মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য হাতিয়ার ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরির কাজ চলছে। আগামী জুন মাসের শুরুতেই সেখানে পুনর্বাসন করা হবে এক লাখ তিন হাজার দুইশ রোহিঙ্গাকে। এ জন্য এখন নোয়াখালীর অন্তর্গত ওই চরে খুব দ্রুতগতিতে চলছে গ্রাম তৈরির কাজ। ৫০ হাজার মানুষের আশ্রয় হবে এমন শিবির ইতোমধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলো জুনের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং শুরু হবে পুনর্বাসন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল গতকাল আমাদের সময়কে এসব তথ্য দেন।
সচিব বলেন, স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ায় কাউকেই জোর করে ভাসানচরে পাঠানো হবে না। জাতিসংঘও তা-ই চায়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে স্বেচ্ছায় যেসব শরণার্থী ভাসানচরে যেতে চান, শুধু তাদেরই সেখানে নেওয়া হবে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, পুনর্বাসনকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পেরিমিটার ফেন্সিং ও ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থাসহ প্রকল্প এলাকা মনিটরিংয়ে প্রয়োজনীয় যানবাহনও থাকবে। চরটিকে বসবাসের উপযোগী করার পাশাপাশি নিশ্চিত করা হবে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থাও। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভেসে ওঠা চরটিতে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের অনুমোদনসাপেক্ষে ‘আশ্রয়ণ-৩’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পে মানুষের বসবাসের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে। তার আগে চরের ভূমি উন্নয়ন ও তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। থাকবে ১ হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউস। নির্মাণ করা হবে ১২০টি শেল্টার স্টেশন, মসজিদ। দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য বাসভবন নির্মাণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় থাকবে নলকূপ ও পুকুর।
এ ছাড়াও চারটি এলসিইউ এবং আটটি হাইস্পিডবোট প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া খাদ্য গুদাম, জ্বালানি ট্যাংক, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং ও মুরিং বয়া, বোট ল্যান্ডিং সাইট, মোবাইল ফোন টাওয়ার, রাডার স্টেশন, সিসি টিভি, সোলার প্যানেল, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনও নির্মাণ করা হবে ভাসানচর পুনর্বাসনকেন্দ্রে।
দ্বীপটির অবস্থান নোয়াখালী থেকে প্রায় ২১ নটিক্যাল মাইল, জাহাজের চর থেকে ১১ নটিক্যাল মাইল, সন্দ্বীপ থেকে ৪.২ নটিক্যাল মাইল, পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে ২৮ এবং হাতিয়া থেকে ১৩.২ নটিক্যাল মাইল দূরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here