ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার পদে আবারও মাফ মিসবাহ উদ্দিন নির্বাচিত

0
239

বাংলা খবর ডেস্ক:
নিউইয়র্ক সিটির ৫৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট (ডিসি)-৩৭ এর টানা ৬ষ্ঠ বারের মত ট্রেজারার নির্বাচিত হয়েছেন মাফ মিসবাহ উদ্দিন। গত ২২ জানুয়ারী এ নির্বচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মাফ মিসবাহ উদ্দিনের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৩,৩৩২ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মিশেল ফেডার পেয়েছেন ১৬,১৮৮ ভোট। এ পদে অন্য আরো দু’প্রার্থী মারিয়া রোডরিগেজ ৪.৭৬২ ভোট এবং লিন্ডা গনকেলভেস ১৬১৭ ভোট পেয়েছেন।
ডিসি-৩৭ এর মেম্বার সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার। নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত টিচার এবং পুলিশ অফিসার ছাড়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী (সাধারণ কেরানী থেকে ইঞ্জিনিয়ার, সাইন্টিস্ট পর্যন্ত) ডিসি-৩৭ এর সদস্য।
২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশী-আমেরিকান মাফ মিসবাহ উদ্দিন ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কিংবদন্তী শ্রমিক নেত্রী লিলিয়ান রবার্টস তার শ্রম আন্দোলনে ৬০ বছর পূর্তির পর ২০১৪ সালে অবসরে যান। লিলিয়ান রবার্টস তার জীবনের শেষ পর্যায়ে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর থাকাকালে মাফ মিসবাহ উদ্দিন তার সাথে কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই এ পদে প্রথম নির্বাচিত হবার বিরল সম্মান লাভ করেন।
এছাড়া তিন বছর মেয়াদী ডিসি-৩৭ এর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন শাউন ফ্রাঙ্কুইস। তার প্রাপ্তভোট ৭৫,২৯৫। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব ইডেল রিপিগেজ পেয়েছেন ৪০,৭২৪ ভোট।
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে হেনরি গ্যারিডো ৯০,৮০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব কাইল ড্যারেন সিমন্স পেয়েছেন ২৫,২১০ ভোট। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে গ্যারিডো এবার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হলেন। গারিডো-উদ্দিনের এ প্যানেল থেকে ২০টি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও সবাই নির্বাচিত হয়েছেন।
ডিসি ৩৭ নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে শক্তিশালী ইউনিয়ন। ডিসি-৩৭ এর ১ লাখ ২৬ হাজার সক্রিয় সদস্য এছাড়াও ৬০ হাজার অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাদের নন ভোটার সদস্য। এসকল সদস্যের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেনিফিট পরিচালনা করেন ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার। সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় এ নেতা কর্মচারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামী দিন গুলোতে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মাফ মিসবাহ উদ্দিন নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত একাউনটেন্ট, স্টাটিস্টিশিয়ান, অ্যাক্টুয়ারিস এবং ট্যাক্স অডিটর ইউনিয়ন লোকাল ১৪০৭ এর টানা ৭ম বারের মত নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশী-আমেরিকান মাফ মিসবাহ উদ্দিন লোকাল ১৪০৭’র প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ পদে নির্বাচিত হবার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন। সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
নিউইয়র্কে ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত লোকাল ১৪০৭ এ প্রতিনিধিত্ব করেন ২৫০০ জন একাউনটেন্ট, অ্যাক্টুয়ারিয়াল স্পেশালিস্ট, বুকশকিপার, বিজনেস প্রমোশন কো-অর্ডিনেটর, কলেজ একাউনটেন্ট, ইউনিভার্সিটি প্যারোল এনালিস্ট, অর্থনীতিবিদ, ফাইনান্স এনালিস্ট, ইনভেস্টমেন্ট এনালিস্ট, ম্যানেজমেন্ট অডিটর, পার্সেসিং স্পেশালিস্ট, রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট এক্সজামিনার, স্ট্যাটিস্টিক্স, সিস্টেম এনালিস্ট ফাইন্যান্স, ট্যাক্স অডিটর এবং ওয়ার্কার্স কমপ্লেক্সেস বেনিফিট এক্সামিনারগণ। লোকাল ১৪০৭ এর সদস্যরা সিটিওয়াইড মেওরাল এজেন্সি, হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল কর্পোরেশন, শিক্ষা বিভাগ, হাউজিং অথরিটি, ট্রানজিট অথরিটি, স্কুল কন্সট্রাকশন এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে কর্মরত।
সিটি মেয়রের অফিসের মাধ্যমে সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ, হেলথ ইন্সুরেন্স এবং পেনশন সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কাজ করেন লোকাল ১৪০৭ এর প্রেসিডেন্ট।
প্রতিটি সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ সদস্য রয়েছেন যার ফলে কোনও প্রাার্থীকে ডিসি ৩৭ এর পৃষ্ঠপোষকতায় বিজয়ী করা সহজ হয়।
এ গুরত্বপূর্ণ পদ দু’টি শুধু বাঙ্গালী হিসেবেই নন, এশিয়ান আমেরিকান হিসেবেও একমাত্র মাফ মিসবাহ-ই অলংকিত করেন। এ পদ দু’টি এর আগে আমেরিকান শ্বেতাঙ্গদের করায়ত্তে ছিলো। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বয়ে এনেছেন বাংলাদেশীদের জন্য বিরল সম্মান, অনেক সুফল। কমিউনিটি ও দেশের উন্নয়নে রেখে চলেছেন নানামুখি অবদান।
মাফ মিসবাহ উদ্দিন নির্বাচিত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে বলেন, ”ডিসি-৩৭’র সম্মানিত সদস্যরা আজ আমাকে যে বিপুল বিজয় এনে দিয়েছেন তার জন্য আমি অত্যন্ত সম্মানিত এবং গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন. আমাকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য প্রত্যেককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার সদস্যদের জন্য বিগত বছরগুলোতে কঠোর পরিশ্রম করেছি, যাতে তাদের অধিকার ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয়। ভবিষ্যতেও সে কর্মধারা অব্যহত থাকবে।”
মাফ মিসবাহ উদ্দিন বিবৃতিতে বলেন, ”এটি কেবল নিছক একটি কাজ নয়, এটি একটি মহান দায়িত্ব। এই কাজে আমি সদা নিজকে বিলিয়ে দেই। যা আমাকে আনন্দ দেয়।”
মাফ মিসবাহ উদ্দিন আরো বলেন, ”আমি অতীতের ন্যায় আপনাদের প্রত্যেকেরই প্রতিনিধিত্ব করবো, কেউ আমাকে ভোট দিয়েছে কিনা, সমর্থন করেছে কিনা -এটা কোনো মূখ্য বিষয় নয়। আমি সকলের প্রতিনিধি হিসেবে আমার সম্ভাব্য সর্বোত্তম সেবা দিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।”
মাফ মিসবাহ উদ্দিন মূলধারায় নিজের এবং বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। মূলধারায় সফল রাজনীতিক মাফ মিসবাহ উদ্দিন ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত মূলধারায় দক্ষিণ এশিয়ার ইমিগ্র্যান্টদের একমাত্র সংগঠন অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার -অ্যাসাল’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট। অ্যাসালের ১০ টি চ্যাপ্টারের মাধ্যমে ৫টি স্টেটে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কমিউনিটির সুযোগ-সুবিধা, অভাব-অভিযোগ মূলধারার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন-যাপনকারী সাউথ এশিয়ানদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে সংগঠনটি। অ্যাসাল’র সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে কংগ্রেসম্যান, স্টেট সিনেটর সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অনেকে ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে অ্যাসাল’র আজীবন সদস্য শেখ রহমান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ার সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-ফাইভ থেকে এবং স্ট্যাটান আইল্যান্ড থেকে রোজ ম্যাক্স কংগ্রেসম্যান হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
কিংবদন্তীতুল্য এশিয়ান-আমেরিকান মূলধারার রাজনীতিক মাফ মিসবাহর প্রবাস জীবনে শুরুটা অন্য আর দশ জনের চেয়ে কিছুটা আলাদা। তিনি আমেরিকার জীবনের শুরুটা করেছেন গ্রাজুয়েট টিচিং এসিসটেন্সশীপ এর মাধ্যমে। ওপরের ক্লাসে পড়েছেন, নিচের ক্লাসে পড়িয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বলস্টেট ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েট টিচিং এসিসটেন্সশীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্ট। এর আগে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিতে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমোগ্রাফিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। এ বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে আমেরিকা আসার আগ পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডবিøউএইচও (হু) এর একটি প্রকল্পে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। মাফ মিসবাহ ১৯৮৬ সালে বল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একচ্যুারিয়াল সাইন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এটি ছিল তার তৃতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি। ওই বছরই তিনি নিউইয়র্ক সিটির পেনশন ডিপার্টমেন্টে একচ্যুয়ারি হিসেবে যোগ দেন। এর সুবাধে তিনি নিউইয়র্ক সিটির স্পন্সরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমেরিকায় থাকার সুযোগ লাভ করেন। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
নিউইয়র্ক সিটিতে আসার পর ১৯৮৬ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে। ওই সময় ব্রঙ্কসে বাংলাদেশীদের বসবাস ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছিনতাই, মারামারি,খুন-খারাবি ছিল বলতে গেলে নিত্য দিনের ঘটনা। এর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হিসেবে কমিউনিটির পাশে দাঁড়ান মাফ মিসবাহ। নির্বাচিত হন পার্কচেস্টার কন্ডোমিনিয়াম’র বোর্ড অব ডাইরেক্টর। ১৯৯২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এক যুগ তিনি সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্রঙ্কসকে সন্ত্রাস, ছিনতাইমুক্ত নিরাপদ এলাকা হিসেবে গড়তে নের্তৃত্ব দেন। মূলতঃ তখন থেকেই বাঙ্গালীরা ব্রঙ্কসকে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেন। নিউইয়র্কের মধ্যে ব্রঙ্কস এখন বাংলাদেশী অধ্যুষিত অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
মাফ মিসবাহ জানান, তিনি ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন ছাড়াও লোকাল ৮০৮ এর বিল্ডিং মেইনটেনেন্স পোটার হিসেবে বেশ ক’জন বাঙ্গালীকে চাকরি দিয়েছেন। সেখানে মুসলমান কর্মচারীদের জন্য জুমার নামাজ আদায়েরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
তিনি জানান, লেবার মুভমেন্টে আসার পর তার এবং অন্যান্য ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি লিডারদের প্রচেষ্টায় সিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটিতে দু’ঈদে ৩দিন করে ফ্রি পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমানে সিটির মুসলমানরা এ সুবিধা ভোগ করছেন।
মাফ মিসবাহ জানান, অন্যান্য কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সিটি কাউন্সিলে দু’ঈদের ছুটির বিলটি ৪৯-০ ভোটে গৃহীত হয়। কিন্তু ততকালীন মেয়রের ভেটোর কারণে বিলটি আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে মেয়র বিল ডি বøাজিওর সময় নিউইয়র্ক সিটিতে ঈদের ছুটি কার্যকর হয়।
মাফ মিসবাহ জানান, ২০০৮ সালে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক ডেলিগেট হিসেবে কলারাডোর ডেনবার্গে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে একমাত্র বাঙ্গালী ডেলিগেট হিসেবে যোগ দান করেন তিনি। ওই সম্মেলনে অন্যান্য কমিউনিটির সরব প্রতিনিধিত্ব থাকলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার তেমন প্রতিনিধিত্ব না দেখে তিনি হতাশ হন। ওই সময়ই দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটিকে কিভাবে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে ক্ষমতাশালী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। ওই বছরই তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত ৮টি দেশের অভিবাসীদের সমন্বয়ে গঠন করেন ’এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’-অ্যাসাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাফ মিসবাহ অ্যাসালের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অ্যাসালের মাধ্যমে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কমিউনিটির সুযোগ-সুবিধা, অভাব- অভিযোগ মূলধারার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য অ্যাসাল আমেরিকান কংগ্রেসে লেখা-লেখি করে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন-যাপনকারী সাউথ এশিয়ানদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে সংগঠনটি। ইরাক ও লিবিয়ায় যুদ্ধকালীন আটকা পড়াদের উদ্ধারে, বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শিশু শ্রমিকদের কাজের পরিবেশসহ বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমেরিকান কংগ্রেসে লেখা-লেখি করে অ্যাসাল। এতে অনেক সুফলও পাওয়া গেছে।
মাফ মিসবাহ জানান, তার সংগঠন ডিসি-৩৭ এর পক্ষ থেকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রলয়ংকারী সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ হাজার ডলার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়।
তিনি জানান, কুইন্সে এসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-২৪ পুনর্গঠনে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে অ্যাসাল। যার ফলে ওই আসনটি এখন দক্ষিণ এশিয়ানদের সম্ভাব্য আসন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। মাফ মিসবাহ বলেন, অ্যাসাল ড্রিম এ্যাক্টের জন্য কাজ করেছে। নিউইয়র্ক স্টেটে বর্তমানে বিলটি পাশ হওয়ার ফলে নিউইয়র্কে অবৈধভাবে অবস্থান করা ১৫-৩৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা আমেরিকান ছাত্র-ছাত্রীদের মতই সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। মাফ মিসবাহ জানান, অ্যাসাল সিটি কর্র্তৃক বিভিন্ন স্কুল ক্লোজ করা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও প্রবল প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
তিনি জানান, অ্যাসালসহ অন্যান্য কমিউনিটি নের্তৃবৃন্দ নিউইয়র্ক স্টেট মুসলিম এডভাইজারী কাউন্সিল বিল পাশে জোড়ালো ভ‚মিকা রাখছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশীদের সাহায্য কামনা করেছেন তিনি। বিলটি পাশ হলে নিউইয়র্ক স্টেট এবং সিনেটে ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন বিল আসলে মুসলিম কাউন্সিল তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। এখন এ্টা পাশ করতে হলে নিউইয়র্ক স্টেটে বসবাসরত বাংলাদেশীসহ প্রায় ১০ লাখ মুসলমানকে সক্রিয় ও সোচ্চার হতে হবে।
মাফ মিসবাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে করে কোন লাভ নেই। এ রাজনীতি কমিউনিটি কিংবা দেশের কোন কল্যাণে আসছেনা। বরং এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের ভাবমূর্তি ভ‚লুন্ঠিত করা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে কমিউনিটি এবং দেশের উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখতে হলে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে নের্তৃত্বে আসতে হলে বাংলাদেশীদের দেশীয় রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক মত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কমিউনিটি ও দেশ সেবায় সত্যিকার ভূমিকা রাখতে হলে বাংলাদেশী আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে নের্তৃত্বের আসনে আসতে হবে।
তিনি বাংলাদেশীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহŸান জানিয়ে বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মূলধারায় প্রতিনিধিত্ব করার। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মানে নিজেদের ক্ষমতাহীন করে রাখা। আর মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়া মানেই নিজেদের ক্ষমতাশালী করা। ক্ষমতাবানদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। উল্টো দুর্বল ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কমিউনিটি ও দেশ সেবায় সত্যিকার ভূমিকা রাখতে হলে বাংলাদেশী আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ অনিবার্য।
মিসবাহ বলেন, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কর্তৃক বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারী যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী। এটা তাদের পরিহার করা উচিত। মুসলিম কমিউনিটির পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটিকেও বিষয়টির প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানান তিনি। একই সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটিকেও নিজেদের চরিত্র ও আচার ব্যবহার দিয়ে অন্যদের ভ্রান্তি দূর করতে হবে। আরো বেশি মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে।
মাফ মিসবাহ বলেন, আমাদের কমিউনিটির সমস্যা অনেক। এর মধ্যে এখানে ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসা বৃদ্ধ মা-বাবাদের অনেককেই মানবেতর জীবন-যাপনের মুখোমুখি হতে হয়। যা পীড়াদায়ক। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার কৃষ্টি, কালসার ও ধর্মীয় অনুভ‚তির প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি এজিং সেন্টার (বৃদ্ধাশ্রম) স্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সেসুবাধে ২০১৪ সালে স্থানীয় সিটি কাউন্সিলমেম্বার ররি ল্যান্সম্যান ১১০ হাজার ডলারের একটি অনুদান ধার্য করেন, যা দিয়ে পরবর্তি সময়ে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে হালাল সিনিয়ার সেন্টারের যাত্রা শুর হয়। এবিষয়ে কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান তিনি।
মাফ মিসবাহর দেশের বাড়ি লক্ষœীপুর জেলার রামগঞ্জে। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে সহ বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। স্ত্রী মাজেদা আক্তার উদ্দিন (বিউটি) নিউইয়র্ক সিটি ভোটার অ্যাসিস্টেন্স কমিশন মেম্বার। ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here