মৃত্যুর আগে তিনটি শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে যান পেলে

0
59

বাংলা খবর ডেস্ক:
গল্পটা বিখ্যাত। ১৯৫০ বিশ্বকাপে ফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে হেরে যায় ব্রাজিল। শিরোপা হাতছাড়ার কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন পেলের বাবা দোনদিনহো। ১০ বছরের ছোট্ট পেলে বাবার চোখের পানি মুছে সান্ত্বনা দেন, ‘কেঁদো না। আমি বিশ্বকাপ এনে দেব।

কথা রেখেছিলেন পেলে। তাঁর বাবার মতো কোটি কোটি ব্রাজিলিয়ানের স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপে। পেলের পায়ের জাদুতে সেবার প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। সব মিলিয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জিতে পেলে হয়ে যান ‘ও রেই’ বা মহারাজা। তবে শিকড়টা ভোলেননি কখনো। তাঁর স্বপ্নের নায়ক ছিলেন বাবা দোনদিনহো। এ জন্য মৃত্যুর আগে হাসপাতালে নিজের তিনটি শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে যান পেলে। প্রথমটা, মৃত্যুর পর যেন তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রিয় ক্লাব সান্তোসে, যার টানে পেশাদার ক্যারিয়ারে নাম লেখাননি আর কোনো ক্লাবে। দ্বিতীয় ইচ্ছা, নেক্রোপোল একুমেনিকায় যেখানে পেলের বাবা সমাহিত সেখানেই যেন সমাধি হয় তাঁর। আর শেষ ইচ্ছা, অন্তিমযাত্রায় যেন শোকের আবহ না থাকে।


সমাধিস্থল নেক্রোপোল একুমেনিকায় যাওয়ার পথে পেলের কফিন। এ সময় রাস্তার দুই ধারে ছিল হাজারো ভক্তের ভিড়। ছবি : এএফপি

তিনটি ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের। ক্যারিয়ারের পুরোটা খেলেছেন যে সান্তোসে, সেখানেই শেষ শ্রদ্ধার জন্য নিথর দেহটা রাখা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টা। সারা বিশ্ব থেকে আসা দুই লাখের বেশি মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাঁকে। সান্তোস কর্তৃপক্ষ জানায়, সংখ্যাটা দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ছুটে এসেছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর পেলের কফিন বের করা হয় ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম থেকে। রাস্তায় তখন লাখো মানুষের ঢল। পুরো শহরটাই থমকে যায় কয়েক ঘণ্টা।

পেলের ১০ নম্বর জার্সি পরা ছিলেন বেশির ভাগ সমর্থক। “ভিভা ও’ রেই” স্লোগানে চারপাশ প্রকম্পিত করে তুলেছিল তারা। সেই ভিড় ঠেলে পেলের কফিন নেওয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সমাধিস্থল নেক্রোপোল একুমেনিকায়। ৩২ তলা এই ভবনের ৯ তলায় সমাহিত তাঁর বাবা। ৯ নম্বর জার্সি পরে খেলা দোনদিনহোর পাশেই সমাহিত করা হয় ফুটবলসম্রাটকে।

পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে সমুদ্রতটে ঘেরা সান্তোসে পৌঁছতে রাস্তাগুলোকে কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ করা হয়েছে। সাও পাওলো থেকে সান্তোসের রাস্তাটা চ্যানেল টু। পেলের মা দোনা সেলেস্তে আরান্তেস থাকেন চ্যানেল সিক্সে। আর স্টেডিয়াম থেকে সমাধিস্থল নেক্রোপোল একুমেনিকায় যেতে হয় চ্যানেল ওয়ান দিয়ে। কফিন নেক্রোপোল যাওয়ার পথেই ছিল পেলের শতবর্ষী মা দোনার বাড়ি। স্মৃতি হারিয়ে ফেলা দোনা জানেন না ছেলের মৃত্যুর খবর। তার পরও পেলের কফিন দেখে ডুকরে ওঠার কথা তাঁর হৃদয়। পেলে চেয়েছিলেন তাঁর শেষ যাত্রা যেন শোকের না হয়। এজন্যই হয়ত কিছু ভক্ত বাদ্য যন্ত্রের তালে জানিয়েছেন শেষ শ্রদ্ধা।

স্টেডিয়াম থেকে সমাধিস্থলে যাওয়ার পথে অজস্র পতাকা আর ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভক্তরা। এর কোনোটায় লেখা ‘লং লিভ দ্য কিং’ কোনোটায় ‘পেলে ৮২’। তবে ‘পেলেই একমাত্র ফুটবলার যিনি থামিয়েছিলেন যুদ্ধ’ নামে বিশাল ব্যানারটা নজর কেড়েছে সবার।

১৯৬৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সান্তোস প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল নাইজেরিয়ার বেনিন শহরে। ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ‘বিয়াফরা ওয়ার’ নামের গৃহযুদ্ধে তত দিনে নিহত হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে পেলের খেলা দেখতে ম্যাচের দিন যুদ্ধ বন্ধের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় সব পক্ষ। এর কিছুদিন পর পাকাপাকিভাবে থেমে যায় যুদ্ধ। পেলের সতীর্থ রামোস দেলগাদো স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ‘এটাই পেলে নামের শক্তি, যাঁর খেলা দেখতে একটা যুদ্ধ পর্যন্ত থেমে যায়। ’

সেই কিংবদন্তির জীবনগাড়ি থেমে গেছে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর। আর গতকাল ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শায়িত হলেন চিরনিদ্রায়। শান্তিতে ঘুমান পেলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here