ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের আর ইনসুলিন পাম্পের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। বরং এক কাপ কফি পান করলেই সে সুবিধা পাওয়া যাবে। এমনটাই জানা গেছে সুইজারল্যান্ডের এক গবেষণায়।

১৯ জুন, মঙ্গলবার নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে প্রকাশিত হয় এই গবেষণার তথ্য।
বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট আইএফএল সায়েন্স জানায়, সুইজারল্যান্ডের একদল গবেষক এমন এক ইমপ্ল্যান্ট আবিষ্কার করেছেন, যা ত্বকের সঙ্গে আটকানো থাকবে। রক্তে ক্যাফেইনের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারলেই সে ইমপ্ল্যান্ট থেকে ওষুধ নির্গত হবে। গবেষণার ফলাফল বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন তারা।

সারা বিশ্বে ৪০ কোটি মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শরীর ইনসুলিন রেজিসটেন্ট হয়ে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এতে প্রতিবার খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় হলো, নিয়মিত ত্বক ফুটো করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা। গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকলে একটি পাম্প শরীরে ইনসুলিন প্রবেশ করায় এবং গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকে নামিয়ে আনে। তবে এই প্রক্রিয়াটি তেমন সুবিধার নয়। ফলে এর বিকল্প খোঁজার ইচ্ছে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজিস্ট মার্টিন ফিউসেনেগার এবং তার গবেষক দল।

ওই গবেষক দল মানুষের কিডনির কোষ থেকে এমন এক ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করেন, যা নির্দেশ পাওয়া মাত্র রক্তে ইনসুলিন নিঃসরণ করবে। এরপর এদেরকে ক্যাভিয়ারের (মাছের ডিম) মতো একধরনের কাঠামো দেওয়া হয়। তারা এই ইমপ্ল্যান্ট ১০টি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের ত্বকের নিচে স্থাপন করেন। তাদেরকে বিভিন্ন মাত্রায় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় দেওয়া হয়। এসব পানীয়ের মাঝে ছিল ভেষজ চা, কোক, ইনস্ট্যান্ট কফি, রং চা এবং মিল্কশেক।
মিল্কশেক এবং ভেষজ চা বাদে বাকি সব পানীয় ওই ইঁদুরদের ইমপ্ল্যান্টকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তে ইনসুলিন নিঃসরণ করে। যত বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে তত বেশি ইনসুলিন নিঃসৃত হয়।

ওই ইমপ্ল্যান্টের নির্দেশক হিসেবে ক্যাফেইন কেন ব্যবহার করলেন গবেষকরা? তারা দাবি করেন, কফি, চা বা কোকের মতো পানীয় ছাড়া বেশির ভাগ পানীয়তে তেমন ক্যাফেইন থাকে না। ফলে দুর্ঘটনাবশত এই ইমপ্ল্যান্ট চালু করার ঝুঁকি কম। যখন ওই ব্যক্তি ওষুধ নিতে চান, তখন কফি পান করলেই ইনসুলিন নেওয়া হয়ে যাবে। যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের আর ওষুধ খাবার কথা আলাদা করে মনে করতে হবে না। অনেকেই সকালে ব্রেকফাস্টের পর একবার, লাঞ্চের পর একবার আবার ডিনারে চা বা কফি পান করেন। তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি বেশ সুবিধাজনক।
কফি পান করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিটি অবশ্য আরও কয়েক বছরের আগে বাজারে আসছে না। আরও কিছু টেস্ট এবং ট্রায়ালের পরেই তা চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহারে অনুমতি পাওয়া যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here