সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ দেশটিতে চলমান যৌথ সামরিক মহড়া গাল্ফ শিল্ড-ওয়ানের সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ঠিক তার এদিন পর শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। এদিকে চলতি মাসেই কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য এবং ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ সম্মেলনে যোগদিতে অস্ট্রেলিয়া সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের মতো দেশকে বিশ্বে পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা কঠিন। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রথম দিকে বেশ বেকায়দায় থাকলেও এখন অনেকটাই উৎরে গেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্ববাধানের কারণে অনেক ইতিবাচক অর্জন হয়েছে। ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পোষাক শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান রপ্তানি কারক হিসেবে অবস্থান ধরে রাখাসহ দ্বিতীয় রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতেও আগের তুলনায় এগিয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈশ্বিক ফোরামে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে পূর্ব ও পশ্চিমা বিশ্বের যোগসূত্রকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরার অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারই ধারাবাহিকতায় কূটনীতিতে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে নতুন করে যুক্ত করেছে বলে মনে করছেন সাবেক কূটনীতিক ও সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মণির মতে, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশেরও যে বিশ্বসভায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ আছে তা প্রমাণ করেছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে শুধু পররাষ্ট্রে নয়, অভ্যন্তরীনভাবেও আমরা অচিন্তনীয় গতিতে এগিয়ে চলছি। বঙ্গবন্ধু কন্যার লক্ষ্য এই ভূখণ্ডের সব দেশকে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে বাংলাদেশ চমৎকার সমর্থন পাচ্ছে।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দেলোওয়ার হোসেন বলছেন, শুধু গত সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগের প্রতি ইতিবাচক ছিল না। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে আশার পর ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের বিষয়টি পেছনে ফেলে পশ্চিমা দেশগুলো ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের প্রচেষ্টাই নয়, ভাগ্যেরও সহায়তা পাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির জানান, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব যোগ্যতায় বৈশ্বিক ফোরামে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। যে জন্য বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম প্রধানরা নানা বিষয়ে তাকে ফোন করছেন। ইস্যু ভিত্তিক কথা বলছেন। গত একযুগ আগে সেটা কিন্ত আমরা খুব একটা দেখিনি। বিশেষ করে ইয়েমেনে শিশু নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘে সৌদিকে সমর্থন জানানোর মধ্য দিয়েই মূলত বাংলাদেশ সৌদির কাছে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। এ ছাড়া সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ দেশটির সঙ্গে সম্পের্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।