আমার বাবা

0
747

মৌসুমী হাসান:

আমার বাবা এস এম হেমায়েত উদ্দিন। একজন মুক্তিযোদ্ধা। বয়সটা খুব বেশিনা। কিন্তু বার্ধক্য তাঁকে আলিঙ্গন করেছে। জন্মের পরে কখনো তাঁকে নামাজ কাজা করতে দেখিনাই। মিথ্যা বলতে শুনিনাই। যা তাঁর সন্তানদের মাঝেও সংক্রামিত হয়েছে। জীবনের অনেক মুল্যবান সময় অতিবাহিত করেছেন সংসার আর অপরের জন্য। মনের একটা সুপ্ত আকাংখা হজ্জ্ব না করে কাফের হয়ে মরবেন না। সে আকাংখা পূরন হবার আগেই এমন দুর্বলতা তাঁকে গ্রস করলো যে একা হজ্জ্ব করা অসম্ভব ছিলো। উপায়ন্তর আমি তাকে নিয়ে এলাম, পুর্বে অভিজ্ঞতা ছিলো বলে সাহস করলাম। নিয়ত করলাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করলেন।আব্বাকে নিয়ে এক দুঃসাহসিক অভিযানে পা রাখলাম। সমস্ত পৃথিবীকে পেছনে ফেলে ছুটে এলাম এই পবিত্র মক্কা-মদিমায়। এতোটা দুঃসাহসিক হয়ে উঠবে ভাবতে পারি নাই। অনেক দিন পরে আব্বাকে দেখেছি। আর আমার বাসায় আসবার পরে আব্বাকে আমি খুব সময় দিতে পারিনাই। কেবলই সিংগাপুর থেকে ফিরেছিলাম। অফিসেরও অনেক চাপ ছিলো। বাসা থেকে বেরুতে বেরুতে আব্বাকে যখন বিভিন্ন বিসয় গুলো বুঝিয়ে বলবার সুযোগ এলো তখন কিছুটা এবং তার পরে জেদ্দা পার হয়ে মক্কায় ঢুকতে ঢুকতে আরো স্পস্ট ভাবে বুঝলাম শুধু চলাচল না, মানসিক ভাবেও তিনি দারুণ ভাবে বিপন্ন। তারপরে শুরু হলো আমার একলা আব্বাকে নিয়ে পথ চলা। প্রথমেই একটা হুইলচেয়ার নিয়েনিলাম। আমাদের গ্রুপের কিছু মানুষ বলতে শুরু করলো আমি একা কেনো বাবা কে নিয়ে আসবো?
বলুন, বাবা আমার, দায়িত্ব কেনো অন্যের হবে!!

বাবাকে নিয়ে মক্কা মদিনায় যখন নামাজে যেতাম, ওনাকে আলাদা রাখতে ভয় হতো। পাছে হারিয়ে যায়। তিনি কিছু মনে রাখতে পারতেন না। মাঝে মাঝে আমাকেও চিনতেন পারতেননা। রাতে ঘুমাতে চাইতেন না। আম্মা ছাড়া এ দায়িত্ব পালন দিন দিন কঠিন হতে লাগল। তিনি দেশে ফিরে যেতে চাইতেন প্রতিনিয়ত। ঘরে থাকতে চাইতেন না একদম । একবার আমি ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখি তিনি নিচে নেমে গেছেন। মদিনা মসজিদে এত্ত এত্ত লোকের ভেতর তাকে খুঁজে পাওয়াটা আল্লাহর রহমত ছিলো। একা হোটেল চিনে আসবার অবস্থা তাঁর ছিলো না। ওই সময়ে ও তার আগে পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় ও অন্যান্য দেশের প্রচুর লোকের সাহায্য পেয়েছি। আল্লাহ তাদের হেফাজত করুন।

খুব কস্ট হোলেও সুন্দর ভাবে আমাদের মকবুল হজ্জ্ব এর সমস্ত কাজ শেষ হলো। দেশে ফিরবো। মক্কা ছেড়ে যেতে মন চায়না। তারপরেও আব্বার কথা ভেবে খুব ভালো লাগছে। ওনার মন ছুটে গেছে নিজের দেশে… যেখানে তাঁর পায়ের চিহ্ন আঁকা। যেখানে মসজিদের পথ এখনো অপেক্ষা করে তাঁর জন্য ফজর থেকে এশা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here