নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে জ্যামাইকা হিলসাইড এভিনিউর মান্নান সুপার মার্কেটের সামানে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুশরাত হক (১৯) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জ্যামাইকা হাসপাতালের আইসিইউতে কোমায় রয়েছেন তিনি। গত ২৬ মার্চ দুপুরে মুশরাত দুর্ঘটনা কবলিত হন। ওয়াক সাইন দেখে রাস্তা অতিক্রম করছিলেন মুশরাত। একটি লাল প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গাড়ীটি মুশরাতকে চাপা দিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূর। পরে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মুশরাতের মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় সে রাতেই তার মস্তিষ্কে সার্জারী করা হয়। নিউরোসার্জনদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি।
দুর্ঘটানার দিনে মুশরাত গিয়েছিলেন জিমে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। যে গাড়িটি তাকে চাপা দেয় তাতে কৃষাঙ্গ চালকের সাথে একজন হিস্পানিকও ছিলেন। এসময় গাড়ীর গতিবেগ ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার ব্রেনে সার্জারি করতে হয়েছে। পরে তারা পরিবারের অনুমতি নিয়ে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপারেশন করেন। তার মাথার খুলি মাথা থেকে খুলে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার ব্যাপারে এখনই চিকিৎসকরা আশাবাদী হতে পারছেন না।
জ্যামাইকা হিলসে বসবাসকারী মোকাররম হকের মেয়ে মুশরাত ফার্মিংডেল কলেজের দ্বিতীয় বষের্ষর ছাত্রী। জ্যামাইকা হাইস্কুলের পেছনে তাদের বাসা। মুশরাতরা তিন ভাই-বোন। এর মধ্যে মুশরাত দ্বিতীয়। বড় ভাইয়ের বয়স ২০, কলেজে পড়ে। ছোট ভাইয়ের বয়স ১৩, ক্লাস সিক্সে পড়ে। মুশরাতের জন্ম এখানেই। তার বাবা ও মা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে আসেন।
উল্লেখ্য, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের প্রেসিডেন্ট খাজা মিজান হাসান ও সাবেক মুয়াজ্জিন খাজা রায়হানের ভাগ্নির মেয়ে মুশরাত হক।
চালকের শাস্তির দাবিতে নিসচা’র মানববন্ধন
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কলেজ ছাত্রী মুশরাত হক, যিনি এখন কর্নেল হাসপাতালের আইসিইউ(কোমা)তে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ অবস্থায় চিকিৎসারত রয়েছেন, তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে এবং দোষী গাড়ী চালকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সামাজিক সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) যুক্তরাষ্ট্র শাখা।
নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন স্বপনের নেতৃত্বে গত ৩রা এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথমে দুর্ঘটনাস্থল ১৬৭ স্ট্রিট এবং হিলসাইড এভিনিউতে, এর পরে স্থানীয় স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই মানববন্ধনে দোষী গাড়ী চালকের শাস্তি দাবী করেন এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হিলসাইড এভিনিউতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন হিলসাইড এভিনিউ সাটফিন ব্লুবার্ড থেকে ১৭৯ স্ট্রিট পর্যন্ত অত্যন্ত ঘনবসতি এলাকা, কিন্তু প্রায় দেখা যায় কিছু কিছু চালক গতিসিমার তোয়াক্ষা না করে দ্রুত গতিতে বেপারোয়া গাড়ী চালায়। স্থানীয় এবং নগর কতৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ আহত মুশরাত হক-এর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন নিসচা উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এ বি এম ওসমান গনি, মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন ও আমজাদ হোসেন সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক খোন্দকার রেজাউল করিম, মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট রুবায়া রহমান, নিসচা সদস্য যথাক্রমে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, মির্জা সাইফুল ইসলাম, সাইদুল আজম শোহন, সমাজকর্মী হাসিনা বিনতে রহমান শিমু, শোভন রায় চৌধুরী, শিবলী নোমানী, আলম মিয়া, অলিভ, প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মুশরাত হক-এর চাচা জনাব মোকাদ্দেস। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মোঃ বেলাল। মানববন্ধন পরিচালনা করেন নিসচা সদস্য সচিব স্বীকৃতি বড়ুয়া।