যুক্তরাষ্ট্রে আজ কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ কক্ষ সিনেটের এ নির্বাচন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো ব্যাপক না হলেও একে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ওপর ভোটারদের আস্থার পরিমাপক হিসেবে দেখা হয়। যদি এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হারে, তাহলে কংগ্রেসের ওই দুটি কক্ষই চলে যাবে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের হাতে। তাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার ক্ষমতার মেয়াদের বাকি দু’টি বছর খুব জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হবে। খবর সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট।

এবার নির্বাচনী প্রচারণাও ছিল জমজমাট। প্রচারণায় এক দল আরেক দলকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছে। এমনকি প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জরিপে ডেমোক্র্যাটরা এগিয়ে আছেন। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মিসৌরি, নর্থ ডাকোটা এবং ইন্ডিয়ানা রাজ্য দলটির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে ডেমোক্র্যাটদের বর্তমানের চেয়ে ২৩ আসন বেশি পেতে হবে। অন্যদিকে ধারণা করা হচ্ছে সিনেটে রিপাবলিকানরা তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। ৫০০ কোটি ডলারের নির্বাচনে জয়ের আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষ নেতা ন্যান্সি পেলোসিও ভোটে জয়লাভ করবেন বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় প্রতি চার বছর পরপর। তবে কংগ্রেসের দুই কক্ষে (উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ) ভোট হয় দুই বছর পর পর। ভোটের সময়টি প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে পড়ে। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের (৪৩৫টি) সবগুলো আসনে এবং সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৫ আসনে ভোট হচ্ছে। নতুন কংগ্রেসের অধিবেশন বসবে আগামী জানুয়ারিতে।

নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু :এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে ওঠে স্বাস্থ্থ্যসেবা কর্মসূচি, অর্থনীতি এবং অভিবাসন। সিএনএনের এক জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানরা অভিবাসন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে একমত। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই ইস্যুতে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এবার ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ইস্যুতে ভোটাররা সমর্থন দিতে পারেন। তবে স্ব্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং অর্থনীতি ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি নিয়ে রিপাবলিকানরা বিভক্ত।

জরিপে এগিয়ে ডেমোক্র্যাটরা :বর্তমানে প্রতিনিধি পরিষদের ১৯৩টিতে ডেমোক্র্যাট এবং ২৩৫টি রিপাবলিকানদের। আর সিনেটে ৪৯ ডেমোক্র্যাট এবং ৫১টি রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোন দলের হাতে সিনেটে ৫১টি এবং প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮টি আসন থাকতে হয়। নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত জিতেন এমন আসন ১৮৭টি। ডেমোক্র্যাট ভাবাপন্ন ১৫টি এবং ডেমোক্র্যাটরা জিততে পারেন এমন আসন ৫টি। জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ৩১টিতে। রিপাবলিকানরা জিতেন এমন আসন ১৫৩টি। রিপাবলিকান ভাবাপন্ন ২২ এবং রিপাবলিকানরা জিততে পারেন ২২টিতে। সিনেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ৬টিতে। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজের জরিপে দেখা যায়, প্রতিনিধি পরিষদে ৫০ ভাগ নিবন্ধিত ভোটার ডেমোক্র্যাট এবং ৪৩ ভাগ ভোটার রিপাবলিকান প্রার্থীদের সমর্থন করেন। আরেকটি জরিপে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ৫১ ভাগ এবং রিপাবলিকানদের প্রতি ৪৪ ভাগ সমর্থন আছে। যদিও ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমেছে। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে। সিনেটে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ঘরে-বাইরে কী প্রভাব পড়বে :নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল জিতলে ঘরে-বাইরে তার ভাবমূর্তি বাড়বে। নির্বাচনে জয় দেশে ট্রাম্পের যে আধিপত্য আছে তা বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরবে। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা বিশ্বমঞ্চে আরো আধিপত্য খাটাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here