১২৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ঐতিহাসিক ওসমানীয় সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বেশির ভাগ এলাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে সগৌরবে টিকে ছিল। ইসলামের সব পবিত্র স্থাপনাসহ আধুনিক সৌদি আরবও এই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। কিন্তু শেষের দিকে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের শৌর্যবীর্য ধীরে ধীরে ক্ষয় পেতে থাকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানির পক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাজয়বরণ করার পর সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন হয়। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্কসহ তুরস্কের সামরিক কর্মকর্তারা ১৯২৩ সালে এক ঘোষণার মাধ্যমে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর তুরস্ক আবারো ইরাক ও সিরিয়াসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, বলকান রাষ্ট্রসমূহ এবং আফ্রিকায় ওসমানীয় যুগের ন্যায় প্রভাব বিস্তারে মনোযোগী হয়। আধুনিক তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তুরস্ককে রাষ্ট্রীয়ভাবে পশ্চিমা রীতিনীতি ও মূল্যবোধের দিকে চালিত করেন এবং সেকুল্যারিজমকে দেশের অন্যতম মৌলিকভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর কামাল আতাতুর্কের উত্তরসূরি ইসমত ইনোনুর হাত ধরে ১৯৪৬ সালে তুরস্কে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা হয়। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক নিরপেক্ষ ছিল। এরপর ১৯৫২ সালে প্রতিবেশী গ্রিসের সাথে তুরস্ক ন্যাটো জোটে যোগ দেয়। দেশকে ধীরে ধীরে ইসলামীকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তুরস্কের পশ্চিমাঘেষা রীতিনীতি পরিবর্তনের জন্য সমালোচকেরা এরদোগানকে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু ন্যাটোর সদস্য হিসেবে সেক্যুলার রাষ্ট্র পরিচয়ে থাকতেই তার দেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জোর দিয়ে জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ১৯৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮০ সালে তুরস্কের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী দেশটির সরকারকে উৎখাত করে।

ক্ষমতায় আসার পর এরদোগান দেশটির সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সীমিত করেন। সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতেই তাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের জুলাই মাসে কিছু বিপথগামী সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা করে। অবশ্য এক সময়ের মিত্র ফতহুল্লাহ গুলেন এই অভ্যুত্থানের নির্দেশদাতা বলে অভিযোগ করেন এরদোগান। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা গুলেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরপর এরদোগান তুরস্কে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অভূতপূর্বভাবে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষকে আটক করেন। ২০১৬ সালে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা এখনো বিদ্যমান আছে এবং নির্বাচনের পর জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া হবে বলে এরদোগান ও অন্যান্য বিরোধী নেতা অঙ্গীকার করেছেন। তুরস্ক এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ লাখ সিরিয়ান উদ্বাস্তুকে নিজের ভূখ-ে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের বেশির ভাগই দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং ইস্তাম্বুলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি দেশটি ইরাক ও আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুদেরও গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া তুরস্ক কয়েক লাখ সিরিয় উদ্বাস্তুকে তুর্কি পাসপোর্টও প্রদান করেছে। তুরস্কের সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কুর্দি জনগোষ্ঠী। কুর্দি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না দাবি করে অবৈধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ১৯৮৪ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং এতে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয়। ২০০৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই এরদোগান কুর্দিদের অভূতপূর্ব অধিকার দিয়েছিলেন এবং তাদের সাথে সংলাপ শুরু করেন। যদিও পরে অস্ত্র বিরতি ব্যর্থ হয় এবং সংঘর্ষ চলতে থাকে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

সূত্র : এএফপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here