ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির হয়ে লড়া গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার ভোটসংখ্যা দেখে আঁতকে উঠেছেন। বলেছেন, তিনি ১৬ হাজার ভোট পাওয়ার মতো প্রার্থী নন। বলেছেন, প্রচার চলাকালে তার পক্ষে যে মিছিল হয়েছিল, সেখানেও এর চেয়ে বেশি মানুষ এসেছিল। সেই ভোট কোথায় গেল সে প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

ঢাকা টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, রবিবারের ভোটের যে ফল দেওয়া হয়েছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

১৯৯১ সাল থেকে তিনটি নির্বাচনে এই আসনে জিতেছিল বিএনপিই। তবে ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর আসনটি দখলে নেন নৌকার নসরুল হামিদ বিপু। ওই বছরও তিনি হারান গয়েশ্বরকে।

সে সময় বিপু পেয়েছিলেন এক লাখ ২৩ হাজার ৩০২ ভোট। আর গয়েশ্বর পান ৭৮ হাজার ৮১০ ভোট।

রবিবারের ভোটে বিপু পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৩৫১ ভোট। অর্থাৎ তার ভোট বেড়েছে ৯৮ হাজার ৪৯ ভোট। আর গয়েশ্বরের পক্ষে পড়েছে ১৬ হাজার ৬১২ ভোট। অর্থাৎ তার ভোট কমেছে ৬২ হাজার ১৯৮টি।

গয়েশ্বর বলছেন, এটা বিশ্বাস করার মতো নয়। বলেছেন, ‘সব বাদ দিলাম। প্রচারণার শেষ দিন যে পরিমাণ নেতাকর্মীকে নিয়ে মিছিল করলাম, তাদের ভোট কোথায় গেল? আমার কি ১৬ হাজার ভোট পাওয়ার কথা?’

এই আসনটিতে দুজনই তাদের নিজ দলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। নির্বাচনী এলাকাতেও তাদের দুজনেরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-৩। এই নির্বাচনী এলাকার ভোটারসংখ্যা তিন লাখ ১১ হাজার ৬৪৭। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৩ আসনে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী বোরহান উদ্দিন আহমেদ গগন। এর পর থেকে কয়েক দশক আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ পরপর তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজিত করেছিলেন বিএনপির আমান উল্লাহ আমান। পরে সীমানা নির্ধারণের কারণে আমান ঢাকা-২ আসনে চলে যান। এই আসনে লড়তে শুরু করেন গয়েশ্বর।

নানা বাধাবিঘেœর মধ্যেও গয়েশ্বর এই আসনে বেশ ভালোভাবেই প্রচার চালান। শেষ দিকে তার ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। মাথায় আঘাতে রক্তাক্ত হয়েও তিনি থেমে থাকেননি। শেষ দিন মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে নির্বিঘেœ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে যান তিনি।

প্রচারের শেষ দিকে ঢাকায় বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র গয়েশ্বরই মিছিল করেন। আর সেই মিছিল বেশ বড়ও ছিল।

জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও ভোটের দিনের চিত্র দেখে হতাশ হয়ে কেন্দ্রের কাছে গিয়েও ভোট না দিয়ে ফিরে আসেন বিএনপির এই ডাকসাইটে নেতা।

গয়েশ্বর বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম নেতাকর্মীরা ভোট দিতে পারলে নিজে ভোটটাও দেব। কিন্তু কেন্দ্রে যাওয়ার পথে দেখলাম, বেশ কয়েকজন নিজের ভোট দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তখন আর আগ্রহ থাকল না। ফিরে এলাম। কারণ সাধারণ মানুষ যদি নিজের ভোট দিতে না পারে, আমি ভোট দিয়ে কী করব?’

নির্বাচনে হারলেও এ নিয়ে আক্ষেপ নেই তার। বললেন, ‘কেমন নির্বাচন হয়েছে, কোন লেভেলের কারচুপি হয়েছে সারা দেশের মানুষ দেখেছে। তারা বোকা না। সব বোঝে। আর এই জয় নিয়ে উল্লসিত হওয়ারও কিছু নেই।’

রবিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিস্ময়কর খারাপ ফলাফল করেছে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জিতেছেন কেবল ছয়জন, যাদের একজন শরিক দলের নেতা। বিএনপির নিজের প্রার্থী কেবল পাঁচজন। জামায়াতসহ জোটের শরিকদের নিয়ে তারা ভোট পেয়েছে সার্বিক ভোটের ১২.৫ শতাংশ।

বিএনপির অভিযোগ, আগের রাতে কেন্দ্রে গিয়ে সিল মারা, তাদের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার কারণে এই ফলাফল হয়েছে। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ভোটের দাবি জানিয়েছে তারা।

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি, জঙ্গি তোষণে হেরেছে বিএনপি।–

সুত্র: ঢাকাটাইমস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here