বাংলাদেশের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের খরচ দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। জাতিসংঘ এরইমধ্যে ৯ মাসের খরচের হিসাব দিয়েছে। ক্যানাডা সহায়তা করেছে। অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে তাদের দীর্ঘদিনের খরচ মেটানো অনেক বড় চাপ।
রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনেকে বর্তমানে অনেক কষ্টে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বাস করছেন। মে মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে।
ক্যানাডার সরকার এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্ষাকালে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল জোগানের ঘোষণা দেয় ক্যানাডার সরকার।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে৷ রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ছাড়াও বন্যা, বৃষ্টি বা অন্য ঝুঁকিসহ এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য মোট ১২টি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুই লাখ রোহিঙ্গা চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সম্প্রতি এক সেমিনারে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও সাইক্লোনের ক্ষতি এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকার নির্ধারিত তিন হাজার একর জমি ছাড়াও ক্যাম্পের আয়তন বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা বসতিগুলো সরিয়ে সেখানে পুনঃস্থাপন করা হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করতে ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি ডলার প্রয়োজন।
সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ হবে ৮৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সিপিডি বলছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প তৈরির কারণে ৬ হাজার একর বনের জমি উজাড় হয়েছে। সিপিডির হিসাবে এর আর্থিক মল্য ৭৪১ কোটি টাকা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সিপিডি হিসাব করে দেখেছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা জরুরি, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮ ভাগ। এছাড়া এত বিপুল অর্থ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক ০৩ শতাংশ ও মোট রাজস্বের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
সি আর আবরার বলেন, এটা স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের খরচ দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম৷ জাতিসংঘ এরইমধ্যে ৯ মাসের খরচের হিসাব দিয়েছে৷ ক্যানাডা সহায়তা করেছে। অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে তাদের দীর্ঘদিনের খরচ মেটানো অনেক বড় চাপ।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাকে খাদ্য, বাসস্থানসহ অন্যান্য খাতে নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিচ্ছে৷ বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। আরো রাখতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য চাপ হবে। তাই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিতে হবে৷ দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here