কক্সবাজারের উখিয়ায় খালে গোসল করতে গিয়ে পাড় ধসে মাটিচাপায় ভোইবোনসহ তিন রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে।

বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে উখিয়ার থাইংখালী-তেলখোলা সড়কের তাজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং-১৩ সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো- তাজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-২ ব্লকের ইউনুছের শিশুকন্যা রুফিয়া (৬), শিশুপুত্র মো. রোহান (৪) ও পার্শ্ববর্তী সি-২ ব্লকের ওবাইদুল্লাহর শিশুকন্যা আসমা বেগম (৫)।

ওই এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে খালের পারের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরেছে। খালে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় পানির গর্ত। এসব গর্তে ৩ রোহিঙ্গা শিশু গোসল করতে গেলে হঠাৎ পার্শ্ববর্তী পার ধসে মাটি চাপা পড়ে তারা।

মুমূর্ষু অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৩ শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।

সরজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে বিভিন্ন স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাইংখালী স্টেশনের ব্রিজ থেকে হাছু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত সরকারি বালু ইজারা থাকলেও একশ্রেণির অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে ম্যানেজ করে তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শুরু করে তেলখোলা চাকমাপাড়া পর্যন্ত অন্তত ১২টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যার ফলে খালের পারের বিভিন্ন স্থানে বড় আকারে ভাঙন ধরেছে। খালের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল পানির গর্ত।

এ নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও কর্ণপাত করেননি সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। যার ফলে এ দুর্ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান মাঝি মো. আলী জানান, দুপুর ১টার দিকে ডাব্লিউএফফির ত্রাণ নিতে স্বজনদের সঙ্গে বের হয় ওই ৩ শিশু। কিন্তু খেলার চলে গোসল করতে তারা ৩ জনই নেমে পড়ে খালের পানির গর্তে। এ সময় বিশাল মাটির একটি অংশ ভেঙে তাদের ওপরে পড়লে চাপা পড়ে এসব শিশুরা।

তিনি জানান, ঘণ্টাখানেক তাদেরকে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ার পর ওই স্থানে মাটির একটি অংশ ধসে পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে কুড়াকুড়ি করে। পরে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সেখান থেকে প্রায় মৃত অবস্থায় শিশু তিনটিকে উদ্ধার করে তাজনিমারখোলা এমএসএফ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লাশগুলো উদ্ধার করে প্রথমে তাজনিমারখোলা এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তারিকুর রহমান বলেন, খাল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যদি অবৈধ বালু উত্তোলন করে থাকে- তাহলে অবশ্যই সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here