বিশ্বনন্দিত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এর প্রচ্ছদে এবার মডেল হয়েছেন সৌদি আরবের এক রাজকুমারী। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কারণ, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি সৌদি আরবে নারী আন্দোলনকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ম্যাগাজিন ভোগ-এর জুন মাসের সংখ্যায় প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন সৌদি রাজকুমারী হায়ফা বিনত আবদুল্লাহ আল-সৌদ। প্রচ্ছদে দেখা গেছে, একটি লাল রঙের হুডখোলা গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে আছেন তিনি। তাঁর পরনে ছিল সাদা রঙের পোশাক, হাতে চামড়ার কালো দস্তানা। সৌদি রাজকুমারী পরেছিলেন হাই হিল জুতা। তবে আরব অঞ্চলে ভোগ ম্যাগাজিনের যে সংস্করণ প্রকাশ করা হয়, শুধু তাতেই দেখা গেছে রাজকুমারীকে।
রক্ষণশীল সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালনার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছে। আগামী ২৪ জুন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সরকারি ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্প্রতি গাড়ি চালানো নিয়ে কিছু নারী আন্দোলনকারীর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশটির কর্তাব্যক্তিরা, বেশ ধরপাকড়ও চলছে। এমন ঘটনার মধ্যেই ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যকে মডেল করা হলো। তা-ও আবার ছবির বিষয়বস্তু হলো নারীদের গাড়িচালনা।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, ভোগ ম্যাগাজিনের এবারের ইস্যু সৌদি আরবের ‘অগ্রদূত’ নারীদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেছে ভোগ ম্যাগাজিন। আইরিশ চিত্রগ্রাহক বুও জর্জ ছবিটি তোলেন। কিম কারদাশিয়ানের মতো সেলিব্রেটি তারকার ছবি তোলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।
সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর মেয়ে হলেন রাজকুমারী হায়ফা। এর আগে আর কোনো ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এই রাজকুমারীকে দেখা যায়নি। ভোগ ম্যাগাজিনকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশের কিছু রক্ষণশীল মানুষ পরিবর্তনকে ভয় পায়। এমন অনেক মানুষ শুধু এ জন্যই পরিচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ধরনের পরিবর্তনকে সমর্থন করি। আমাদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিক রয়েছে। কিন্তু এটিই আমাদের সংস্কৃতি এবং বিচার-বিশ্লেষণের বদলে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।’ জেদ্দার একটি মরু অঞ্চলে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ছবিটি তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজকুমারীর ছবি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ চলতি মাসেই সৌদি আরবে কমপক্ষে ১১ জন নারী আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নারীদের বেশির ভাগই বিভিন্ন অধিকার সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন। সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেওয়া এবং পুরুষদের অভিভাবকত্ব-ব্যবস্থার অবসান চেয়ে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আটক নারীদের মধ্যে চারজনকে মুক্তি দেওয়া হলেও অন্যদের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরবে আন্দোলনকারী ও অধিকারকর্মীদের ওপর চালানো এই ধরপাকড়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হয়েছে। এতে করে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতিশ্রুত সংস্কার কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা প্রকাশিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here