চলচ্চিত্রের শক্তিশালী কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গত পরশু শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। আবদুস সামাদ ‘টেলি সামাদ’ হিসেবেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। টেলিভিশন থেকে চলচ্চিত্রে পা রাখায় তার এই নাম হয়ে যায়, যা তিনি নিজেও আর বদলাননি।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুখে ভুগছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। সম্প্রতি শরীর বেশি খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু আমাদের শোকে স্তব্দ করে দিয়েছে। তার পরিবারের জন্য সবার দেয়া চাই। জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত ডিসেম্বর মাসে বুকে ইনফেকশন নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন টেলি সামাদ। তখন আইসিইউতেও ছিলেন কিছু দিন। টেলি সামাদকে এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাইপাস সার্জারি করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। কিন্তু দেশে আসার পর অক্টোবর ও নভেম্বরে দুই দফা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। গত বছরের ২০ অক্টোবর জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তার বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে।
অসুস্থ টেলি সামাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে তার চিকিৎসায় উদ্যোগী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে এই অভিনেতার হাতে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সহায়তা টেলি সামাদের পরিবার এখনও স্মরণ করেন।
মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ নয়াগাঁও এলাকার সন্তান টেলি সামাদ। প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ থেকে পরে টেলি সামাদ নামেই পর্দায় পরিচিতি গড়ে ওঠে তার। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা টেলি সামাদ বড়ভাই বিখ্যাত চারুশিল্পী আব্দুল হাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়।
কমেডিয়ান হিসেবে বেশিরভাগ দর্শক টেলি সামাদকে চিনলেও প্রায় ৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি, আছে অ্যালবামও। ‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ দিয়ে তার চলচ্চিত্রে পা রাখা। গত চার দশকে ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জিরো ডিগ্রী’।
আজ বাদ এশা পশ্চিম রাজারবাগে প্রথম জানাযা অনুষ্টিত হবে। এরপর পরেরদিন শায়িত করা হবে মুন্সিগঞ্জ তার গ্রামের বাড়িতে।