কোনো ধরনের কর্মসূচি ছাড়াই সিলেট থেকে যাত্রা শুরু করলো নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বুধবার দুপুর ২টা থেকে সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে শুরু হওয়া সমাবেশ কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। সমাবেশের সকল বক্তার কণ্ঠে ছিল অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপক্ষে ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রদানের আহ্বান।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানে ক্ষমতার মালিক জনগণ উল্লেখ থাকলেও আদতে এর মালিকানা জনগণের নেই। এ মালিকানা পুনরুদ্ধারের জন্য দেশে সত্যিকারের নির্বাচন হতে হবে। জনসাধারণের ভোটের অধিকারের জন্য সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনতে মাঠে নেমেছি। এর জন্য দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করেছি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আবারো দেশের মালিক হব।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ এ নেতা বলেন, কতিপয় স্বার্থান্বেষী নিজেদের উন্নয়নের জন্য জনগণকে বঞ্চিত করে রাখছে। বিজয় আমাদের অনিবার্য।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রা শুরু হলো। নতুন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, তফসিলের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেওয়া হবে না। আমাদের লক্ষ উন্নয়নধর্মী রাষ্ট্র গঠন করা।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যমত নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি ও স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশটা ডাকাতের হাতে পড়েছে। দেশকে বাঁচাতে হলে জনগণকে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সরকার বিভিন্নভাবে উস্কানি দেবে, তাদের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করে বলেন, দেশ এখন গভীর সংকটে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ঠেকাতে আজ সিলেটের সকল পথ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বাস, টেম্পু থেকে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও জনগণের জোয়ার থামানো যায়নি।

তিনি বলেন, এবার আর একদলীয় নির্বাচন করা যাবে না। ওয়াকওভারের স্বপ্ন সফল হবে না। ওয়াকওভার নিয়ে ক্ষমতায় কেউ থাকতে পারবে না।

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সাথে কথা বলেন। কথা না বললে কিভাবে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয়, তা দেখবেন।

মান্না বলেন, আমরা একদিনের গণতন্ত্র চাই না, আমরা সারা বছরের গণতন্ত্র চাই।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও আমান উল্লাহ আমান।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে সামনে রেখে দুপুর ১টার থেকে মিছিলসহকারে বিএনপি নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে থাকেন। আড়াইটার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন সামান্য আহত হন। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঠে। নেতাকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করলে মঞ্চ থেকে নেতারা মাইকে পুলিশকে লাঠিচার্জ না করার আহ্বান জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমাবেশস্থলসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নজরদারি করা হয়।

বুধবার ভোরে সিলেট পৌঁছে মাজার জিয়ারত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here