মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচি নেপাল সফরে রয়েছেন। এ সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সামনে তুলে ধরার জন্য নেপালের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক দুটি গ্রুপ। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর নেপাল সরকারের চাপ সৃষ্টি করা উচিত বলে দাবি করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট। মানবাধিকার গ্রুপ দুটি বলেছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে সুচির দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত নেপাল সরকারের। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার সুষ্ঠু তদন্তেরও আহ্বান জানানো উচিত।
গত বছর ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা। এতে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
এ নিয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানের সময় রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনারা। চালিয়েছে হত্যাযজ্ঞ। করেছে গণধর্ষণ। কিন্তু মিয়ানমারে বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি। মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নিষ্পেষণে সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ আছে এ সরকারের বিরুদ্ধে।
অং সান সুচি এমন এক সময়ে নেপাল সফরে, যখন বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া থমকে আছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতকরণে ঘাতটি থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের মুখপাত্র মোহনা আনসারি এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বাস্তু ও দেশ ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন ও নৃশংসতার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে কথা বলা উচিত নেপাল কর্তৃপক্ষের। ভূ-রাজনৈতিক ফ্যাক্টরগুলোর কারণে মানবাধিকার বিষয়ক ইস্যুগুলোর ওপর প্রভাব পড়া উচিত নয়। এ বিষয়ে অবশ্যই তার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে নেপাল সরকারকে।
৩০ নভেম্বর থেকে ৩ রা ডিসেম্বর পর্যন্ত কাঠমান্ডুতে হচ্ছে ‘এশিয়া প্যাসিফিক সামিট ২০১৮-নেপাল’। এতে যোগ দিতে নেপাল গেছেন অং সান সুচি। সেখানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাইওয়ালি সহ সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শিডিউল রয়েছে সুচির।
মোহনা আনসারি বলেছেন, বর্তমানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের একটি সদস্য নেপাল। এ জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আছে। এ ইস্যুটি তুলে ধরা নেপালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর প্রথমবারের মতো ওই পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে নেপাল। যদিও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে, তারপরও কয়েক শত রোহিঙ্গা ভারতের ভিতর দিয়ে নেপালে প্রবেশ করেছেন। বর্তমানে কাঠমান্ডুর কাপান এলাকায় এমন প্রায় ৪০০ শরণার্থী আছেন।
ওদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক নিরাজন থাপালিয়া বলেছেন, অং সান সুচির সামনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরা উচিত নেপাল কর্তৃপক্ষের। তার ভাষায়, নির্যাতিতদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত নেপালের। তার অভিযোগ, সেনাবাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত অং সান সুচি। আর তাই তিনি ভিকটিমদেরকে সুবিচার নিশ্চিত করতে অনীহা দেখান। উল্লেখ্য, অং সান সুচিকে দেয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দ্য এম্বাসেডর অব কনসায়েন্স এওয়ার্ড’ গত ১২ই নভেম্বর কেড়ে নেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।