প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর অবশেষে নিয়ন্ত্রণে এসেছে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় লাগা আগুন।  ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ করে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) একেএম শাকিল নেওয়াজ।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।  আগুনে দগ্ধ ১০ জনসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটর্ফোড হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন।

আগুন লাগার খবর পেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সেখানে ছুটে যান । তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যা কিছু করা প্রয়োজন তার সব করা হবে। আগুন যেহেতু নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেহেতু এখন সার্চ কমিটির মাধ্যমে দেখা হবে ভবনগুলোর ভেতরে আর কোনও মৃতদেহ আছে কি না কিংবা কেউ কোথাও আটকা পড়েছেন কি না। তিনি  নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওয়াহিদ ম্যানসন ভবনটি এখন কেবল কংকালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনও সময় সেটি ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে প্রথমে ওয়াহিদ ম্যানসনে আগুন লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এর পাশের আরও একটি চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে মোট চারটি ভবনে আগুন লাগে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগুন লাগা চারটি ভবনের নিচে কমপক্ষে ত্রিশটির বেশি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এসব গোডাউনের মধ্যে কয়েকটিতে গ্যাস সিলিন্ডার, বার্মিজ স্যান্ডেল, পারফিউম মজুদ করা ছিল। ভবনে লাগা আগুন এসব গোডাউনে ছড়িয়ে পড়লে আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করে। যে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে তা পারফিউমের বোতল বিস্ফোরণের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি পিকআপ ভ্যানের সাথে প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ ঘটেছিলো। গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন ওয়াহিদ ম্যানশনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির নিচ তলায় হোটেল ও দ্বিতীয় তলায় পারফিউমের গোডাউন ছিলো। যার কারণে আগুন আরো দ্রুত পাশের তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভাতে নেমে পড়েন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনটি ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ওয়াহিদ ম্যানশনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলিতে প্লাষ্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মারা যায়। এরপর থেকেই ওই এলাকা থেকে কেমিক্যল গুদাম উচ্ছেদের জোর দাবি উঠলেও আজও তা কার্যকর হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here