ভারত শাসিত কাশ্মিরে ৫ বছরের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বিতর্কিক অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহীদেরকে সমর্থন দেয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এমন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছেন কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি সরকারের এমন অবস্থানকে উচ্চ মাত্রায় কঠোর হস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, কোনো আইডিয়াকে নিষিদ্ধ বা জেল দেয়া যায় না। তার পরিবর্তে উন্নত আদর্শ ব্যবহার করতে হয়। এমন ব্যবস্থা নেয়ার ফলে ভিন্নমতাবলম্বীদের স্থান সঙ্কুচিত হবে এবং এতে অধিক হারে সহিংসতা ঘটবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে আরো বলা হয়, এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে ভারতের পুলিশ ওই এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল হামিদ ফায়াজ সহ কমপক্ষে ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

এরপরই ধর্মীয়-রাজনৈতিক এই সংগঠনটিকে বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাশ্মিরের পালওয়ামায় গত মাসে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর দলটির বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে সংগঠিত হওয়া, আভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় অনিষ্ট ও জনশৃংখলা নষ্ট করার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, জম্মু-কাশ্মির ও অন্যান্য স্থানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জামায়াতের।

তারা উগ্রপন্থি ও জঙ্গিদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা ভারতের ভূখন্ড থেকে একটি অংশকে আলাদা হয়ে স্বাধীন হওয়ার আন্দোলনকে সমর্থন করে। যদি তাদের কর্মকান্ড কমিয়ে আনা না হতো তাহলে তারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড বৃদ্ধি করতো। ভারতের ভিতরে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতো।
উল্লেখ্য, ১৯৪২ সালে জামায়াতে ইসলামী সৃষ্টি হওয়ার পর এটা হলো এ সংগঠনকে তৃতীয়বার নিষিদ্ধ করা। ভারতের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান সৃষ্টির ৫ বছর আগে এ সংগঠনটি সৃষ্টি হয়েছিল ওই অঞ্চলে। দলটিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে একজন সিনিয়র নেতা আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত যে কঠোর নীতি অবলম্বন করেছে তাতে কাজ হবে না। আগেও এ দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, কিন্তু আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই নিষেধাজ্ঞা সহায়ক হবে না।

সরকার গত ৫ বছরে সামরিক শক্তি ও কঠোর নীতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু তাতে কাজ হয় নি। এবারের নিষেধাজ্ঞাও কাজে আসবে না। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত অনেক স্কুল আছে। সেসব স্কুলে পড়াশোনা করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে। তার কথায় এসব স্কুল অগ্রগতি ও আধুনিকতার মডেল।
এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তাদেরকে অজ্ঞাত কারণে টার্গেট করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, পেশিশক্তির ব্যবহার দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। এর পরিবর্তে কাশ্মির ইস্যুতে দীর্ঘদিনের বিরোধ সমাধানে আন্তরিক প্রচেষ্টা নেয়া উচিত।

এর আগেও কাশ্মিরে জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত শাসিত কাশ্মিরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, জাতীয়তাবাদ বিরোধী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনী এ ধারা অনুসরণ করে যাচ্ছে। এসব নেতা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় জড়িত। তারা সহিংসতা উসকে দেন।
ওদিকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার পরে কাশ্মির উপত্যকায় এ দলটির নেতাকর্মীদের বাড়িঘর সিল করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব প্রতিষ্ঠান ও সহায় সম্পত্তি সিল করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here