নিউইয়র্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলের ১২ এপার্টমেন্ট নিয়ে তোলপাড়

গত একমাস ধরে কার্যত ‘লাপাত্তা’ সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এই দীর্ঘ সময় তাকে দেখা যায়নি মিডিয়ার সামনেও। তিনি বেঁচে আছেন এবং প্রমোদ বিমানে করে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেছেন, শুধু এই তথ্যটুকুই জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যুবরাজ সালমানের চরিত্রের সঙ্গে এত দীর্ঘ সময় ধরে জনসমক্ষে না আসাটা সত্যিই বেমানান। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কিছু আরব সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে প্রিন্স সালমানকে হত্যা করা হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তার এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে না ইরানের গণমাধ্যম কায়হান। ফাঁস হওয়া একাধিক নথিপত্রের বরাত দিয়ে কায়হান পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রিন্স সালমান নিহত হওয়ার পক্ষে প্রমাণ হাজির করেছে। যুবরাজের নিহত হওয়ার পক্ষে ইরানী গণমাধ্যম কায়হান যেসব যুক্তি দেখিয়েছে তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
১. সৌদি রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনার যেসব ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে তা থেকে দেখা যায়, অস্ত্রধারীদের মোকাবেলায় ট্যাংক এবং যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার করেছে সৌদির রয়্যাল গার্ড। যদিও সেই রাতে রয়্যাল গার্ডকে ঠিক কাদের মোকাবেলা করতে এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল এখন পর্যন্ত তাদের পরিচয় জানা যায়নি। কয়েকঘণ্টাব্যাপী চলমান ওই সংঘর্ষ শেষে রাজপ্রাসাদের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায় একটি প্রমোদ বিমানকে। তবে ওই বিমানটি সেখানে কেবল বিনোদনের উদ্দেশ্যেই এসেছিল, এমন যুক্তি মানতে নারাজ ইরানের গণমাধ্যম।
২. গণমাধ্যমে সরব উপস্থিতি এবং সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য সালমানের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু, বিগত প্রায় এক মাস ধরে তাকে দেখা যায়নি ক্যামেরার সামনে। ইরানের বার্তা সংস্থা মেহর বলছে, এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি কেবলই দুর্ঘটনাবশঃত কিংবা কাকতালীয় নয়!
৩. সৌদি রাজতন্ত্রের সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে দেশটির রাজা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে বন্দি রেখেছিলেন সালমান। বন্দিদশায় তার কোনো খবর জানা যায়নি। কিন্তু, সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে বিন নায়েফ টুইটারে বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। টুইটারে তিনি বলেন, বিন সালমানের এহেন কর্মকাণ্ড সৌদি রাজতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইয়েমেনে একশ’ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ফলে বিদেশি ব্যবসায়ীরা সৌদি আরব ছেড়ে অন্য কোথাও বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন। বিন নায়েফের মতে, ‘সৌদির নিরাপদ বিনিয়োগ সূচকের পতন হয়েছে। জনবিহীন কোনো এলাকা রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় না।’
বিন নায়েফ আরও বলেন, বিন সালমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সৌদি আরবের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। তার বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক দৈন্যতা দুর্দশাগ্রস্ত করবে সৌদি আরবকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনা করলে মুসলমানদের প্রধান দু’টি মসজিদের তুলনায় আল-আকসাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের কোনো রাজা, রাজপুত্র কিংবা সৌদি আরবের কোনো বড় কর্মকর্তাকে আল-আকসার বিষয়ে জনসমক্ষে কোনো সমর্থন ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি। উল্টে, সালমান এবং তার প্রশাসনকে দেখা গেছে আল-আকসার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।
অপ্রত্যাশিতভাবে গৃহবন্দী এবং বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিন নায়েফের এমন সমালোচনা বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দেয়। কারণ, যুবরাজ সালমান তার বিরোধীদের খুব একটা ভালভাবে নেন না। সেখানে, বিন নায়েফের এমন কড়া সমালোচনা সৌদি কর্তৃপক্ষের উচ্চাসন থেকে তার সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
৪. সপ্তাহ দুয়েক আগে হঠাৎ করেই রিয়াদ সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সেখানে বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক হয় বলেও জানায় একাধিক সৌদি গণমাধ্যম। কিন্তু কোনো ছবি ছাড়াই ওই বৈঠকের খবর প্রকাশিত করে তারা!
সর্বশেষ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে কাতার। সৌদির সঙ্গে বৈরী আচরণ নয়, এমনটাই ছিল তাদের অবস্থান। কিন্তু সম্প্রতি নব্বই ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে সৌদি আরবের কোনো শর্ত মানা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে কাতার। কাতারের এমন আচরণও বিন সালমানের অনুপস্থিতি নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহকে ঘণীভূত করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here