঙ্গলবার নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ শান্তিবিনির্মাণ কমিশনের (পিবিসি)’র চেয়ার ও ভাইস-চেয়ারদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সর্বসম্মতিক্রমে ২০২২ সেশনে জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন।

পিস বিল্ডিং কমিশন বা পিবিসি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের একটি আন্ত:রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সংস্থা। এই সংস্থা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে শান্তি বিনির্মাণের জন্য কাজ করে, যাতে সংঘাতের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) থেকে নির্বাচিত সদস্যসহ ৩১ জন সদস্যের সমন্বয়ে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পিবিসি। জাতিসংঘে শীর্ষ অর্থ প্রদানকারী ও শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোও কমিশনের সদস্য। মিশনের সংবা বিজ্ঞপ্তি মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।

বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদান রাখা এবং বিশ্বব্যাপী ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডা’কে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বিশ্বস্থ নাম। এই নির্বাচন বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাসেরই বহি:প্রকাশ, কারণ বিশ্বের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিছু অঞ্চলে শান্তিরক্ষা ও শান্তিবিনির্মাণে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময়ব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। স্মরণ করা যায়, প্রতিষ্ঠানকাল থেকেই বাংলাদেশ পিবিসি’র সদস্য। এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ পিবিসি’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। সেই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। পিবিসিতে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম চেয়ার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here