বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা আর ঈদ উৎসবের আনন্দে মেতে আছে সবাই। সিনেমাপ্রেমী অনেকেই খেলা রেখে ছুটে চলেছেন সিনেমা দেখতে। গত ১৬ জুন ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ও রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পোড়ামন ২’ ছবিটি। ঢাকার ৪টি হলসহ ঢাকার বাইরে ১৮টি হল মিলিয়ে মোট ২২টি হলে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

টিজার, ট্রেলার দেখে অনেকে ধারণা করছেন ‘গতানুগতিক গল্প ও ধনী গরিবের প্রেম কাহিনীর চকচকে ভাব’ এমনই হবে হয়তো ছবিটি। কিন্তু হলে দেখা গেছে অন্য চিত্র। ছবিটি দেখে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে মানুষ। ছবির গল্প,মেকিং,গান সবকিছুতেই মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক।

এদিকে ছবি মুক্তির পর থেকেই পোড়ামন ২ ছবির পুরো টিম বেরিয়েছেন হল পরিদর্শনে। ঢাকার হলগুলোতে কয়েকবার করে ভিজিট করেছেন এবং দর্শকদের সঙ্গে বসে ছবি দেখেছেন।

ছবি দেখার পর এ ছবির নায়িকা পূজা চেরি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেন, ‘আমরা প্রথমে গেলাম বসুন্ধরায় খুব টেনশনে ছিলাম কি হবে কেমন হবে। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বসুন্ধরার নিচে দেখছি একদম ফাঁকা। শুধু ৩/৪ জন মানুষ। লিফ্ট এ উঠলাম। উপরে গেলাম এবং আমরা সবাই অবাক। ওয়াও এতো মানুষ। সবাই কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন সিনেমা দেখতে এসেছেন সবার মুখে ছিল পোড়ামন ২ দেখতে এসেছি। যাই হোক ভিতরে গেলাম। ভেবেছিলাম ৫ মিনিট দর্শকদের সঙ্গে সিটে বসে দেখবো। ওমা দেখি একটা সিট ও ফাঁকা নেই। কি করবো চলে তো যেতে পারি না। এসেছি দর্শকদের সাথে একটু কথা বলে তো যেতে হবে। তারপর আমরা বসলাম সিঁড়িতে। এবার সময় হলো কিছু কথা বলার। লাইট যেই জালানো হলো। সবাই খুব খুশি হয়ে বললো খুব ভালো। আমাদের আশা পূর্ন হয়েছে।’

পূজা লিখেছেন,‘তারপর চলে এলাম শ্যামলী হলে। গাড়ি থেকে নামার পর পরই সে কী মানুষের চিৎকার। সেলফিতে ঢলাঢলি। ভিতরে ঢুকলাম সে কি মানুষের ভিড় টিকিটের জন্য। হলে যারা থাকে তারা বলছিলেন পর পর তিনটা শো তিনটা শো ই নাকি হাউসফুল। মানুষের এতো ভিড়। আমার মা না পারছে ঢুকতে না পারছে বেরোতে।

হলের ভিতরে ঢুকলাম সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ছবিটি শেষের পর্যায়ে। টানটান উওেজনায় দেখছে।
আমরাও ভেবেছি ছবি যখন শেষ হবে তার ২ মিনিট পরে ঢুকবো।

লাইট জ্বালানোর পর আমি বলে উঠলাম। সত্যি? কারন সবাই চোখের পানি মুছতে মুছতে দাঁড়ায়। কী আর বলবো একটা মহিলা তো আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমি একটু হেসে তার চোখের পানি মুছে দিলাম। সে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন অনেক বড় হও মা। এতো ভীড়ে আসতেই পারছিলাম না। কারো হাত থেকে ঘড়ি পরে যায় কারো জামা ছিঁড়ে যায়। কী আর বলবো।

এরপর গেলাম যমুনাতে। যমুনাতে তো পাগলের মতো ভিড় ইন্টারভেল এ ঢুকলাম। কথা বললাম তাদের সাথে ওমা এখানেও দেখছি চোখের পানির কারনে তারা কথাই বলতে পারছে না। কিন্ত তারা তাদের চোখের পানি নিয়ে একবার জড়িয়ে ধরার জন্য উঠে এলো। তার চিৎকার করে বললো এরকম সিনেমা হলে আমরা বারবার দেখতে আসবো। এবং আরো একটি কথা এ সিনেমা দেখে আপনাদের সবার প্রিয় সিয়ামের মা বাবা কান্না করেছেন এবং তারাও দেখছি কথা বলতে পারছেন না। কী বলবো এটা শুনে আমারও কান্না পাচ্ছিলো।

এটা ছিল ১ম দিনের কথা। তাদের এতোই ভালো লেগেছিল তারা আবার ২য় দিনও ছবি দেখতে তাদের ফুল ফ্যামিলি নিয়ে চলে এলেন। যাক ২য় দিনের কথা পরে বলি আগে ১ম দিনের কথা শেষ করি। এর পর গেলাম গাজিপুরের বর্ষা সিনেমা হলে। ওখানেও দেখছি হাউসফুল। আয় হায় বসবো কোথায়। দেখলাম কোণায় এক ভাঙা বেনচ। যাক আমরা খুশি মতো সেখানে গিয়ে বসলাম। হায় কী হোইহুললর! মনে হচ্ছিলা এক্ষুনি সিনেমা হলটাই ভেঙে পরবে। যাক ভাঙে নি।

আমরা দুইবার দুইবার করে হল ভিজিট করেছি। দুইবারই ছিল হল ভর্তি লোক। ২য় দিনে সিনেপ্লেক্সে সিয়ামের মা বাবা চাচা চাচি সবাই এসেছেন আবার পোড়ামন২ দেখতে। ১ম এ আমি কষ্ট পেয়েছিলাম কারন ১ম দিনে তাদের সাথে আমার দেখা হয়নি ভিড়ের কারনে। যাই হোক ২য় দিনে দেখা হলো সবার সাথে। আমি মুখ ভরা হাসি নিয়ে তাদের সালাম করতে গেলাম , তারা চোখের পানি এবং মুখে হাসি নিয়ে ৫ মিনিট বুকেজড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে ছিলেন। কি আর বলবো সে এক অন্যরকম অনুভূতি। তাদেরকে দেখে আমার সত্যি মনে হচ্ছিল এ পৃথিবীটা আমার। আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বাহিরে এলাম বাহিরে তখন ও দেখি টিকেটের জন্য উপচে পরা ভিড়। হঠাৎ একজন মহিলা মুখ ভরা হাসি নিয়েআমাকে এসে বলে আমি প্রেগনেন্ট অবস্থায় আপনার ছবি দেখতে এসেছি। আমি তখন কী যে বলবো আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। বলাকায় তো একজন ২০ বছর পর সিনেমা দেখলেন। আর ২০ বছর নাকি সিনেমা দেখাটা সার্থক।

ওখানেই দেখা হলো আমার এক আত্নীয়দের সাথে দেখা হলো। এর ও এক বিশাল কাহিনী। তারা ১ম এ গিয়েছিলো সিনেপ্লেক্সে এ কিন্তু টিকেট না পেয়ে যায় যমুনাতে তাদের জন্য দুঃখের কথা ওখানেও তারা টিকেট পায় নি তাই বলাকাতে যায়। অনেক কষ্টের পর তারা ৭ টা টিকেট পায়।

আরো একটি মজার কথা একজন নতুন প্রেমিক প্রেমিকা তারা ১ম মিট করতে এসেছে তো তারা বললো চলো। পোড়ামন ২ মুভি দেখি। দেখার পর ছেলেটা তো পরলো বিপদে কারন তার প্রেমিকা এতোই কান্না করছিলো যে তাকে সিট থেকে উঠানো যাচ্ছিল না। তার পর আমাদের মুভির আরো একটা ভিলেন পিয়াল ভাই তাকে একটা বাচ্চা লাঠি নিয়ে মারার জন্য এসেছে। কারন পোড়ামন ২ এ একটা সিন পিয়াল ভাই সিয়ামকে মারবে। মুভি হিসাবে জানে সুজনকে মারবে। তো এটা দেখে বাচ্চা টা। বললো পেয়েছি কেন তুই সুজনকে মারলি। তারপর পিয়াল ভাই বললো আমি তে সত্যি স্যতি মারি নি। হাহাহা।’’

উল্লেখ্য, ছবিটির সহযোগী নিবেদক হিসেবে আছে দেশের জনপ্রিয় বেকারি পণ্যের ব্র্যান্ড অলটাইম।ছবিটিতে অভিনয় করেছেন নতুন প্রজন্মের অভিনেতা সিয়াম ও পূজা। এতে আরো অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, রেবেকা প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here